বড়দিনের দুই বড় সিরিজ

'মিসেস দেশপাণ্ডে' এবং ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি : রয়েল বেঙ্গল রহস্য’। দুই ওয়েব সিরিজ। প্রথমটি হিন্দি। ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে। দ্বিতীয়টি বাংলা। মুক্তি পেতে চলেছে। এই দুই বড় সিরিজ নিয়ে সরগরম বড়দিনের বাজার। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

নেনে যখন দেশপাণ্ডে
তিনি ‘বেটা’র ধকধক গার্ল নন, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’-এর নিশাও নন, ফলে নয়ের দশকের মতো ঝড় তুললেন না পুরুষহৃদয়ে, তিনি মাধুরী দীক্ষিত নেনে, ধরা দিলেন একজন জেল বন্দি দোষী সাব্যস্ত সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায়। মিসেস নেনে নন, মিসেস দেশপাণ্ডে (mrs deshpande) হিসেবে। ঠান্ডা মাথায় একের পর এক খুন করে চলেছেন। নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছেন শত্রুপক্ষকে। হাসি মুখের চেনা সারল্য উধাও। মুখমণ্ডল কঠিন। জ্বলজ্বল করছে দুটি চোখ। তাঁর মারকাটারি অ্যাকশনে ঘায়েল প্রতিদ্বন্দ্বী। এই মাধুরী অচেনা। অদেখা। রীতিমতো চমকে দিয়েছেন।
১৯ ডিসেম্বর, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম জিওহটস্টারে মুক্তি পেয়েছে জমজমাট ওয়েব সিরিজ ‘মিসেস দেশপাণ্ডে’। সেখানেই নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাধুরী।
কিছুদিন আগেই সলমন খানের ‘বিগ বস’-এর আসরে এসেছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় এই নায়িকা। পর্দার প্রেম এবং নিশা জুটি অভিনয় করে দেখান সুরজ বরজাতিয়ার ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবির একটি রোম্যান্টিক দৃশ্য। সেটা শেষ হতেই সলমন মাধুরীকে ‘মিসেস নেনে’ বলে সম্বোধন করেন। মাধুরী বলেন, তিনি এখানে এসেছেন মিসেস দেশপাণ্ডে হিসেবে। তারপর ছাড়াতে শুরু করেন চরিত্রের খোসা।
আরও কয়েকটি আসরে মাধুরী চরিত্রটি সম্পর্কে বলেন। জানান, কীভাবে তিনি অন্ধকার চরিত্রে রূপান্তরিত হয়েছেন। এ-ও জানান, তিনি অন্য কোনও চরিত্র থেকে অনুপ্রেরণা নেননি। কারণ মিসেস দেশপাণ্ডে চরিত্রটির নিজস্বতা রয়েছে। তিনি মনে করেন প্রতিটি চরিত্রই অনন্য। যেহেতু মিসেস দেশপাণ্ডের নিজস্ব গল্প আছে, তাই তাঁকে এই চরিত্রের জীবনের গভীরে যেতে হয়েছে এবং তাঁর মানসিকতা অনুসন্ধান করতে হয়েছে।
সিরিজটি দেখার পর মনে হয়েছে, যথার্থই বলেছেন মাধুরী। তিনি যে শুধুমাত্র গড়পড়তা বলিউডি নায়িকা নন, একজন বড় মাপের অভিনেত্রী, এই বয়সে আরও একবার প্রমাণ দিলেন। প্রচণ্ড খিদে রয়েছে তাঁর ভিতরে। আজও। অভিনয়ের খিদে। ভাল কাজের খিদে। তাই তিনি নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন এবং যথারীতি সফল হন।
আছেন অনেকেই। মনে রাখার মতো অভিনয় করেছেন প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ চান্দেরকর, কাভিন ডেভ, অর্জুন পাণ্ডে প্রমুখ। তবে মাধুরীই আগাগোড়া সিরিজটি টেনে নিয়ে গেছেন। তার জন্য যা যা করার, করেছেন। নিজেকে ভেঙেছেন। শতযোজন দূরে থেকেছেন গ্ল্যামার থেকে। দিয়েছেন নতুন আদল। হয়ে উঠেছেন সম্পূর্ণ অন্য একটি চরিত্র। সবমিলিয়ে নাগেশ কুকুনুর পরিচালিত, অ্যাপলুজ এন্টারটেইনমেন্ট এবং কুকুনুর মুভিজ প্রযোজিত রোমহর্ষক হিন্দি থ্রিলারটি দেখার মতো।

আরও পড়ুন-বেকার মশকরা না করে সিরিয়াসলি ভেবে দেখুন

জঙ্গলে ফেলুদা
থ্রি মাস্কেটিয়ার্স-এর দেখা মিলবে এবারের বড়দিনে। ২৪ ডিসেম্বর, হইহই করে হইচই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে সত্যজিৎ রায়ের কাহিনি অবলম্বনে নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি : রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ (feludar goyendagiri)। ফেলুদার চরিত্রে টোটা রায়চৌধুরী, জটায়ু অনির্বাণ চক্রবর্তী, তোপসে কল্পন মিত্র। সেইসঙ্গে দেখা যাবে দীপঙ্কর দে, চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর মতো দাপুটে অভিনেতাদের। তবে বদল ঘটেছে পরিচালকের। কয়েকটি সিরিজে ফেলুদার গল্প পরিচালনা করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। বুনেছেন নিজস্বতা। পেয়েছেন প্রশংসা। এবারের সিরিজটি পরিচালনা করছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। মূল তিন চরিত্রের অভিনেতা অপরিবর্তিত থাকলেও, পরিচালক বদল যে পরিবেশনায় অন্য গন্ধ ছড়াবে, সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এর আগে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘অ্যামাজন অভিযান’-এর মতো বিগ অ্যাডভেঞ্চারস প্রোজেক্ট সাফল্যের সঙ্গে সামলেছেন কমলেশ্বর, ফলে তাঁর কাছে দর্শকদের বিপুল প্রত্যাশা। যদিও গোয়েন্দা গল্প নিয়ে এটাই তাঁর প্রথম কাজ। তুলনা হতে পারে জেনেও ঝাঁপিয়েছেন। একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কাজ করতে করতে রোমাঞ্চিত হয়েছেন তিনি। ফিরে পেয়েছেন ছেলেবেলার দিনগুলোকে।

দার্জিলিং থেকে কাশ্মীর, পাহাড়-পর্বত অনেক হয়েছে। এবার জঙ্গল। সেইমতো বেরিয়ে পড়েছেন ফেলুদা অ্যান্ড কোং। জিপ নিয়ে ঢুকেছেন গভীর জঙ্গলে। সেখানেই দেখা পান হরিণ, হাতি, সাপ, পাখির। তারপর ধাঁধা। মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ। ছড়ায় রোমাঞ্চ। পাশাপাশি গুপ্তধনের হাতছানি। নিছক বেড়ানো লাটে ওঠে। মগজাস্ত্র প্রয়োগ করেন ফেলুদা। ধীরে ধীরে সরতে থাকে কুয়াশার আস্তরণ। ফোটে আলো। উন্মোচন ঘটে রয়্যাল বেঙ্গল রহস্যের। কীভাবে? জানার জন্য দেখতে হবে সিরিজটি। ছোট্ট টিজার দেখে মনে হয়েছে, ফেলুদা এবং টোটাকে কোনওভাবেই আর আলাদা করা যায় না। প্রতিটি সিরিজেই তিনি প্রয়োগ করেছেন নিজস্বতা। আশা করি এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। অভিনয় করেন মেধা দিয়ে। এখানে কথা বলেছে তাঁর দুটি চোখ। জটায়ুর চরিত্রে সাবলীল অনির্বাণ। দারুণভাবেই মানিয়ে গেছেন। তোপসে কল্পন যথাযথ। আর চিরঞ্জিত? সিরিজে তাঁর ব্যাটে যে বড় রান উঠবে, বলার অপেক্ষা রাখে না।
জয়ন্তী, রাজাভাতখাওয়া, চালসা-সহ নানা জায়গায় হয়েছে শ্যুটিং। বছর শেষে শীতের মরশুমে টিম-ফেলুদার সঙ্গে জঙ্গল সাফারি আশা করি দারুণভাবেই জমে যাবে।

Latest article