পশ্চিমবঙ্গে SIR প্রক্রিয়ার মাঝেই এবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি মনে করছেন সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব, নথি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার ফলে এই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ ও বিএলও-দের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ। চিঠিতে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া স্থগিত করার আর্জি জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন ভাবে SIR চালানো হচ্ছে। এটা বিপজ্জনকও বটে।
আরও পড়ুন-দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে গ্রেফতার আরও ৪
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এস আই আর কার্যক্রম এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিএলও এবং নাগরিকদের উপর যেভাবে এই বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা কেবল অপরিকল্পিত এবং বিশৃঙ্খল নয়, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথম দিন থেকেই মৌলিক প্রস্তুতির অভাব, পর্যাপ্ত পরিকল্পনার ঘাটতি এবং সঠিক দিকনির্দেশ না থাকার ফলে গোটা প্রক্রিয়া কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়েছে।’’
বিএলওদের দুরবস্থা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘‘প্রশিক্ষণে গুরুতর ফাঁক, প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে বিভ্রান্তি এবং তাদের স্বাভাবিক জীবিকার সময়সীমার মধ্যে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রায় অসম্ভব। এসবই প্রক্রিয়াটিকে কাঠামোগতভাবে দুর্বল করে তুলছে। জোর করে যে ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। সঠিক প্রশিক্ষণ, সহায়তা এবং বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণ না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। গণতান্ত্রিক কাঠামোর অখণ্ডতা বজায় রাখতে এখনই হস্তক্ষেপ জরুরি।’’
আরও পড়ুন-জয়েন্ট এন্ট্রান্স-এর সফল নার্সিং ও প্যারামেডিকেল পেশাজীবীদের শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
এই পরিস্থিতিতেই একের পর এক ঘটছে অস্বস্তিকর ঘটনা। কোন্নগর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এস আই আর-এর কাজ করতে গিয়ে সেরিব্রাল অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তপতী বিশ্বাস। রাস্তার উপরেই মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। এরপর থেকে তাঁর বাঁ দিক সম্পূর্ণ অবশ। পরিবারের অভিযোগ, সকাল থেকে রাত অবধি প্রবল মানসিক ও শারীরিক চাপের মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছিল তাঁকে। সেই চাপ থেকেই ভেঙে পড়েন তপতীদেবী।
রায়গঞ্জের কৃষ্ণপদ সরকারের ক্ষেত্রেও অভিযোগ একই। অতিরিক্ত মানসিক চাপের জেরেই তিনি সেরিব্রালে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি রায়গঞ্জ কসবা মহেশো এনএমহাই মাদ্রাসার ২০৬ নম্বর বুথে নিযুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন-ঘুরে আসুন কন্যাম
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ির মালবাজারে। বুধবার সকালে বাড়ির উঠোন থেকে উদ্ধার হয় শান্তিমুনি এক্কার ঝুলন্ত দেহ। রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নিউ গ্লাঙ্কো চা বাগানে থাকতেন তিনি। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী শান্তিমুনি ভালভাবে বাংলা পড়তে বা লিখতে পারতেন না। পরিবারের অভিযোগ, তাও তাঁকে এস আই আর-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং প্রতিদিন নানা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল তাঁকে। ছেলে ডি সুজা এক্কা এবং স্বামী সুখু এক্কা জানান, প্রবল মানসিক চাপ আর সহ্য করতে পারেননি তিনি। সেই চাপই তাঁকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়।
এস আই আর নিয়ে রাজ্যজুড়ে যেভাবে ক্ষোভ, বিভ্রান্তি এবং দুর্ভোগ বাড়ছে, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া চিঠির পর নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয়, সে দিকেই এখন নজর রাজ্যবাসীর।

