১১ নভেম্বর, মঙ্গলবারের খবর।
মুর্শিদাবাদ জেলায় ৫ হাজার ৮৯৫ বুথে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন বিএলওরা। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অর্থাৎ বিএলএরাও মানুষের সাহায্যে বাড়িতে যাচ্ছেন। এসআইআর ঘোষণা হতেই রাজনৈতিক অঙ্গনেও তৎপরতা বেড়েছে। মুর্শিদাবাদের সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত বিএলএ’র সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। তৃণমূল বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করে নাগরিকদের আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তা দিচ্ছে। পাশাপাশি খুলেছে ভোট রক্ষা সহায়তা শিবির। বিএলওদের দিয়ে যাওয়া ফর্ম পূরণে সাহায্য করছেন তাঁরা। তবে বিজেপি মুর্শিদাবাদ জেলায় অর্ধেক সংখ্যক বুথে বিএলএ নামাতেই পারেনি।
৫ হাজার ৮৯৫টি বুথে তৃণমূল কংগ্রেসের বিএলএ’র সংখ্যা ৫ হাজার ৭৯০। সেখানে বিজেপির বিএলএ মাত্র ২ হাজার ৩৮০ জন। জেলায় সাংগঠনিক শক্তি কম। তাই, বিএলএ নামানো সম্ভব হয়নি বলেই দাবি গেরুয়া শিবিরের নেতাদের।
আর একটি খবর। ‘জাগো বাংলা’র এক্সক্লুসিভ নয়। একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত।
আত্মীয়কে বাবা সাজিয়ে দু’জায়গায় ভোটার কার্ড তৈরি করেন কালনার এক বিজেপি নেতা। তিনি আবার পঞ্চায়েত সদস্য! পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তিনি দু’জায়গা থেকে ভোট দিয়েছিলেন। বিজেপি ভোটার লিস্টে স্বচ্ছতার কথা বলছে। অথচ তাদের নেতারা প্রমাণ করছে, তারা কতটা স্বচ্ছতা চায়। এরকম আরও অনেক বিজেপি নেতা-কর্মী একাধিক ভোটার কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় ভোট দিয়েছে। এমনকী, বাংলাদেশ থেকে সম্প্রতি এ-রাজ্যে অনেককেই তারা ভোটার কার্ড তৈরি করে দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
কালনার সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপল্লির বিজেপির ওই পঞ্চায়েত সদস্য হলেন গোপাল বারুই।
ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এক জায়গায় সম্পর্কিত জেঠু দুলাল বারুইকে বাবা সাজিয়ে গোপালবাবুর নাম রয়েছে। আবার আর এক জায়গায় নিজের বাবা অনিল বারুইয়ের নাম ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে ওই পদ্মনেতার। দুই জায়গায় ভোটার এপিক নম্বর আলাদা।
এমন অনিয়ম এখন এসআইআর-শাসিত পশ্চিমবঙ্গের ঘটমান বর্তমান।
তবে এই অবস্থা বাঁচতে, নিজেদের বাঁচাতে, একটা জব্বর ফন্দি এঁটেছে বিজেপি।
আর সেই সূত্রে বেআব্রু হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাত।
ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া আট দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) নিয়োগের নিয়ম শিথিল করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে নতুন নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
আরও পড়ুন-জাগোবাংলার স্টলে তৃণমূলের এসআইআর সহায়তা কেন্দ্র চালু
এ হেন নিয়ম বদলে বিজেপি ও কমিশনের ‘গাঁটবন্ধন’ স্পষ্টতর।
এত দিন পর্যন্ত বিএলএ নিয়োগে কমিশনের নিয়মে কড়াকড়ি ছিল। ২০২৩ সালের নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, যে কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে যদি কেউ বিএলএ হন, তাঁকে সেই বুথেরই ভোটার হতে হবে। কিন্তু এই নিময় বদল করে মঙ্গলবার কমিশন জানাল, বিএলএ হতে গেলে নির্দিষ্ট বুথের ভোটার না-হলেও চলবে। সংশ্লিষ্ট বিধানসভার ভোটার হলেই হবে।
কেন?
উল্লিখিত খবরগুলো পুনরায় পড়ুন। পরিষ্কার বুঝতে পারা যাবে কেন নিয়মে আচমকা এই বদল। গোল দিতে পারছে না বলেই গোলপোস্ট বদলে দেওয়ার এই আজব কানুন।
কাঁথির গদ্দার কুলের পোদ্দার, অশান্তি কুঞ্জের লোডশেডিং বিধায়ক বলছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের বিএলএ নিয়োগের এই পরিধি বৃদ্ধিতে সকল রাজনৈতিক দল উপকৃত হবে।’ ‘সকল’ শব্দটির পরিবর্তে পড়ুন ‘বঙ্গ বিজেপি’।
ওইটাই আসল কথা।
কারণ, শুধু উল্লিখিত মুর্শিদাবাদ নয়, রাজ্যের বহু জায়গায় বিজেপি তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য বিএলএ দিতে পারেনি। এমতবস্থায় কমিশন এই নির্দেশিকার মাধ্যমে বিজেপি-কে বিএলএ খুঁজে দিতে নেমেছে। এর থেকে ফের একবার প্রমাণ হল কমিশন আসলে বিজেপির অধীনস্থ সংস্থা।
মনে করিয়ে দেওয়া আবশ্যক, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির চাণক্য কমিশনে তদ্বির করেছিলেন এই মর্মে যে, বিধানসভার ভোটার হলেই তাঁকে সেই কেন্দ্রে ভোটের দিন যে কোনও বুথে এজেন্ট করার অনুমতি দেওয়া হোক। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছিল। তাতেও কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ, ভোটের দিন লড়াইটা থাকে মনস্তাত্ত্বিক এবং সাংগঠনিক। আর বিজেপি সে লড়াইতে বিশেষ জুত করতে পারেনি। সেবারও তাঁদের নেতারা, ভেতর ও বাইরের নেতৃত্ব, মৃতসঞ্জীবনী খুঁজে পাননি। বিজেপি চাঙ্গা হয়নি। জেতা তো দূরস্থ্, জেতার জন্য যে মনের জোর দরকার সেটা ওদের ছিল না। সংগঠন তো কোনওকালেই সেই পোক্তভাব অর্জন করতে পারেনি। অতএব, মানুষের কাছ থেকে বর্জন ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারেনি বিজেপি।
আর এবার তো অবস্থা আরও খারাপ।
এসআইআর প্রক্রিয়ায় তথ্য দেওয়ার লড়াই। আর সেই লড়াইতেই দমে পারছে না বিজেপি। দম পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পাশে টানতে হচ্ছে। ভোটের আগেই দম শেষ, হারার মোডে বঙ্গ বিজেপি।
ইলেকশন কমিশন তো এই মুমূর্ষু পার্টিকে অক্সিজেন দিতে গিয়ে নিজেই ফ্যাসাদে পড়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যদি কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ দেওয়া হয়, তাহলে প্রয়োজনে এসআইআর প্রক্রিয়াটাই বাতিল করে দেওয়া হবে।
এক কথায় বিজেপির নয়া শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করতে গিয়ে শাঁখের করাতের ওপর নির্বাচন কমিশন।
প্রশ্ন, নিয়ম অনুযায়ী বিএলও-দের সংশ্লিষ্ট বুথের বাসিন্দা হতে হবে। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিএলএ-দের ক্ষেত্রেই কেন ব্যতিক্রম? কারণ বিজেপি বুথে বুথে এজেন্ট খুঁজে পাচ্ছে না। আর সেই কারণে বাইরে থেকে লোক আনতে চাইছে। নির্বাচন কমিশন, একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বিজেপির দলদাসে পরিণত হয়েছে। বিএলএ নিয়োগের নিয়মে আচমকা পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের অধোমুখী বিবর্তনের একটি নিদর্শন, সন্দেহ নেই।
এত কিছু করেও কি বাংলার মানুষকে বোকা বানাতে পারবে ওরা?
প্রশ্ন রইল। যদিও উত্তরটা সকলেরই জানা!

