ধুরন্ধর

মুক্তির পরেই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে অপারেশন ‘ধুরন্ধর’। ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে একশো কোটির গণ্ডি। ছবির পরিচালক আদিত্য ধর। মুখ্য ভূমিকায় অভিনেতা রণবীর সিং, অক্ষয় খান্না, আর মাধবন। টানটান স্পাই মিশন, অ্যাকশন, রোমান্স— সব মিলিয়ে কেমন হল এই ছবি! লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

বড়পর্দার হিরো মানেই গ্ল্যামার, অর্থ, নাম, যশ, ঝাঁ-চকচকে ব্যাপার। কিন্তু সুপারস্টার হতে যে পথটা পেরতে হয়, স্টারডম ধরে রাখতে যতটা স্ট্রাগল করতে হয় তা শুধুমাত্র একজন স্টারই জানেন। সদ্য মুক্তি পেয়েছে রণবীর সিং-এর ‘ধুরন্ধর’ (Dhurandhar)। ছবিতে তাঁকে দুরন্ত লেগেছে। পেশিবহুল চেহারা তো নায়কদের কমবেশি থাকেই কিন্তু তার একটা মাপকাঠি হয়। সেই মাপকাঠিও ছাপিয়ে গেছেন রণবীর। এই ছবিতে রণবীরের অভিনয়ের সঙ্গে যা ভীষণভাবেই চর্চিত তা হল তাঁর চেহারা এবং লুক। ছবির জন্যই রণবীর এই চেহারা তৈরি করেছেন। ‘ধুরন্ধর’-এর প্রস্তুতিতে তিনি কোনও কসুর বাকি রাখেননি। এই বিষয় তাঁকে সাহায্য করেছেন তাঁরই ব্যক্তিগত ফিটনেস প্রশিক্ষক লয়েড-স্টিভেন্স। যদিও রণবীর সারাবছর একটা ফিটনেস রুটিনের মধ্যেই থাকেন কিন্তু এই পর্বে তিনি নিয়মিত আরও কঠোরভাবে স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজের সঙ্গে প্রচুর কার্ডিও করেছেন। ফলে তার শরীরে ছিটেফোঁটা মেদ নেই কিন্তু পেশির ঘনত্ব বেড়ে গেছে অনেকটাই। জিমের পাশাপাশি সাঁতার কেটেছেন এবং নিজের লাইফ-স্টাইলেও এনেছেন আমূল পরিবর্তন। নো কার্ব প্রোটিন ডায়েট রুটিন মেনে চলেছেন। অন্যান্য জরুরি খাবারের সঙ্গে ওটস, বাদাম, ডিটক্স ড্রিঙ্কস অবশ্যই ছিল তার ডায়েটে। এ ছাড়া নিয়মিত খেতেন অশ্বগন্ধা, খেজুর এবং শিলাজিৎ দিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের লাড্ডু। ‘ধুরন্ধর’-এর প্রস্তুতির জন্য নিজের ওপর ওয়র্ক করা এতটা মারাত্মক ছিল বলেই ছবির আউটকাম এত ভাল হয়েছে। ‘রকি ওউর রানি কি প্রেম কাহানি’র মতো একটা রোম্যান্টিক চরিত্রে অভিনয়ের পরে রণবীরের নিজেকে এই আমূল ভেঙে নতুন করে গড়ে তোলা দর্শক, সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আসলে একটা চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে না পারলে, তাকে যাপন করতে না পারলে সেই চরিত্রকে সফল করা যায় না। তাই বোধহয় ‘ধুরন্ধর’-অভিনেতা রণবীর সিং-এর জীবনে অন্যতম সফল ছবির তালিকায় নাম লেখাল।

‘ধুরন্ধর’ (Dhurandhar) ছবিটি শুরু থেকেই হাইপড। ছবির প্রচার সবসময়ই তুঙ্গে ছিল। ফলে ছবিটা রিলিজের পরেই বক্স অফিসেও পড়ে গিয়েছে শোরগোল। নানা বাধা-বিপত্তি, আইনি জটিলতা, বিতর্ক পেরিয়ে মুক্তির দু-দিনেই বোঝা গেল ঝড় কাকে বলে! ইতিমধ্যে এই ছবি পেরিয়ে গেছে ১০০ কোটির গণ্ডি। এত সফল হবার কারণ কী? এটি একটি রাজনৈতিক স্পাই থ্রিলার। বিষয় আদতে ভারত, পাকিস্তান দ্বৈরথ। বিভিন্ন ঘটনাক্রম নিয়ে ছবিতে সেই দ্বৈরথ সামনে আসবে যেমন ১৯৯৯-এর কান্দাহার হাইজ্যাক, ২০০১-এর সংসদ হামলা থেকে ২০০৮-এর মুম্বই হামলা— এই সব কিছুকে একত্রে এনে টানটান চিত্রনাট্যে বোনা হয়েছে ছবির গল্প। গুপ্তচর বৃত্তিতে প্রতিমুহূর্তের জীবনসংশয়, সংঘর্ষ, জঙ্গিঘাঁটি, পাক-বালোচ কড়চা, অপরাধচক্র— সবটাই উঠে এসছে খুব ঝকঝকে, স্মার্ট মোড়কে। ছবির পরিচালক আদিত্য ধর। এটি সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের প্রথম অধ্যায় অর্থাৎ এরপরে আসবে আরও অধ্যায়। এতে সমস্যা নেই কিন্তু পরিচালকেরা ফ্রাঞ্চাইজির ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রথম পর্বের সাফল্যের ধারাটা ঠিক বজায় রাখতে পারেন না, পরবর্তী পর্বগুলোয়। ‘ধুরন্ধর’-এর ক্ষেত্রে কী হয় সেটাই এখন দেখার। তবে প্রথমটিকে স্পাই থ্রিলার হিসেবে একশোয় একশো দেওয়া যেতেই পারে।

আরও পড়ুন-”বিহার পারেনি, বাংলা পারবে” SIR নিয়ে কমিশনকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর

সিনেমার দৈর্ঘ্য ৩ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট। এই সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় পাকিস্তানের করাচির লিয়ারি নামের এক অন্ধকার জগতের দুর্ধর্ষ দস্যুবৃত্তির হাড়হিম গাথা তুলে ধরেছেন পরিচালক। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর একাধিক গোপন মিশনের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ছবিটি করেছেন পরিচালক আদিত্য ধর। এটি সরাসরি সশস্ত্র বাহিনীর গল্প নয়, বরং সেই মানুষগুলোর কথা বলবে যারা নীরবে যুদ্ধ করে, নিজের নাম, পরিচয়, এমনকী ব্যক্তিগত জীবন বিসর্জন দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে।

কান্দাহার হাইজ্যাক দিয়ে ছবি শুরু। গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান অজয় সান্যাল। পাকিস্তান থেকে পরিচালিত এক ভয়ঙ্কর জঙ্গি নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে তিনি তৈরি করেন এক অসম্ভব দুঃসাহসিক গোয়েন্দা অভিযান। সেই বিপজ্জনক মিশনের জন্য সান্যাল বেছে নেন পাঞ্জাবের এক যুবককে। সে এক বন্দি। ছেলেটির ভেতরের ছিল প্রচণ্ড রাগ। সেই টগবগে শক্তি, রাগ এবং জেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর শক্তিকে বুঝেছিলেন সান্যাল এবং বিশেষ মিশনের জন্য তাকে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুরু হয় অপারেশন ‘ধুরন্ধর’ (Dhurandhar)। লক্ষ্য একটাই শত্রু দেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের ভেতরে ঢুকে তাদের শিকড় উপড়ে ফেলা। আর সেই লড়াইয়ে ব্রহ্মাস্ত্র হল ‘হামজা আলি মাজারি’— এই চরিত্রে রয়েছেন রণবীর সিং। ধুন্ধুমার অ্যাকশন, প্রেম, বিয়ে, রোমান্স— বাণিজ্যিক ছবির যাবতীয় মালমশলা রয়েছে এই ছবিতে। ডিটেলিং খুব ভাল।
এই ছবির মুখ্যভূমিকায় রণবীর সিং ছাড়াও রয়েছেন সঞ্জয় দত্ত, অর্জুন রামপাল, আর মাধবন, সারা অর্জুন এবং রাকেশ বেদী, মানব গোহিল, ড্যনিশ পান্ডোর প্রমুখ। রণবীরের পাশাপাশি যাদের অভিনয় বেশ চর্চিত তাঁরা হলেন অক্ষয় খান্না, আর মাধবন। ছবিতে অক্ষয় খান্নার একটা সংলাপ নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে সম্প্রতি। তাঁর অভিনয় মনে রাখবেন দর্শক, গোয়েন্দা-প্রধান সান্যালের চরিত্রের সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের। এই চরিত্রে রয়েছেন আর মাধবন। আইএসআইয়ের মেজর ইকবালের চরিত্রে অর্জুন রামপাল ভাল। বাকিটা তোলা থাক যাঁরা এখনও ছবিটি দেখেননি তাঁদের জন্য। ছবির কাহিনিকার আদিত্য ধর। প্রযোজনায় আদিত্য ধর, লোকেশ ধর ও জ্যোতি দেশপান্ডে। সিনেমাটোগ্রাফিকে যদি অসাধারণ বলা হয় তার কৃতিত্ব বিকাশ নওলাখার। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর দর্শকদের গায়ে কাঁটা দেবে৷

Latest article