আত্মহত্যার ঠিক আগে মর্মস্পর্শী ভিডিও মোরাদাবাদের বিএলওর

যথেষ্ট সময় না দিয়ে বিজেপির নির্বাচনমুখী রাজনীতির চাপ ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বজ্ঞান আচরণের বলি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বিএলওদের।

Must read

মোরাদাবাদ: উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে ৪৬ বছরের এক বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। আত্মঘাতী হওয়ার আগে নিজের যন্ত্রণার কথা ভিডিওতে রেকর্ড করেন তিনি। খোদ যোগীরাজ্যে এই ঘটনা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এসআইআরের নামে কীভাবে সীমাহীন চাপের মধ্যে কাজ করে যেতে হচ্ছে বুথ লেভেল অফিসারদের। যথেষ্ট সময় না দিয়ে বিজেপির নির্বাচনমুখী রাজনীতির চাপ ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বজ্ঞান আচরণের বলি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বিএলওদের।

আরও পড়ুন-এসআইআর থেকে বাংলার বঞ্চনা, রাজ্যসভায় তুলে ধরলেন ডেরেক

গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক বুথ-লেভেল অফিসার (বিএলও) অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের অভিযোগ তুলে আত্মহত্যা করেছেন। এঁদের বেশিরভাগই শিক্ষক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিঠি লিখে কমিশনের কাজের চাপকে দায়ী করেছেন বিএলওরা। শুধু বিরোধী রাজ্যই নয়, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও একই ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, কেরল, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু-সহ মোট ১২টি রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন-কোর্টকেও অস্বীকার, এতই স্বৈরাচারী

মোরাদাবাদের সাম্প্রতিক ঘটনাটিতে মৃত ব্যক্তির নাম সর্বেশ সিং, যিনি পেশায় একজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন এবং গত ৭ অক্টোবর তাঁকে প্রথমবার নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব, অর্থাৎ বিএলওর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আত্মহত্যার আগে তিনি একটি ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন বলে এখন জানা যাচ্ছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছেন যে কঠোর পরিশ্রম করার পরেও তিনি এই বিপুল কাজ শেষ করতে পারছেন না। ভিডিওতে তাঁকে গভীর অবসাদগ্রস্ত ও দিশাহারা দেখিয়েছে। চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি তাঁর মা ও বোনের কাছে ক্ষমা চেয়ে বাড়ির ছোটদের যত্ন নিতে অনুরোধ করেন। ভিডিওটিতে তাঁকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, মা, দয়া করে আমার মেয়েদের যত্ন নিও। আমাকে ক্ষমা কর। আমি কাজটা শেষ করতে পারলাম না। আমি একটি চরম পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। মৃত্যুর আগে তিনি আরও বলেছিলেন যে এই সিদ্ধান্তের জন্য কাউকে দোষারোপ করা উচিত নয় এবং তাঁর পরিবারকে যেন এজন্য হেনস্থা করা না হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সর্বেশ সিং বলেন, আমি গভীর কষ্টে আছি। গত ২০ দিন ধরে ঘুমাতে পারিনি। আমার চারটি ছোট মেয়ে। অন্যরা কাজ শেষ করতে পারছে, কিন্তু আমি পারছি না। বোনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি এই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। দুঃখিত বোন, আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার বাচ্চাদের যত্ন নিও। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, রবিবার ভোরে তাঁর স্ত্রী বাবলি দেবী বাড়ির গুদাম ঘরে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান এবং স্থানীয় পুলিশকে খবর দেন। ঘটনাস্থল থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের উদ্দেশে লেখা দু’পাতার হাতে লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। নোটে মৃত বিএলও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসআইআর-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারার জন্য হতাশা প্রকাশ করেছেন। নোটে লেখা ছিল, আমি দিনরাত কাজ করছি কিন্তু এসআইআর-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছি না। উদ্বেগের কারণে আমার রাত অসহ্য হয়ে উঠেছে। আমি মাত্র দুই-তিন ঘণ্টা ঘুমাই। আমার চারটি মেয়ে, তাদের মধ্যে দু’জন অসুস্থ। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন। সিনিয়র পুলিশ অফিসার আশিসপ্রতাপ সিং সুইসাইড নোটের বিষয়বস্তু নিশ্চিত করে জানান, নোটে লেখা আছে যে তিনি বিএলওর কর্তব্যের বোঝা সামলাতে পারেননি। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অনুজকুমার সিং এই মৃত্যুর কথা স্বীকার করে ওই শিক্ষকের কাজের প্রতি নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর কাজের মান ছিল চমৎকার। তাঁকে সহায়তা করার জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রশাসনিক ও পুলিশি উভয় তদন্ত চলছে। আমরা পরিবারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেব।

Latest article