ডাইনিং উইথ দ্য কাপুর’স

শুধু অভিনয়ে নয়, কাপুরদের ছিল জবরদস্ত্ খানাপিনার রেওয়াজও। রাজ কাপুরের শতবর্ষে বলিউডের প্রখ্যাত সেই কাপুর পরিবারের খানাপিনা আড্ডা-মজা এবং স্মৃতিচারণ নিয়ে শুরু হল তথ্যচিত্র ‘ডাইনিং দ্য উইথ কাপুর’স। যার সৃজনশীল ভাবনায় রয়েছেন স্বয়ং রাজকাপুরের নাতি আরমান জৈন। লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

১৯৫১ সালে রাজ কাপুর অভিনীত ছবি ‘আওয়ারা’ সোভিয়েত ইউনিয়নে মুক্তি পাওয়ার পর বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ছবিটি বিদেশের সিনেমা হলে বহুদিন ধরে চলেছিল। দেশে এবং দেশের বাইরে রেকর্ড গড়ে এই ছবি। বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভও হয় রেকর্ড সংখ্যায়। কিংবদন্তী অভিনেতা, পরিচালক রাজ কাপুরের সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন তাঁর পরবর্তী প্রজন্মরাও। সেই কারণে বলিউড তথা গোটা পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত কাপুর পরিবার। বলিউডের প্রথম ফিল্মি পরিবারের উত্তরাধিকার পৃথ্বীরাজ কাপুরের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এবং তার ছেলে রাজ কাপুর, শাম্মি কাপুর, শশী কাপুর এই উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সেই কাপুর পরিবারের দাপট আজও বলিউডে একইরকম। শাম্মি কাপুর, শশী কাপুর, রণধীর কাপুর, ঋষি কাপুর, নীতু কাপুর থেকে এই প্রজন্মের করিশ্মা কাপুর, করিনা কাপুর, রণবীর কাপুর প্রত্যেকে প্রথম সারির অভিনেতা-অভিনেত্রী। রাজকাপুরের মতো বটগাছের ছত্রছায়ায় থাকলেও এঁরা প্রত্যেকেই নিজস্ব প্রতিভায় উজ্জ্বল। সেই পরিবারকে কেন্দ্র করেই সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে শুরু হয়েছে একটি ডকুমেন্টরি বা তথ্যচিত্র যার নাম ‘ডাইনিং উইথ দ্য কাপুর’স’। রাজকাপুর শতবর্ষকে উপলক্ষ করে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রটি।

আরও পড়ুন-পুতিন-মোদি বৈঠকে পরমাণু ও সামরিক চুক্তিতে বিশেষ জোর

অনেকেই হয়তো জানেন না রাজকাপুর শুধু ভাল অভিনেতা বা পরিচালকই ছিলেন না তিনি ছিলেন ভীষণ অতিথিপরায়ণ এবং ভোজনরসিকও। তিনি খেতে এবং খাওয়াতে ভালবাসতেন। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিল পায়া কারি বা খাসির পায়া। ‘আর কে ফিল্মস’ তৈরির পর কাপুরদের খানাপিনা, আতিথেয়তার ঐতিহ্য রাজ কাপুর খুব সাড়ম্বরে বজায় রেখেছিলেন। হোলি, গণেশপুজো, দিওয়ালি, ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার, শুভমহরত, প্রিমিয়ার, বক্স অফিস সাফল্য এমন কি মেয়ের পুতুলের বিয়েতেও ভোজের আয়োজন করতেন তিনি! বাড়িতে অতিথি,বন্ধু সমাগম লেগেই থাকত। কাউকে না খাইয়ে ছাড়া হত না। জন্মদিন নিজের হোক বা পরিবারের অন্যদের তিনি ছোট হয়ে যেতেন সেই দিনটা। হাসতেন, মজা করতেন, নাচতেন, গাইতেন। সেই সবের সাক্ষী থাকতেন প্রিয় কন্যা রিমা কাপুর জৈন। কাপুর পরিবার বলে, অভিনয় নয়, তাদের প্রথম প্যাশন ভাল খাবার ও পানীয়। শাম্মি কাপুর ভালবাসতেন কাঠের আগুনে ঝলসানো মাংস। ঋষি কাপুর আর নীতু সিংয়ের বিয়ের খাওয়াদাওয়া চলেছিল প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। ঋষি ছিলেন একেবারে চর্ব, চোষ্য, লেহ্য, পেয় গোত্রের খাইয়ে মানুষ। সেই লেগাসি আজও একইরকম রয়েছে। এই তথ্যচিত্রে রাজকাপুরের সময় থেকে চলে আসা কাপুর পরিবারের সেই রান্না-খাওয়ার প্যাশনের গল্পই বলা হয়েছে গল্প-আড্ডার ছলে। কাপুরদের বংশপরম্পরায় ধরে রাখা ঐতিহ্যবাহী খানাপিনা, এই প্রজন্মের পছন্দের খাবারদাবার, একসঙ্গে বসে খাওয়া, খাবার ফাঁকে মজার ছলে একে অন্যের ত্রুটি নিয়ে ঠাট্টা তামাশা, হইহই, টুকরো সাক্ষাৎকার, কথোপকথন রাজ কাপুরের স্মৃতিতে ভরা এক নস্টালজিক জগৎ ‘ডাইনিং উইথ দ্য কাপুর’স। এই তথ্যচিত্রটির সৃজনশীল ভাবনায় রয়েছেন রাজকাপুরের নাতি আরমান জৈন। প্রযোজকও তিনিই।
আরমান বহুদিন ধরে একটি সফল ক্লাউড কিচেন চালান যার নাম ‘জংলি কিচেন’। আরমান দুর্দান্ত রাঁধেনও। কাপুর পরিবারের সন্তান হয়েও চলচ্চিত্র জগৎ থেকে দূরে থাকা আরমানের প্যাশন রান্নাই। তাঁর ‘জংলি কিচেন’ তৈরির অনুপ্রেরণা দিদা কৃষ্ণারাজ কাপুর। রাজকাপুরের স্ত্রী কৃষ্ণ কাপুর ছিলেন দুর্দান্ত রাঁধিয়ে। তাঁর রান্নার অনুরাগী ছিলেন গোটা কাপুর পরিবার। কৃষ্ণাজির হাতের ইয়াখনি পোলাও-এর কদর ছিল মারাত্মক। তাই সেদিনের খাওয়াদাওয়ার পুরো মেনুটাই ডিজাইন করা হয়েছিল কাপুরদের পুরাতনী ঐতিহ্যবাহী রান্নাঘর এবং কৃষ্ণারাজ কাপুরের মহামূল্যবান রেসিপি থেকেই। সেই খোলামেলা পারিবারিক আড্ডা, খাওয়াদাওয়ায় যাঁরা হাজির ছিলেন তাঁরা হলেন রণধীর কাপুর, রিমা জৈন, নীতু কাপুর, করিশ্মা কাপুর, রণবীর কাপুর, ঋদ্ধিমা কাপুর সাহনি, কুণাল কাপুর, জাহান কাপুর, আদর জৈন, নভ্যা নন্দা, অগ্যস্ত নন্দা এবং দেখা মিলল কাপুর পরিবারে বিখ্যাত জামাইদেরও, যার মধ্য অন্যতম হলেন সইফ আলি খান।

আরও পড়ুন-ব্রাত্যর বিরুদ্ধে বানানো কুৎসা, জবাব উপাচার্যর

‘ডাইনিং উইথ দ্য কাপুর’স যার ব্রেন চাইল্ড সেই আরমান জৈন তাঁর তৈরি প্রথম তথ্যচিত্র সম্পর্ক বলেন, ‘এই তথ্যচিত্রটি তৈরি করা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে একটি। শৈশব থেকে এই স্বপ্ন নিয়েই বড় হয়েছি। আমি দাদুকে দেখিনি কারণ আমার জন্মের দু-বছর আগেই উনি মারা যান। তাঁর একশো বছরে আমি এবং আমার মা রিমা কাপুর দুজনেই ভাবছিলাম পারিবারিক ঐতিহ্যকে সামনে রেখে কীভাবে রাজ কাপুরের শতবর্ষ সেলিব্রেশন করা যায়। তখন আমরাই ঠিক করলাম একমাত্র একসঙ্গে খাওয়াদাওয়াই সেই উদ্দেশ্যকে সফল করবে। কারণ আমাদের পারিবারিক স্মৃতিতে খাওয়াদাওয়া, রান্নাবান্না, অতিথি আপ্যায়ন একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। আমার দাদু রাজ কাপুর খুব খেতে এবং খাওয়াতে ভালবাসতেন। বাড়িতে কেউ এলেই আড্ডা গল্প তো হতই সঙ্গে খাওয়াদাওয়া ছিল মাস্ট। না খেয়ে কেউ যেতে পারত না। ফলে দাদুকে স্মরণ করা এবং তার শতবর্ষের উদযাপনের এর চেয়ে ভাল বিষয় আর কী হতে পারে! চেয়েছিলাম সবাইকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসতে এবং সবার পছন্দের কিছু না কিছু মেনুতে রাখতে।’ এই প্রজন্মে আরমান ছাড়া ওই পরিবারে আর কেউ ভাল রাঁধেন কিনা সেই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি মজা করেই বলেন, ‘আমাদের পরিবারে সবাই অতিথিপরায়ণ, খাবার বিষয়টা বোঝেন, খেতে ভালবাসেন কিন্তু রাঁধেন না!’ আরমানের হাত ধরেই রাজ কাপুরের সুন্দর স্মৃতি এবং কাপুর পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কিছুদিককে উন্মোচিত এবং নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই তথ্যচিত্রে। পরিচালক স্মৃতি মুন্ধ্রা।

Latest article