সংবাদদাতা, হুগলি: কথায় বলে নারীকে চেনা যায় স্বামীর অভাবে। এবার কেমন পরিস্থিতি চাক্ষুষ করা গেল জয়নগরের দু নম্বর ব্লকের মণিপুর বাঁশতলা এলাকায়। সংসারের হাল ধরার জন্য স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেজুর গাছে হাড়ি বাঁধছেন জেলার প্রথম মহিলা শিউলি মাজিদা লস্কর।
ছোটবেলা থেকে মাজিদার স্বামী আব্দুর রউফ লস্কর এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিবাহের পর থেকে সংসারের হাল ধরার জন্য মাজিদা লস্কর স্বামীর সাথে শিউলির কাজ শুরু করেন। বিয়ের পর থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে স্বামীর সাথে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি এখন পুরোদস্তুর শিউলি হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন নিজে নিজেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে নলেন গুড় তৈরি করার প্রক্রিয়া পর্যন্ত তিনি সিদ্ধহস্ত।
আরও পড়ুন-রাজ্যে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিরবে শীত
এই দম্পতি মিলে এলাকার প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টি খেজুর গাছ থেকে একদিনে রস সংগ্রহ করে জয়নগর এলাকার প্রসিদ্ধ কয়েকটি মোয়ার দোকানে নলেন গুড়ের সরবরাহে প্রথম সারির শিউলি। মাজিদা বলেন, সংসারের অভাব গোছানোর জন্য স্বামীর সঙ্গে এই কাজে আমি যুক্ত হই। প্রথমের দিকে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমার। এই কাজ শিখতে গিয়ে বহু আঘাত এবং ব্যথা সহ্য করতে হয়েছে। খেজুর গাছের কাঁটা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বামীর সঙ্গে এই কাজের সঙ্গে থেকে আমি সমস্ত কিছু শিখেছি। এই শীতের মরশুমে স্বামীর সঙ্গে এই শিউলির কাজ করি। এর ফলে সংসারের অর্থের সংকট কিছুটা হলেও দূর হয়। দুজনে মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কাজ করি।
আব্দুর রউফ লস্কর বলেন, ছোটবেলা থেকে এই কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত রয়েছি। আমি এক দিনে ১৮০ থেকে ২০০টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করি। আমার স্ত্রী প্রথম আগ্রহ জানিয়েছিল সে আমার সঙ্গে এই কাজ করবে। এরপর ধীরে ধীরে স্ত্রীকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করি। সংসারের অনেকটা অর্থনৈতিক সংকট ঘুচে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা দাবি করে বিজেপিকে তুলোধোনা ঋতব্রতর
সাধারণত শীতের সময় বাঙালি রচনা তৃপ্তিতে নানান পিঠেপুলি খাদ্য তালিকায় রয়েছে। কিন্তু পিঠেপুলি নলেনগুড় ছাড়া যেন অসমাপ্ত। জয়নগরের প্রসিদ্ধ মোয়া তৈরিতেও নলেন গুড়ের অবদান অপরিসীম। সেই কারণে শীতের সময় খেজুর গাছের রস থেকে তৈরি নলেন গুড়ের চাহিদা থাকে অপরিসীম। শীতের সময় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করার জন্য শিউলিরা খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধে।

