নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি! ২৬/১১-র স্মৃতি মনে পড়ে?
মুম্বইতে জঙ্গি হামলা হল। ঘটনাস্থল মুম্বইয়ের তাজ হোটেল। আর সেই তাজ হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি তোপ দাগলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উদ্দেশে। সন্ত্রাসবাদী হামলার পর তাঁর ভূমিকার, তাঁর বক্তব্যের নিন্দা করলেন কঠোর ভাষায়।
মনে পড়ে মোদিজি, কী বলেছিলেন সেদিন?
বলেছিলেন, মনমোহন সিং জাতির উদ্দেশে যা বলেছেন, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এরকম জবাব আশা করা যায় না। বলেছিলেন, পাকিস্তান আমাদের মৎস্যজীবীদের ট্রলার ধরে নিয়ে চলে যায়, আর ফেরত দেয় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই ভারতীয় ট্রলারকেই তারা জঙ্গি ঢোকানোর কাজে ব্যবহার করেছে।
বোঝাতে চেয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এমনটাই ঘটে। সরাসরি পাকিস্তানের ঘাড়ে হামলার দায় চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা কুড়িয়ে নিয়েছিলেন আপনি।
আর আজ? দিল্লিতে লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণের পর?
আজ আপনার ভূমিকা তো আরও ন্যক্কারজনক। সেদিন মনমোহন সিংয়ের নিন্দাকারী আপনি আজ নিজে কী করলেন?
দিল্লির লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণের পরদিন সকালেই ভুটান সফরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে ভারতের সহযোগিতায় বিশাল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সূচনা করার কর্মসূচি রয়েছে, এই অজুহাতে। যাওয়ার আগে বিহারের ভোটে বিজেপিকে সমর্থনের ডাক দিয়ে যেতে কিন্তু ভুললেন না। এবং ভারত-ভুটান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হওয়ার ব্যাপারে আশার আলো দেখা নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ালেন।
লজ্জা করে না আপনার!
দিল্লি ভারতের রাজধানী। সেখানে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল।
আরও পড়ুন-আইপিএল নিলাম এবার আবু ধাবিতে
আর ভারতবাসী বিস্ময়-বিমূঢ় হয়ে দেখল, তাঁরা যাঁদের গদিতে বসিয়েছে, সেই নরেন্দ্র মোদি কিংবা অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাংবাদিক সম্মেলন করার প্রয়োজন বোধই করলেন না।
২৬/১১-য় মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। আর সেই সূত্রে আপনাদের সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন।
আর আপনি, মোদিজি?
দেশের মাটিতে মুখ খোলার দম হয়নি।
ভুটানের রাজধানী থিম্পুর অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে ন্যাকামি করার ব্যাপারে কোনও ভুল হয়নি।
নাটকীয় সংলাপ শোনা গেল আপনার মুখে। যেমনটা শোনা যায় বারবার। কোনও মারাত্মক ঘটনা ঘটলেই।
আপনি এবারও বললেন, ‘আমাদের তদন্ত সংস্থাগুলি এই ষড়যন্ত্রের শিকড় পর্যন্ত যাবে। যারা যারা এই ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী, তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে। একজনকেও ছেড়ে দেওয়া হবে না।’
তাই বুঝি?
এসব কথা আপনার মুখে শুনলে শোকসন্তপ্ত হৃদয়েও হাসি পায়।
প্রধানমন্ত্রী, ও প্রধানমন্ত্রী! আপনার জমানায় কোন জঙ্গিকে আপনার সরকার দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝোলাতে পেরেছে? কোন ঘটনায় দোষী জঙ্গিকে ধরার মুরোদ হয়েছে আপনাদের?
বরং অভিযোগ উঠেছে, দোষী জঙ্গিদের বর্ডার পার করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বিজেপি কর্মকর্তারা।
লজ্জা করে না আপনার!
আর অমিত শাহজি! আপনার তো অমিত শক্তি, অমেয় কীর্তি। শুরুতেই গোয়েন্দারা বলেছিলেন, লালকেল্লার বিস্ফোরণে আই ই ডি ব্যবহার করা হয়েছে।
আপনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। আপনাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এটা সন্ত্রাসবাদীদের কাজ কি না? আপনি বেমালুম চেপে গিয়ে, ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের উত্তর দিলেন। বললেন, বলা মুশকিল। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যা উঠে আসবে, ‘সব প্রকাশ করা হবে জনসমক্ষে।’
কেন? ডবল ইঞ্জিন, ট্রিপল ইঞ্জিন চালিত দিল্লির বুকে, আপনাদের নাকের ডগায় জঙ্গি কার্যকলাপ ঘটেছে, সেটা স্বীকার করলে আপনার নাককাটা যাবে, সেজন্য ওই উত্তর! প্রকাশ পেয়ে যাবে আপনার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ব্যর্থতা, সেজন্য ওই এড়িয়ে যাওয়া উত্তর!
দিল্লি পুলিশ সরাসরি অমিত শাহের দফতরের অধীন। দিল্লিতে এখন বিজেপি সরকার। এরপরেও কোন যুক্তিতে দায় ঝেড়ে ফেলবেন অমিত শাহ?
সোমবার সকালেই ফরিদাবাদে প্রায় ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক আবিষ্কার হয়ে ছিল। উদ্ধার হয়েছিল অ্যাসল্ট রাইফেল। হরিয়ানার ফরিদাবাদ দিল্লির কাছেই।
তারপরেও চারিদিকে সতর্কতা জারি করে খানাতল্লাশি চালানোর দরকার মনে করলেন না আপনি! কেন ?
তাহলে কি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কোনও ব্যবস্থাই আপনার দফতরে নেই?
আরও পড়ুন-এবার কুমারগঞ্জ, SIR আতঙ্কে মৃত্যু বেড়ে ২০
পহেলগাঁওয়ে তো এমনটাই হয়েছিল। জঙ্গিরা দিব্যি উপত্যকায় ঢুকে পর্যটক-নিধন করেছিল। এবারেও বিস্ফোরণের গাড়িটা বেশ কয়েক ঘণ্টা সিগন্যালে আটকে ছিল। কেউ দেখেনি। দিব্যি এতগুলো প্রাণ চলে গেল। আর হতাহতের সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপারে আপনার দফতরের দক্ষতা তো প্রশ্নাতীত। কুম্ভমেলার সময়েই সেটা দেখা গিয়েছে। সেখানে অবশ্য আপনার দফতরের একক অপদার্থতা ছিল না। আপনারা যে ধরনের রাজনীতি করেন সেই ঘরানার ব্লু আইড বয় যোগী তাঁর দায়ও কম ছিল না।
সুতরাং, স্পষ্ট ভাবে একটা কথা বলে নেওয়া যাক।
এসআইটি গঠিত হোক।
তার আগে অমিত শাহ ইস্তফা দিন।
২০১৫ সালে উধমপুরে সেনা কনভয়ে হামলা, ২০১৬ সালে উরি এবং পাঠানকোটে সন্ত্রবাদী হানা, ২০১৯ সালে পুলওয়ামা, ২০২৫ সালে পহেলগাঁও, তার পর দিল্লি— মোদি জমানায় সমস্ত সন্ত্রাসবাদী হামলা। একটার পর একটা ঘটনা ঘটে, তার পর নানা কথা বলা হয়। কিন্তু থামে না।
আর কতদিন এভাবে চলবে?
আপনি এবার বিদায় নিন।
ঘৃণা ছড়ানো ছাড়া আপনার কোনও কাজে আপনার দক্ষতা দেখতে পেলাম না আজ পর্যন্ত!

