কমিশনে ৫ দফা দাবি পেশ তৃণমূলের, উত্তর না পেলে ফের আসব

Must read

প্রতিবেদন : পাঁচ দফা দাবিতে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সিইও দফতরে গিয়ে বৈঠক সারলেন তৃণমূলের (TMC) পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। বৈঠকে কমিশনের সামনে দলের দাবি তুলে ধরেন তাঁরা। সিইওর তরফে তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সদুত্তর দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সদুত্তর না পেলে তাঁরা আগামী কাল মঙ্গলবার ফের সিইও দফতরে আসবেন। এদিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন, তিন মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা, পুলক রায়, বীরবাহা হাঁসদা ও দুই সাংসদ পার্থ ভৌমিক ও বাপি হালদার। বৈঠকের পর সিইও দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ ভৌমিক বলেন, এসআইআরকে সামনে রেখে কমিশনে যেভাবে বারবার নিয়ম বদলাচ্ছে ও বাংলার মানুষের ন্যায্য ভোটাধিকার নিয়ে হেনস্থা করছে, আমরা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এর প্রতিবাদে সিইও দফতরে এসেছি। আজ আমরা কমিশনের কাছে পাঁচটি দাবি পেশ করেছি। যার ওপর আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিয়েছেন।

পার্থ ভৌমিক বলেন, কমিশন যে অসঙ্গতির অজুহাত দেখিয়ে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ লোকের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, আপনারা সেই তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করুন। যার নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, তার এটা জানার অধিকার আছে— কোথায়, কী কারণে তাঁর নাম বাদ গেল। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও কমিশনের কাছে আগেই এই অনুরোধ জানিয়েছেন। কমিশনের কাছে, আমাদের আবেদন, আপনারা কেন্দ্রীয় সরকারের নয়, স্বশাসিত একটি সংস্থা। আপনাদের কাজ দেশের মানুষের ভোটাধিকার সুরক্ষিত রাখা। অনুগ্রহ করে আপনারা আপনাদের সাংবিধানিক দায়দায়িত্ব ভুলে মানুষকে হেনস্থা করে নিজেদের বিজেপির পার্টি অফিসে পরিণত করবেন না। সিইও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি এই নিয়ে আজই দিল্লিতে জানাবেন। কাল তিনটের মধ্যে তিনি আমাদের এর উত্তর দেবেন।

আরও পড়ুন-বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান

পার্থ ভৌমিক আরও বলেন, আমাদের দ্বিতীয় দাবি, যাঁরা সিনিয়র সিটিজেন, যাঁরা প্রতিবন্ধী, যাঁরা হোমে থাকেন, শারীরিক ভাবে অসমর্থ, যাঁদের বাড়িতে গিয়ে কমিশন ভোট নেয়, তাঁদের কেন হিয়ারিংয়ে ডাকা হবে? কেন এভাবে তাঁদের হেনস্থা করা হবে? আজ হাওড়ায় ৯২ বছরের এক বৃদ্ধকে হিয়ারিংয়ে ডাকা হয়েছে। গতকাল নোয়াপাড়ায় একজন ৯৩ বছরের মহিলাকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। আজ পুরুলিয়ার পাড়া বিধানসভায় শুনানিতে ডাকার আতঙ্কে একজন আত্মহত্যা করেছেন। বাংলার প্রবীণ নাগরিকদের কি এই হেনস্থা প্রাপ্য ছিল? কেন বারবার এ রাজ্যকে টার্গেট করে আমাদের বাসিন্দাদের হেনস্থা করা হচ্ছে? আমাদের প্রবীণ নাগরিকদের কি কোনও মর্যাদা, আত্মসম্মান নেই? তাঁদের শারীরিক অসুবিধার দিকে কেন নজর দেবে না কমিশন।
তৃণমূলের (TMC) তৃতীয় দাবি ছিল, শুনানির সময় বিএলএ-২-দের কেন থাকতে দেওয়া হবে না? পার্থ ভৌমিক বলেন, ভোটের সময় বুথে বুথে আমরা পোলিং এজেন্ট হিসেবে থাকি। তাহলে এখন কেন বিএলএ-২-দের থাকতে দেওয়া হবে না? আমরা শুধু তৃণমূলের কথা বলছি না, আমরা চাই সব দলের বিএলএ-২-দের রাখা হোক শুনানির সময়। আপনারা যখন বাড়ি বাড়ি নাম তুলতে পাঠালেন, তখন তাঁরা ছিল, ভোটের সময়ও তাঁরা থাকে, তাহলে শুনানিতে কেন তাঁদের রাখা হবে না, প্রশ্ন তোলেন পার্থ। আমাদের দাবি কি অন্যায়?

এদিন একই সঙ্গে যাঁরা এখন বিভিন্ন কারণে বাইরে রয়েছেন, তাঁদের ভার্চুয়াল হিয়ারিং করতে হবে। পার্থ বলেন, যাঁরা পড়াশোনার জন্য বাইরে আছেন, যাঁরা চাকরি সূত্রে বাইরে আছেন, যাঁরা চিকিৎসার কারণে বাইরে আছেন, যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের সকলের ভার্চুয়াল শুনানি করতে হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি ভার্চুয়ালি ভাষণ দিতে পারেন, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টে যদি ভার্চুয়াল শুনানি হতে পারে তাহলে এই শুনানি কেন ভার্চুয়ালি হবে না? এরা সবাই দেশের নাগরিক৷ এরা চাকরি বা পড়াশোনার জন্য বাইরে গিয়েছেন, তাই ভোটার লিস্টে তাঁদের নাম থাকবে না? তাঁরা ভারতীয় নাগরিক থাকবেন না? তাঁদের ভোটের অধিকার থাকবে না? এখন হিয়ারিংয়ে আসতে হলে সেই খরচের দায়িত্ব কে নেবে? কমিশন নিক।

তাঁদের শেষ তথা পঞ্চম দাবি ছিল, যাঁরা এখন বাইরে আছেন, শুনানিতে আসতে পারছেন না, তাঁদের জন্য কেন বিকল্প দিন থাকবে না? এ প্রসঙ্গে পার্থ বলেন, সে এখন নেই বলে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হবে কেন? কেন তাঁকে ৬ নং ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। তাঁদের শুনানির জন্য বিকল্প দিন রাখতে হবে।
এছড়াও সিইও-র একটি অর্ডারের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল সাংসদ বলেন, আগে বলা হয়েছিল, ২০০২-এর তালিকায় নাম থাকলে তাঁদের হিয়ারিংয়ে ডাকা হবে না, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তাঁরাও রেহাই পাচ্ছেন না! এর জবাবে তাঁদের সিইও আশ্বাস দিয়েছেন, উনি এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবেন।

Latest article