সোমনাথ বিশ্বাস: “এরা মার্কসের নাম নেয়, কিন্তু তাঁর দর্শনের ধারকাছ দিয়ে যায় না। মার্কসবাদ উদারতার কথা বলে, কিন্তু এই পাগল সিপিএমের আচরণ পাগল তালিবানদের মতো। মানুষ তাই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।” অজন্তা-জাগো বাংলা ইস্যুতে বিস্ফোরক রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা বসুন্ধরা গোস্বামী।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রিয় মুখপত্র “জাগো বাংলা”-এর সম্পাদকীয় পাতায় একটি ধারাবাহিক উত্তর সম্পাদকীয় লিখে সিপিএমের প্রবল রোষের মুখে পড়েছেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের কন্যা অধ্যাপিকা অজন্তা বিশ্বাস। শোনা যাচ্ছে এই অপরাধে অজন্তাকে শো-কজ নোটিশ ধরিয়েছেন আলিমুদ্দিনের ম্যানেজারেরা। তবে মুক্ত মন নিয়ে অজন্তার পাশে দাঁড়ালেন আরেক বাম নেতা-প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আরাএসপি-এর নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর মেয়ে বসুন্ধরা গোস্বামী। শুধু পাশে দাঁড়ানো নয়, বামেদের ভেকধারী সিপিএমকে কার্যত তুলোধোনা করলেন বসুন্ধরা। তৃণমূলেরই মুখপত্রে লিখলেন সেকথা। বসুন্ধরার কথায়, ‘’ইতিহাসের অধ্যাপিকা অজন্তা বিশ্বাস জাগো বাংলা–য় একটি লেখা লিখেছেন। বিষয় ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’। এই লেখাটির পর মিডিয়ায় দেখছি সিপিএম–এর তরফ থেকে অজন্তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে। শোকজ করা হবে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এ সব বলা হচ্ছে। এই সব দেখে আমি বিস্মিত হয়ে যাচ্ছি। অজন্তার লেখাটি আমি পড়েছি। ইতিহাসের ছাত্রী, ইতিহাসের অধ্যাপিকা হিসেবে একটি সুন্দর লেখা লিখেছেন। লেখাটি তথ্যসমৃদ্ধ।’’
আরও পড়ুন: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট আইনি প্রক্রিয়াকেই কলঙ্কিত করেছে, হাইকোর্টে তোপ রাজ্যের
ইতিহাস তুলে ধরে তথ্য সম্বলিত লেখার জন্য এবং রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করার জন্য অনিল কন্যা অজন্তাকেই বাহবা দিয়েছেন ক্ষিতি কন্যা বসুন্ধরা। এক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য, “দলমত নির্বিশেষে সবার ভূমিকার সশ্রদ্ধ উল্লেখ করেছেন। বামপন্থী নেত্রীদের কথাও রয়েছে। আর এটা বাস্তব যে বঙ্গরাজনীতিতে নারীশক্তি নিয়ে লেখা মমতা ব্যানার্জি ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না। অজন্তা এটা লিখে কোনও ভুল করেনি।’’
কার্যত সিপিএমকে আক্রমণ করে বসুন্ধরা গোস্বামী বলেন,
‘‘জাগো বাংলার সম্পাদকীয় বিভাগেও অজন্তার লেখায় বামপন্থীদের অংশ অটুট রেখে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। এ নিয়ে অজন্তাকে সিপিএমের আক্রমণ দেখে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ওরা স্ট্যালিনিস্ট দল।’’
এখানেই শেষ নয়। মামলা করে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে কটাক্ষ করে বসুন্ধরা বলেন, ‘‘বাংলার সিপিএম–এর এই সব আচরণ বহু প্রতিভাকে বামফ্রন্টের স্রোত থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে। ওরা সবেতেই চক্রান্তের গন্ধ দেখে। বদনাম করে। তারপর শাস্তির পথে যায়। এই খেলা মানুষ ধরে ফেলেছেন। প্রকৃত বাম মনোভাবাপন্ন স্বাধীনতচেতা মানুষ কোনও অবস্থায় এটা মানবে না। এই করতে করতে বামফ্রন্টকে শূন্যে নামিয়েছে সিপিএম। তাতেও শিক্ষা হয়নি। এটা ভেবেই আমি বিস্মিত হচ্ছি।”
তবে সিপিএমের সমর্থকদের পক্ষ থেকেও সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনভর ট্রোল করা হয়েছে ক্ষিতি গোস্বামী কন্যা বসুন্ধরাকে। বিশ্বাবাংলা সংবাদ-এর সাংবাদিক সোমনাথ বিশ্বাস এরপর বসুন্ধরা গোস্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে এই রাজ্যের সিপিএম সম্পর্কে তিনি যা যা বললেন তা কার্যত বিস্ফোরক!
আরও পড়ুন: বিজেপির ভাঁওতা ফের প্রকাশ্যে, ভ্যানচালকের পাশে সেই রাজ্যই
“জাগো বাংলা-অজন্তা” বিতর্কে যা বললেন বসুন্ধরা:
(১) সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে সিপিএমের এতো বিদ্রোহ। তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কাজ ভোটে কোনও প্রভাবই ফেলেনি। ভোটের সময় এমন বিদ্রোহ হলে তো কাজে আসতো!
(২) লেখকের লেখনী, ব্যক্তি স্বাধীনতা পাওয়া উচিত বলেই জাগো বাংলাতে অধ্যাপিকা অজন্তা বিশ্বাস-এর সমর্থনে
লিখেছি। আর সিপিএম যেটা করছে, তা স্টালিনিস।
(৩) অজন্তার লেখা একেবারেই ইতিহাসের ব্যাপার। বাংলার জাগরণে মহিলাদের উপস্থিতি। সেই লেখার দলিলে বাংলার তিনবারের মুখমন্ত্রী, অতীতের বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবে না, এটা হতে পারে না। আর অজন্তা ইতিহাসের ছাত্রী। সে তো লিখবেই।
(৪) বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ, যাঁরা বামপন্থী, যাঁরা মার্কসবাদী বিশ্বাসী, মার্কসবাদকে সম্মান করেন, তাঁরা অতীতে সিপিএমের এই হস্তক্ষেপের ভয়ে দলে যোগদান করেনি। সবাই স্বাধীনতা রক্ষা করতে চায়। সবাই স্বাধীনতাকে ভালোবাসে।
(৪) মার্কসবাদের উদারতাকে ভালোবেসে যদি দেখাও, তাহাকে এই রাজ্যের জ্ঞানী অসাধারণ মানুষ সিপিএম করত। কিন্তু এই সিপিএম পাগল তালিবানি কায়দায় কাজ করছে। তাই বামপন্থীরাও তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
(৫) মার্কসবাদ অনেক উদারতার কথা বলে। কিন্তু এই সিপিএম সেই উদারতার ধার কাছ দিয়ে যায় না। বরং, সকলকে দলদাসে পরিণত করছে তারা।
(৬) যে কোনও শিক্ষিত মানুষই মার্কসবাদী বিশ্বাস করে। কিন্তু এ রাজ্যের সিপিএম মনে করে তারাই একমাত্র বামপন্থার ধারক ও বাহক। তাদের এই ধারণা ভুল, সেটা শেষ তিনটি বিধানসভা নির্বাচনের প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
(৭) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত বামপন্থী ইমেজ রয়েছে। তা না হলে তৃতীয়বারের জন্য এত বিপুল ভোটে তিনি জয়লাভ করতেন না। আর তালিবানি সিপিএম ও তাদের পাগলামিকে মানুষ ছুড়ে ফেলে দিত না।
(৮) সিপিএমের পাগলামোকে মানুষ বিধানসভা ভোটে উত্তর দিয়ে দিয়েছে। মানুষ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করবে না, শুধু সিপিএমের সব বলতে হবে এটা কোনও গণতান্ত্রিক দেশ ও সমাজে হতে পারে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো কাজ করলেও তাঁর অবদানের কথা বলা যাবে না, এটা কোন মার্কসবাদ বা মার্কস দর্শন বলেনি।