ঘুরে আসুন পানবু

কালিম্পংয়ের ছোট্ট গ্রাম পানবু। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা। এই পাহাড়ি অঞ্চলে কান পাতলে শোনা যায় নৈঃশব্দ্যের ভাষা। আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

শীত পড়তে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। মন পাহাড়ে যেতে চাইলে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন। এই সময় উত্তরের পাহাড়ি অঞ্চল সেজে উঠেছে দারুণভাবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে, মন জুড়িয়ে যাবে। কোথায় যাওয়া যায় ভাবছেন? ঘুরে আসুন পানবু (kalimpong_panbu)। এ যেন লুকিয়ে থাকা এক প্রকৃতির স্বর্গ। কালিম্পংয়ের এই জায়গাটার অবস্থান হিমালয়ের কোলে। দার্জিলিংয়ের কাছেই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৫৫০০ ফুট। ছোট্ট বনভূমি, যেখানে মানববসতি শতাধিকেরও কম। ২০১১ সালের আদমশুমার অনুসারে, গ্রামের জনসংখ্যা ছিল ২০ জন। যার মধ্যে ১৩ জন পুরুষ এবং ৭ জন মহিলা। কালিম্পং শহর থেকে দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার।

ছোট-বড় পাহাড় চূড়া। সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা। ভোরবেলায় পাখির কিচিরমিচির ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বেরিয়ে পড়া যায়। পায়ে হেঁটে ঘুরে আসা যায় কাছেপিঠে। তবে একা নয়, যেতে হবে দলবেঁধে। কোনওভাবেই নীরবতা ভঙ্গ করা যাবে না। জোরে জোরে মেতে ওঠা যাবে না খোশগপ্পে। নির্জন নিরিবিলি পাহাড়ি পরিবেশ উপভোগ করতে হবে চুপচাপ। শান্তভাবে। জঙ্গলে চোখে পড়বে রকমারি ফুল। নানা রঙের। কিছু চেনা, কিছু অচেনা। বুনোফুলও মেলে ধরে সৌন্দর্য। পাহাড়ি অঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন বন্যপশু। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তাদের থেকে। নাহলে বিপদ।

পাহাড়ের অন্যান্য জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার যে রূপ দেখা যায়, তার তুলনায় পানবু থেকে আরও ভালভাবে দেখা যায়। পাওয়া যায় ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। উপরে যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘা, নিচে তেমন তিস্তা। দার্জিলিং অথবা গ্যাংটক থেকে ফেরার পথে ঘুরে আসা যায়। তিস্তা নদীর যে ভিউ এখান থেকে দেখা যায়, সেটাও আর অন্য কোনও জায়গা থেকে দেখা যায় না। এই নদীর অনন্য সুন্দর রূপের সাক্ষী থাকতেই পর্যটকেরা ভিড় জমান। এখানে একই ফ্রেমে ধরা পড়ে সেভকের রেল ব্রিজ আর ঐতিহ্যশালী করোনেশন ব্রিজ।

পানবুর (kalimpong_panbu) ভিউ পয়েন্টকে মিস করতে চান না কোনও পর্যটক। এখানে পাওয়া যায় স্বর্গের মাঝখানে দাঁড়ানোর অনুভূতি। মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখে উন্মনা হয় মন। জন্ম নিতে পারে ছন্দ। কথা হতে পারে কবিতায়।
এখানকার রাস্তাঘাট বেশ ভাল। যদিও আগে যথেষ্ট সমস্যা ছিল। গত তেরো-চোদ্দ বছরে লেগেছে সরকারি উন্নয়নের ছোঁয়া। মসৃণ রাস্তা দিয়ে সাঁই-সাঁই ছুটে যায় গাড়ি। সোজা হোমস্টের দোরগোড়া পর্যন্ত। এখানে ক্যাম্পিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায়। সেইসঙ্গে আছে ট্রেকিংয়ের সুবিধা। এই ক্ষেত্রেও একা নয়, যেতে হবে দলবেঁধে।

আরও পড়ুন-প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ২ বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে দলেরই একাংশের পোস্টার

দিনের বেলায় রোদের নরম আদর শরীরে এসে লাগে। রাতের বেলা হাসি ছড়ায় লাজুক চাঁদ। অসংখ্য তারা ফুটে ওঠে। যেন কিছু বলতে চায়। বনে বনে জেগে ওঠে জোনাকির দল। নিচে চোখে পড়ে আলো ঝলমলে শিলিগুড়ি শহর।
পানবুর আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম চারখোল। অফবিট ডেস্টিনেশন। প্রায় ৩৫০০ ফুট উচ্চতায় পাইন, সাইপ্রাস, ওক, শাক, গুরাস আর বরফঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্য নিয়ে নিশ্চুপে অবস্থান করছে।
ঘুরে আসা যায় কাফের গাঁও। পানবু থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি সুন্দর গ্রাম। ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত একটি জায়গা।

পানবু (kalimpong_panbu) থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোলেগাঁও। এটা একটা মনোরম পাহাড়ি গ্রাম, যা ক্যানোপি ওয়াকের জন্য বিখ্যাত।
কালিম্পং জেলার একটি পাহাড়ি শহর লাভা। পানবু থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখান থেকে ঘুরে আসা যায় ন্যাওড়াভ্যালি। দেখা যায় ছাঙ্গি জলপ্রপাত।
সিলেরি গাঁও এখান থেকে খুব দূরে নয়। ছবির মতো সুন্দর একটা জায়গা। জঙ্গলে ঘেরা এই জায়গা থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

সামথারা জায়গাটাও পানবুর খুব কাছেই। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। দূর করে দেবে মন ও শরীরের ক্লান্তি। এখান থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ। আছে হোমস্টে। চাইলে থাকাও যায়।
পানবুর কাছেই রয়েছে ইয়ামাখুম। এখান থেকেও মুখোমুখি হওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার। শহরের কোলাহলে থেকে দূরে নৈঃশব্দ্যের জগতে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। এ-ছাড়াও ঘুরে দেখা যায় সিঞ্জিদারা, ঝান্ডিদারা, ডেলো, দুরপিন।

চাইলে আশেপাশের যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে দিনকয়েক থাকার পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পানবু গ্রামে এসে কাটানো যায় দুটো দিন। দার্জিলিংয়ের ভিড়ভাট্টা এড়াতে বহু পর্যটক এখন বেছে নিচ্ছেন এই জায়গাটা। ছোট্ট পরামর্শ দিয়ে রাখি, পানবুর স্থানীয় খাবারের স্বাদ এককথায় অসাধারণ। অবশ্যই ট্রাই করতে হবে। গ্রামের মানুষজন অতি মাত্রায় সহজ সরল। অতিথিপরায়ণ। সবসময় ঠোঁটের কোনায় লেগে থাকে হাসি। তাদের মন প্রকৃতির মতোই সুন্দর। কী ভাবছেন, যাবেন? সপরিবারে? নিশ্চিন্তে ঘুরে আসুন। পানবু ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে।

কীভাবে যাবেন?
পানবু যাওয়া যায় শিলিগুড়ি থেকে। পথে রেলিখোলাটা দেখে নেওয়া যায়। কালীঝোরা হয়ে পানবু যেতে গেলে দূরত্ব কিছুটা কমবে। তবে কালীঝোরা হয়ে গেলে রাস্তা বেশ খাড়াই। এখানকার প্রাকৃতিক রূপও অসাধারণ।
কোথায় থাকবেন?
পানবুতে থাকা-খাওয়ার যথেষ্ট ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকগুলো হোমস্টে ও রিসর্ট আছে। মাথাপিছু ১০০০-২০০০ টাকার মধ্যে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কাছেপিঠে বেড়ানোর জন্য গাড়ি নিতে পারেন। হোমস্টে এবং রিসর্টের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

Latest article