ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন রামমোহন

গোঁড়া হিন্দুদের পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। নবজাগরণের পথিকৃৎ তিনি। অতীতে এবং বর্তমানে তিরবিদ্ধ হয়েছেন বহুবার। আড়াইশো বছর আগে জন্মানো এই তেজস্বী পুরুষ ছিলেন সময়ের থেকে বহু যোজন এগিয়ে। তাই হয়তো তাঁকে যথাযথভাবে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন বাবা
ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না তাঁর। সমস্তকিছু বোঝার চেষ্টা করতেন যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে। আবেগের বশবর্তী হয়ে কখনও কিছু করেননি। অনড় থেকেছেন নিজের সিদ্ধান্তে। অগাধ পাণ্ডিত্য। সত্যকে সত্য বলেছেন, ভুলকে ভুল। সেই কারণেই সারাজীবন তিরবিদ্ধ হয়েছেন। ঘরে এবং বাইরে। হিন্দুদের কিছু প্রথার বিরোধিতা যেমন করেছেন, তেমনই প্রতিবাদ করেছেন ব্রিটিশ সরকারের অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, রেয়াত করেননি কাউকেই। নত হননি। ছিলেন সৎ, সাহসী। সবমিলিয়ে এক আশ্চর্য পুরুষ। তিনি রাজা রামমোহন রায়। নবজাগরণের পথিকৃৎ।
কৌলিক উপাধি ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’। পূর্বপুরুষ রাজ সরকারের অধীনে কাজ করে পেয়েছিলেন ‘রায়’ উপাধি। রামমোহনের বাবা রামকান্ত ও মা তারিণী দেবী, দু’জনেই ছিলেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। বাবা শেষ জীবনে বৈষ্ণব হয়েছিলেন। হরিনাম করতেন। রামমোহন হেঁটেছিলেন বাবার বিপরীত পথে। পশ্চিমের আলো-বাতাস ছুঁয়েছিল তাঁকে। অল্প বয়সেই গর্জে উঠেছিলেন ভারতের সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে। অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন বাবা। দু’জনের মধ্যে রচিত হয়েছিল সাময়িক দূরত্ব। মামলা লড়েছিলেন মায়ের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় জয়ী হয়েছিলেন রামমোহন।

আরও পড়ুন-জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে অফিস চালানোর সিদ্ধান্ত

ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে
স্বামীর মৃত্যুর পর তখন জ্বলন্ত চিতায় সহমরণে যেতে হত স্ত্রীকে। হিন্দু ধর্মের এই প্রথা ছিল অমানবিক, নির্মম। তৎকালীন শাসক সমস্তকিছু জেনেও কোনওরকম হস্তক্ষেপ করেননি। তবে দেশের সাধারণ নারীদের দুর্দশা গভীরভাবে চিন্তিত করেছিল রামমোহনকে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন— যেভাবেই হোক, এই প্রথা বন্ধ করতেই হবে। এরপর সতীদাহের বিরুদ্ধে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন। প্রকাশ করেন ইংরেজি অনুবাদ। প্রমাণ দিয়ে দেখান যে, এই প্রথা পুরোপুরি শাস্ত্রবিরোধী।
শুধুমাত্র সতীদাহ নিয়ে বই লিখেই থেমে থাকেননি, ইংরেজদের এই প্রথার বিরুদ্ধে আইন করার জন্যে আবেদন করেছিলেন। সেইসঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে একটি দল গঠন করে সতীদাহ বন্ধের জন্যে বিভিন্ন শ্মশানে ছুটে যেতেন। এই প্রথার বিরুদ্ধে বোঝাতেন। কাজটি করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা, অপমান সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। শেষপর্যন্ত মুঠোয় পুরেছিলেন সাফল্য। সতীদাহ প্রথা নিষেধ করে ইংরেজ সরকার জারি করেছিলেন আইন। এর ফলে ধর্মান্ধ রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে যেন একটা বোমা ফেটেছিল। চারদিকে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। বহু মানুষ রামমোহনের শত্রু হয়ে গিয়েছিলেন।
গোঁড়া হিন্দুরা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে নেমেছিলেন সই সংগ্রহ অভিযানে। রামমোহনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা মুরগির ডাক ডাকতেন। বাড়ির ভিতরে ফেলে দিতেন গরুর হাড়। রামমোহনের বিরুদ্ধে রচনা করেছিলেন গান। কলকাতার রাস্তায় সেই গান গাওয়া হত। এইভাবেই সতীদাহ রদ আইন বাতিল করার জন্য গোঁড়া হিন্দু সমাজ হয়েছিলেন একজোট। তাঁরা রাতারাতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ধর্মসভা’। প্রথম দিনের মিটিংয়ে চাঁদা উঠেছিল প্রায় বারো হাজার টাকা। হিন্দুদের মুখপত্র ‘সমাচার চন্দ্রিকা’য় রামমোহনের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু হয়েছিল। গোঁড়া হিন্দুরা যখন বুঝেছিলেন— ভারতবর্ষে এই আইন রদ হওয়ার আর কোনও সুযোগ নেই, তখন তাঁরা বিলেতের পার্লামেন্টে আপিল করেছিলেন। ইংল্যান্ডের ধর্মসভায় সেই আপিল অগ্রাহ্য হয়েছিল। অর্থাৎ, শেষপর্যন্ত জিতেছিলেন রামমোহনই। এই যুদ্ধে জয়ী হয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে এক নতুন ভারত গড়তে পেরেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন-বোসের মিথ্যে প্রতিশ্রুতির পর্দাফাঁস! নিশানা কুণালের, রাজভবন যাচ্ছে চোপড়ার স্বজনহারা পরিবার

পুত্রের সঙ্গে স্ত্রীর সমান অধিকার
পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধেও মতপ্রকাশ করেছিলেন রামমোহন। তৎকালীন বাংলায় বিলিতি বণিকদের সঙ্গে রফতানি-ব্যবসায় গজিয়ে ওঠা বাবু সম্প্রদায়ের হাতে প্রচুর কাঁচা টাকা। ঘরে-ঘরে দুর্গাপুজো, মহোৎসব। খাওয়া দাওয়া হইহল্লা। এই পরিবেশে দাঁড়িয়েই ধর্মের নামে জাতপাতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন রামমোহন।
নারীর সম্পত্তি লাভের জন্যেও আন্দোলন করেছিলেন। শাস্ত্র ঘেঁটে বলেছিলেন, প্রাচীন ঋষিগণ ব্যবস্থা করেছিলেন যে, মৃত-স্বামীর সম্পত্তিতে পুত্রের সঙ্গে স্ত্রীও সমান অধিকার পাবেন। একাধিক স্ত্রী থাকলেও তাঁরা সবাই সমানভাবে সম্পত্তির অংশীদার। এর ফলে আরও খেপে উঠেছিলেন কলকাতার হিন্দু সমাজ। তাঁরা রামমোহনের প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি হার মানেননি। এই আইনও পাশ করিয়েছিলেন। সমাজসংস্কারক হিসেবে তাঁর নাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।
রামমোহন কিন্তু হিন্দুধর্ম বিরোধী ছিলেন না। তিনি লিখেছেন, ‘আমার সমস্ত তর্ক বিতর্কে আমি কখন হিন্দুধর্ম্মকে আক্রমণ করি নাই। উক্ত নামে যে বিকৃত ধর্ম্ম এক্ষণে প্রচলিত, তাহাই আমার আক্রমণের বিষয় ছিল।’
আত্মীয় সভার বিরুদ্ধে গুজব
রামমোহন প্রায়শই ব্রাহ্মসভায় উপাসনা করতে যেতেন। নানা বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। সেই সময় কলকাতার কিছু গোঁড়া মানুষ তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তেন। এরপর বাধ্য হয়েই রামমোহন আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে রাখতেন পিস্তল।
‘আত্মীয় সভা’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। সপ্তাহে একদিন এই সভা অনুষ্ঠিত হত। সেখানে বেদান্ত অনুযায়ী এক ব্রহ্মের উপাসনা এবং পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা বলা হত। সভায় বেদপাঠের পর গাওয়া হত ব্রাহ্মসঙ্গীত। সভা সকলের জন্যে উন্মুক্ত ছিল না, কেবলমাত্র রামমোহনের কয়েকজন নিকট বন্ধু যোগদান করতেন। সেইসময় নিন্দুকেরা আত্মীয় সভার বিরুদ্ধে গুজব রটিয়েছিলেন যে, আত্মীয় সভায় লুকিয়ে লুকিয়ে গোমাংস খাওয়া হয়। এইকথা শুনে কিছু বন্ধু রামমোহনকে ত্যাগ করেছিলেন।
একটা সময় বেদ শোনার অধিকার ছিল না শূদ্র সম্প্রদায়ের। রামমোহন সেই বেদ-কে অনুবাদ করে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এর ফলে তাঁর বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজে চাঞ্চল্য ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। রামমোহন ছিলেন যথারীতি অকুতোভয়।

আরও পড়ুন-কসবার হোটেলে খুন যুবক! পলাতক দুই সঙ্গী

প্রস্তুত করেছিলেন আন্দোলন-ক্ষেত্র
ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ ও পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক-যুক্তিবাদের মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন রামমোহন। একদিকে সংস্কৃত শিক্ষা, অন্যদিকে ইংরেজি শিক্ষা— উভয়কেই সমান্তরালভাবে শিক্ষাব্যবস্থার অঙ্গীভূত করার চেষ্টা করেছিলেন। এই সমস্ত বিষয়ে সাহায্য পেয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের।
পাশাপাশি ব্রিটিশ শাসনের কুফল সম্পর্কেও তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ ভারতবাসীর দৈন্য, অশিক্ষা, স্বাধীনতা সম্পর্কে অচেতনতা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে তাঁর কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি চাইলেও একাকী সেই লড়াই চালিয়ে যেতে পারতেন না। বরং বিভিন্ন প্রকার সংস্কার সাধনের মাধ্যমে ব্রিটিশ-অপশাসন থেকে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন। দারিদ্র, দৈন্য মুছে দেওয়ার জন্য ভারতবাসীকে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি ধ্যান দিতেও বলেছিলেন।
তাঁর নারী মুক্তি আন্দোলন প্রকারন্তরে পরাধীনতার জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে ভারতবাসীর মুক্তির আন্দোলন। বিভিন্ন প্রকারের কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশবাসীকে উদ্ধার করার জন্য রামমোহন যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার জন্য রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘ভারত পথিক’ আখ্যায়িত করেছিলেন।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী
মেঘের আড়ালে থেকে নয়, প্রয়োজনে প্রকাশ্যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন রামমোহন। সংবাদপত্র ও মুদ্রণযন্ত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তাঁর লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের নানাভাবে শিক্ষিত করে তোলা। ব্রিটিশ কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে গণচেতনা তৈরির লক্ষ্যে নিজে ইংরেজি, বাংলা এবং ফারসি ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন। একজন মহান সমাজ সংস্কারক হওয়ার পাশাপাশি তিনি বাংলা সাহিত্যেও রেখেছিলেন মূল্যবান অবদান। তাঁকে বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৮২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার আইন করেছিলেন যে, সংবাদপত্র প্রকাশ করতে হলে সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। তখন রামমোহন ব্রিটিশ সরকারের এই অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে প্রিভি কাউন্সিলের আপিলে স্বাক্ষর— সবেতেই যোগ দিয়েছিলেন। এর ফলে তাঁকে বড় রকমের ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছিল। তাও চালিয়ে গিয়েছিলেন লড়াই। অর্থাৎ, শুধুমাত্র গোঁড়া হিন্দুদের বিরুদ্ধেই নয়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেও পিছ-পা হননি রামমোহন।
খ্রিস্টানদের বিরোধিতার মুখে
গোঁড়া হিন্দু সমাজ ও ধার্মিকদের পাশাপাশি রামমোহন খ্রিস্টান পাদ্রিদের বিরোধিতার মুখেও পড়েছিলেন। ‘Precepts of Jesus-Guide to Peace and Happiness’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলছন তিনি। বইটি লেখার জন্য বাইবেল, ওল্ড টেস্টামেন্টের ইংরেজির পাশাপাশি গ্রিক ও হিব্রু ভাষাও জানতে হয়েছিল তাঁকে। দুই ব্রিটিশ মিশনারি পাদ্রি উইলিয়াম কেরি ও মার্শম্যান সাহেব বিরোধিতা করেছিলেন এই বইয়ের। ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’য় তীব্র ভাষায় তাঁরা প্রতিবাদপত্র লিখেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, রামমোহন যিশুর উপদেশ মান্য করেছেন ঠিক কথা, কিন্তু যিশুর অলৌকিক ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করেছেন।
আগে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস রামমোহনের সমস্ত বই ছাপতেন। খ্রিস্টানরা বিরোধিতা করার ফলে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস রামমোহনের নতুন বই ‘Final Appeal’ ছাপাতে অস্বীকার করেন। তখন রামমোহন নিজেই ‘ইউনিটেরিয়ান প্রেস’ নামে একটি প্রেস নির্মাণ করেছিলেন। সেই প্রেস থেকেই ‘Final Appeal’ বইটি ছাপা হয়েছিল। এই গ্রন্থে তাঁর মেধা ও পাণ্ডিত্য দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন সবাই। রামমোহন যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছিলেন তাঁর ভাবনাই সঠিক ছিল। পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন মার্শম্যান।
সাহেবদের তুলনায় কম ছিলেন না
খাঁটি বাঙালি হয়েও রামমোহন নিজেকে তুলে ধরেছিলেন প্রায় ব্রিটিশদের উচ্চতায়। উপলব্ধি করেছিলেন— পদলেহনের পথ ধরে নয়, দেশের মঙ্গলের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপের দাবি জানাতে হবে নিজেকে শাসকের সম উচ্চতায় দাঁড় করিয়ে। নাহলে হবে না কার্যসিদ্ধি। মিলবে না গুরুত্ব। শিক্ষাদীক্ষা, বুদ্ধিমত্তা, আধুনিকমনস্কতায় তিনি সাহেবদের তুলনায় কোনও অংশে কম ছিলেন না। তাই ইংরেজ শাসক বাধ্য হয়েই তাঁকে মান্যতা দিতেন।
রামমোহনের বই অনুবাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। তাঁর নাম পৌঁছে গিয়েছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
জীবনের শেষ তিন বছর কাটিয়েছিলেন ইংলন্ডে। বিলেত যাওয়ার আগে দিল্লির বাদশাহের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেছিলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে যখন পা রাখেন, তখন তাঁকে দেখার জন্য, তাঁর কথা শোনার জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন বহু বিদেশি। আরও কয়েকটি দেশে গিয়েছিলেন। সেখানেও ঘটেছিল একই ঘটনা। নিজের দেশে নিন্দিত, তিরস্কৃত হলেও সমাজসংস্কার ও নারীমুক্তি আন্দোলনের কারণে অন্য দেশের অগণিত মানুষের মনে রামমোহন বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন। এইভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।
বহুবার তিরবিদ্ধ হয়েছেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁকে তিরবিদ্ধ হতে হচ্ছে আজও। নানাভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। অপকর্মগুলো সংঘটিত হচ্ছে মূলত অজ্ঞদের দ্বারা, সংকীর্ণমনাদের দ্বারা। আড়াইশো বছর আগে জন্মানো এই তেজস্বী পুরুষ ছিলেন সময়ের থেকে বহু যোজন এগিয়ে। পর্বত-সমান উঁচু। তাই হয়তো অতীতে এবং বর্তমানে তাঁকে, তাঁর অবদানকে যথাযথভাবে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। ভারতবর্ষ এখন যেদিকে এগোচ্ছে, সুদূর ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে কি না, সেটা নিয়েও দেখা দিয়েছে বিরাট প্রশ্নচিহ্ন!

Latest article