বিপর্যয়ে কোন বছর কত কোটির বঞ্চনা কেন্দ্রের হিসাব পেশ মুখ্যমন্ত্রীর

উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের পরবর্তীতে এই নিয়ে তৃতীয়বার উত্তরবঙ্গে গিয়ে সরেজমিনে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Must read

আমফান থেকে রেমাল বা ডানা, সবেতেই বঞ্চনার শিকার বাংলা। যে কেন্দ্রের সরকার সাধারণ মানুষের ন্যায্য বাড়ি তৈরির বা একশো দিনের কাজের টাকা দেয় না, তারা যে বাংলার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কোনওভাবেই আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়ানে না, তা স্পষ্ট বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। তাই চলতি উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ে কেন্দ্রের থেকে কোনও সাহায্য চাইতে ঘৃণার দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। বিভিন্ন দুর্যোগে বাংলায় কত আর্থিক ক্ষতি ও তার জন্য কত টাকা কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিকা দফতরের কাছে দাবি করা হয়েছিল, উত্তরকন্যার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন-নোটবন্দির মতো ভোটবন্দি! SIR স্থগিত করা উচিৎ: মুখ্যমন্ত্রী

উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের পরবর্তীতে এই নিয়ে তৃতীয়বার উত্তরবঙ্গে গিয়ে সরেজমিনে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু যত ক্ষতিই হয়ে যাক এই ক্ষতিতে কেন্দ্রের কাছে কোনও সহযোগিতা চাওয়া হয়নি বলেই দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর দাবি, এবার আমরা টাকা চাইনি ওদের থেকে। কারণ আমরা ভুক্তোভোগী। চাইতে চাইতে নিজেদের প্রতি ঘৃণা হয়। চাইলে মনে হয় ভিক্ষা দেবে যেন।

কেন্দ্রীয় বঞ্চনার সেই খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে যে তথ্য পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী তা এরকম
২০২১ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে উত্তরবঙ্গের দুর্যোগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ১,২৮৮.৪৪ কোটি চাওয়া হয়েছিল। এক পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে উত্তরবঙ্গের দুর্যোগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ১,৪০২.০৮ কোটি চাওয়া হয়েছিল। পাওয়া যায়নি কিছু।
২০২৩ সালের অক্টোবরে সিকিমে দুর্যোগে বাংলার ক্ষতি ১৮১.৩৮ কোটি। কোনও সাহায্য দেয়নি কেন্দ্র।
২০২৪ সালের মে মাসে রেমালে বাংলার ক্ষতি ১০৪৯.৮৯ কোটি। কোনও সাহায্য করেনি কেন্দ্র।
২০২৪ সালে উত্তরবঙ্গের বন্যা-ধসে ক্ষতি ৪,২৩৩.৪৩ কোটি। কোনও সাহায্য করেনি কেন্দ্র।
২০২৪ সালের ঘূর্ণিঝড় ডানায় বাংলার ক্ষতি ১,৬৮৫.০১ কোটি টাকা। কোনও সাহায্য করেনি কেন্দ্র।
২০২৫ সালে উত্তরবঙ্গে এত বড় বিপর্যয় হওয়ার পরেও এক পয়সা কেন্দ্র দেয়নি।
এছাড়াও রাজ্যের পাওনা বকেয়া ১,২০ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন-উত্তরকন্যা থেকে ‘রিচা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে’র ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

অথচ বাংলা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা জিএসটি বাবদ নিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। এই প্রসঙ্গেই জিএসটি প্রণয়নের সময়ে কেন্দ্রকে সমর্থন করা ছিল বিরাট ভুল। তিনি দাবি করেন, আমার মনে হয় জিএসটি তুলে দেওয়া উচিত। আমরাই প্রথম দল যারা জিএসটিকে সমর্থন করেছিলাম। আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু বড় ব্লান্ডার এটা আমাদের। কিন্তু এখন আমাদের সব টাকা ট্যাক্স কেন্দ্রের সরকার রাজ্য সরকার থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

কেন্দ্রের সরকার কীভাবে সেই জিএসটির টাকা নয়ছয় করছে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, নিজেদের বুদ্ধি খাটিয়ে আমাদের ভাগের টাকা না দিয়ে অন্য জায়গায়, বিজেপি শাসিত রাজ্যে ডাইভার্ট করছে। সেই টাকা ওয়েস্টফুল এক্সপেন্ডিচার করছে। বিদেশে গিয়ে সোনার মালা পরছে। আর তাদেরকে সাহায্য করছে, দেশের মানুষকে নয়।

সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, আমি মনে করি রাজ্যের করের টাকা রাজ্যকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। কেন্দ্রের সরকার যে কর আদায় করে তা নিয়ে কেন্দ্রের কোনও কাজ নেই। একমাত্র প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত রক্ষা ছাড়া। সব খরচ রাজ্যের। তাই জিএসটি তুলে দেওয়ার পক্ষেই এদিন সওয়াল করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

Latest article