রো-কো আর যশস্বীতে মুঠোয় সিরিজ

পাহাড়, সমুদ্র, রো-কো আর যশস্বী। শনিবাসরীয় রাতের পর এই যদি বিশাখাপত্তনম ট্যুরিজমের ক্যাচলাইন হয়, ভুল কোথায়?

Must read

বিশাখাপত্তনম, ৬ ডিসেম্বর : পাহাড়, সমুদ্র, রো-কো আর যশস্বী। শনিবাসরীয় রাতের পর এই যদি বিশাখাপত্তনম ট্যুরিজমের ক্যাচলাইন হয়, ভুল কোথায়? রোহিতের এটা মামাবাড়ি। তিনি রান করলেন। যশস্বী প্রথম ওডিআই সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন। আর বিরাট? তাঁরও (৬৫ নট আউট) অনায়াস দাপট থাকল ৯ উইকেটে জয়ে । লোকে এখানে ঘুরতে আসে। তাদের রথ দেখা আর কলা বেচাও হল। টেস্টে ০-২ হেরো দল রো-কোর হাত ধরে সিরিজ তো জিতলই, ১০.১ ওভার বাকি রেখে ২৭১/১ তুলে উড়িয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

আরও পড়ুন-বার কাউন্সিল ভোটে মহিলাদের জন্য ৩০% আসন সংরক্ষণ

গম্ভীর-আগারকর মিলে তাঁদের বিচারসভা বসাতে যাচ্ছিলেন, এটা বোধহয় ভুলতে পারছেন না রোহিত আর বিরাট। রাঁচি ও রায়পুরে সেঞ্চুরির পর বিরাটের লাফ মনে থাকবে। রোহিত উল্টো পথে হাঁটছেন। নিঃশব্দ প্রতিবাদ। পঞ্চাশের পর সামান্য ব্যাট তুললেন। তারপর আকাশের দিকে চোখ। হয়তো ভাবছিলেন, এরা কারা আমাদের বিচার করে! ততক্ষণে দ্রুততম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫৩৮ ম্যাচে ২০,০০০ রান হয়ে গিয়েছে। ৭৫ করে কেশবকে উইকেট দিয়ে যাওয়ার সময় বিরাট পিঠ চাপড়ে দিলেন। বিরাটের পঞ্চাশের পর হাততালি দিতে দেখা গেল রোহিতকেও।
কুলদীপ বিরতিতে বলছিলেন, অনেকদিন পর শুকনো বলে বল করলাম। ইঙ্গিত রাঁচি আর রায়পুরের শিশিরে। ওখানে বল গ্রিপ করতে পারেননি। এতে প্রচ্ছন্ন বার্তা ছিল। রোহিত-যশস্বীর জন্য সাজানো বাগান সামনে। পরে মিলেও গেল। দু’জনে যেভাবে মার-মার করে শুরু করলেন তাতে বোঝা গেল যে, আলোর নিচেও শিশির বলে কিছু নেই এখানে। জানসেন প্রথম স্পেলে ১৭ রান দিয়েছেন। গেমপ্ল্যান ছিল জানসেনকে দেখে খেলে দাও। বাকিটা হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন-শেখ হাসিনা কতদিন ভারতে থাকবেন তা তিনিই ঠিক করবেন

প্রথম ওভারেই রিকেলটনকে(০) অর্শদীপ ফিরিয়ে দেওয়ার পর মনে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা চাপে পড়ল। কিন্তু সেটা যে ভুল তা পরিষ্কার হয়ে যায় পরের কয়েক ওভারে। কুইন্টন ডি’ককের সঙ্গে ততক্ষণে বাভুমার জুটি জমে গিয়েছে। ডি’কক প্রথম দুই ম্যাচে রান পাননি। এখানে প্রথম বলই খেললেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে। বাভুমাও ছিলেন স্বাভাবিক ছন্দে। এই দু’জন মিলে ১১৩ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শক্ত জমিতে দাঁড় করিয়ে দেন। তারপরও যে তারা ৪৭.৫ ওভারে ২৭০ রানে গুটিয়ে গেল সেটা প্রসিধ ও কুলদীপের জন্য।
রাহুল টসে জেতার পর ভারতীয় ড্রেসিংরুমের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। যেহেতু টস ভাগ্য একদম ভাল যাচ্ছে না ভারত অধিনায়কদের। রাহুলের টসে জেতা আর পঞ্চম বলে ওপেনার রিকেলটনের উইকেট তুলে নেওয়ার মধ্যে একটা বার্তা ছিল যে এবার দিন ঘুরছে। কিন্তু সহজে হয়নি। ডি’কক আর বাভুমা জুটিতে আফ্রিকানরা ততক্ষণে আর একটা তিনশো প্লাসের দিকে রওনা হয়েছে।
রো-কোর টানে স্টেডিয়ামে একটা আসনও খালি ছিল না। এমন যে হবে আন্দাজ করা গিয়েছিল। কিন্তু বিরক্তি বাড়িয়ে ধীরে ধীরে ম্যাচের উপর জাঁকিয়ে বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ডি’কক জানেন স্পিনারদের ছন্দ নষ্ট করতে সেরা অস্ত্র সুইপ। প্রসিধ আর হর্ষিতকে দেদার পুল মেরেছেন তিনি। শর্ট বলে মিড উইকেট দিয়ে পরপর কয়েকটা চার-ছয় মারার পরও ভারতীয় পেসাররা লাইন বদল করেননি। বোলিং কোচ মর্নি মর্কেলের ভূমিকা নিয়ে তাহলে তো প্রশ্ন উঠবেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ১৬৮ থেকে পরপর উইকেট হারিয়েছে কুলদীপ ও প্রসিধের জন্য। শেষ ৮টি উইকেট পড়েছে ৯৮ রানে। কুলদীপ ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। পরের দিকে ব্রেভিস (২৯), জানসেন (১৭), বশ (৯) ও এনগিডি (১) তাঁর শিকার। তখন কুলদীপ উইকেট না নিলে দক্ষিণ আফ্রিকা আরও কিছুটা যেত। বিশাখাপত্তনমে দিনের বেলায় বেশ গরম। তার উপর স্টেডিয়ামের কাছে সমুদ্র হওয়ায় নোনা বাতাস আছে। এই আবহে পাটা উইকেট থেকে কুলদীপ কিন্তু টার্ন আদায় করেছেন।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন প্রসিধ। অথচ প্রথম দুই ওভারে তিনি ডি’কক, বাভুমার হাতে ব্যাপক মার খেয়েছেন। শেষমেশ ৯.৫ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। আগের ম্যাচে ৮০ রানে ১ উইকেট নেওয়া সিমারের এই ভোলবদল নজর কাড়ার মতো। টপ অর্ডারে ডি’কক এবং পরে মার্করাম (১) ও ব্রিজকির (২৬) উইকেট নিয়েছেন প্রসিধ। তাঁর ও কুলদীপের পাশে একটি করে উইকেট অর্শদীপ ও জাদেজার।

Latest article