বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি ও একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে বিপন্ন সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবার বড়সড় সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাঙ্ক এবং নেদারল্যান্ডসের জলসম্পদ বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তিগত সহায়তায় সুন্দরবনের নদী ও উপকূল রক্ষায় প্রায় চার হাজার একশো কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সল্টলেকের কেএমডিএ অডিটোরিয়ামে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি জানান, ‘সাসটেইনেবলি হার্নেসিং ওশান রিসোর্সেস অ্যান্ড ইকোনমি’ বা ‘শোর’ (Shore project) নামের এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দুই চব্বিশ পরগনার এগারোটি ব্লকের ৩৯টি জনবসতি সম্পন্ন দ্বীপে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।
এদিন সেচমন্ত্রী জানান, বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর আর্থিক সহায়তায় এবং নেদারল্যান্ডসের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। শুধু সেচ দপ্তর নয়, কৃষি, পঞ্চায়েত, প্রাণী সম্পদ বিকাশ-সহ মোট ১২টি সংশ্লিষ্ট দফতর ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একযোগে এই কাজ চালানো হবে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে উপকূলের সুরক্ষা, আধুনিক প্রযুক্তিতে নদী বাঁধ নির্মাণ, পরিবহন পরিকাঠামোর উন্নতি এবং নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য উপযুক্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন- রাস্তায় ব্যাপক যানজট! কলকাতায় একাধিক রাস্তা চওড়া করার সিদ্ধান্ত পুরসভার
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপে অবস্থিত সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের আয়তন প্রায় ৯৬৩০ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৫৪টি দ্বীপে জনবসতি রয়েছে এবং বাকি ৪৮টি দ্বীপ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। কিন্তু গত দুশো বছরে গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবনের নদীগুলিতে মিষ্টি জলের প্রবাহ কমে গিয়েছে এবং লবণের পরিমাণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কৃষি ও জীববৈচিত্র্য সংকটের মুখে পড়েছে। তার ওপর গত এক দশক ধরে সমুদ্রের তাপমাত্রা ও জলস্তর বৃদ্ধি, পলি জমার হার কমে যাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়ায় উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয় ও প্লাবনের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়েছে। বর্তমানে জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলি প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার বাঁধ দ্বারা সুরক্ষিত থাকলেও তার মাত্র ২৫০ কিলোমিটার পাকা, বাকিটা কাঁচা মাটির বাঁধ।
এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের জুন মাস থেকে বিশ্বব্যাংক ও রাজ্য সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এই সামগ্রিক পরিকল্পনাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। সেচমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট করে দেন যে, নতুন এই প্রকল্পে কেবল বাঁধ মেরামত নয়, বরং সুন্দরবনের মানুষের জীবনজীবিকার মানোন্নয়ন এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাঁধ ও পরিকাঠামো নির্মাণ সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে আশা করছে রাজ্য সরকার।

