চিকিৎসক আগে না ওষুধ আগে? গন্ধমাদন পর্বত থাকলেই নিশ্চিন্ত নাকি নির্দিষ্ট মাত্রায় মিলিয়ে-মিশিয়ে ঠিকঠাক ওষুধটি তৈরি করলে তবেই মুশকিল আসান সম্ভব? এই ওষুধ তৈরির কাজটিই করেন ফার্মাসিউটিক্যাল কর্মী-বিশেষজ্ঞরা। ভাগবত বা সুশ্রুতের দেশ আমাদের ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি, অসাধ্যসাধনের কাজ আজও হয়ে চলেছে। চিকিৎসার পদ্ধতিগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে চিকিৎসার জন্য ওষুধের মানবৃদ্ধি, মারণ রোগের উন্নতমানের ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রেও আমাদের দেশ অনেকাংশে এগিয়ে। যেটা কিনা এখনকার বাজারে ফার্মাসিউটিক্যাল নিয়ে পড়াশুনা করা বা পরবর্তীকালে এই বিষয়ে নিয়ে গবেষণা করার ঝোঁক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই ডাক্তারি পড়ার প্রতি আকর্ষণ ছোটবেলা থেকেই তৈরি হয় ছাত্র-ছাত্রীছাত্রীদের মধ্যে। সেক্ষেত্রে মেধা বা অন্যান্য সুযোগের অভাবে ছাত্রছাত্রীরা যদি সরাসরি চিকিৎসা জগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ডাক্তারির বাইরে গিয়ে ফার্মাসিউটিক্যাল নিয়ে পড়াশুনা করে, তাহলেও ভাল কেরিয়ার গড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। বিদেশের বাজারে আমাদের দেশের উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানির বা বাজারজাত করার মাত্রা গত কয়েক দশকে বেশ বেড়ে গেছে। নানাধরনের নিত্য-নতুন রোগের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য অ্যালোপ্যাথিক থেকে আয়ুর্বেদিক সমস্ত ক্ষেত্রেই নতুন-নতুন ওষুধের উৎপাদন এবং তার বিপণন সমস্ত কিছুই এই পেশায় কাজের সুযোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন-শেষ ষোলোয় বার্সা-রিয়াল
ফার্মাসিউটিক্যাল কী?
চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের উন্নতির হাত ধরে আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদন এবং বিপণনের মাত্রা আগের তুলনায় বেশি। দেশি-বিদেশি বহু কোম্পানি ভারতের মতো বাজারে ভেষজ সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিচ্ছে। আর এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য দরকার উপযুক্ত উৎপাদন-প্রাক্ উৎপাদন ব্যবস্থা। মানুষের স্বাস্থ্য ও রোগ নিরাময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে এই শিল্প ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার জন্য পেশাগত দিক থেকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল কাজ রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল পেশাদারদের। ফার্মাকোলজি বা ওষুধ-সংক্রান্ত বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনার পর ওষুধ উৎপাদন ও প্রয়োগ সংক্রান্ত কাজ বা ওষুধ নিয়ে গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন-ঘুরিয়ে জোকারকেই দুষলেন নাদাল
কীরকম যোগ্যতা লাগে?
বিজ্ঞান শাখায়, মূলত ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, অঙ্ক এবং বায়োলজি নিয়ে পড়াশুনা করে থাকলে ফার্মাসিউটিক্যাল নিয়ে পড়াশুনা করা যায়। পরবর্তীকালে স্নাতকোত্তর স্তর পেরিয়ে এই যোগ্যতায় পিএইচডি হয়। তবে ডিগ্রির বাইরেও চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং ভেষজ বিষয়ে আলাদা আগ্রহ থাকা দরকার। রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে ওষুধের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকার কারণে দায়িত্বশীলতা এবং ধৈর্যশক্তি নিয়ে কাজ করার প্রবণতা থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশায় যুক্ত হতে চাইলে অসাধারণ কমিউনিকেশন স্কিল এবং কোনও জিনিস সম্পর্কে বোঝাবার, রাজি করানোর ক্ষমতা থাকতে হবে। স্বভাবতই কমিউনিকেশনের সঙ্গে-সঙ্গে ব্যবসায়িক দক্ষতা থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি।
কী ধরনের কোর্স হয়?
ফার্মাসি নিয়ে ২ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স ডিফার্মা রয়েছে। গ্র্যাজুেয়শন স্তরে বিফার্মা এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্তরে ২ বছরের এমফার্মা। বিষয়টি নিয়ে গবেষণার স্তরে যেতে চাইলে পিএইচডিও করা যেতে পারে। উচ্চমাধ্যমিকের পর চার বছরের বিফার্মা নিয়ে পড়াশুনা করে স্নাতকোত্তর স্তরে ফার্মাসিউটিক্যাল নিয়ে স্পেশ্যালাইজ করা যেতে পারে। কিছু-কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই বিষয় নিয়ে সার্টিফিকেট কোর্সও করানো হয়ে থাকে। ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজিও অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন- এন্ট্রি ভিসা বাতিল, কোর্টে জকোভিচ
কোথায় পড়তে হবে?
কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছরের বিফার্মা, ২ বছরের এমফার্মা এবং এই বিষয় নিয়ে পিএইচডিও করা যায়। সরকারি তরফে জেলার ফার্মাসি ইনস্টিটিউটগুলিতেও কিছু-কিছু পলিটেকনিকেও ফার্মাসি নিয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। এছাড়াও রয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফার্মাসিটিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, যেখানে মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি, ন্যাচারাল প্রোডাক্টস এবং ফার্মাকোইনফরম্যাটিক্স নিয়ে ২ বছরের পিজি কোর্স করানো হয়ে থাকে। এ ছাড়াও রাজ্যের একাধিক কলেজে বা প্রতিষ্ঠানে এই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করা যেতে পারে। রাজ্যের বাইরে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, অন্ধ্রপ্রদেশ, বোম্বে কলেজ অব ফার্মাসি, মহারাষ্ট্র এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আরও পড়ুন-ঝুলনের বায়োপিকের টিজার প্রকাশ করলেন অনুষ্কা
কাজ কীরকম?
একজন ফার্মাসি প্রফেশনালকে মেডিসিন, অয়েন্টমেন্ট, পাউডার, পিল, ট্যাবলেট, ইঞ্জেকশন তৈরি, মিশ্রণ বা প্রয়োগ বা উন্নতকরণের কাজ করতে হয়। ফার্মাসির সঙ্গে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং অ্যানালিসিস অ্যান্ড টেস্টিং এই তিন ধরনের ভাগ রয়েছে। শুধুমাত্র রিসার্চ বা ডেভেলপমেন্ট-এর মাধ্যমে নতুন মেডিসিন উৎপাদনই নয়, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্সের বিষয়ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করার পর সরকারি মেডিসিনাল ল্যাবেরটরি ছাড়াও চিকিৎসকের কম্পাউন্ডার হিসাবে কাজ করার সুযোগ থাকছে। স্টেট ফার্মাসি কাউন্সিলের অনুমোদন নিতে পারলে নিজের ফার্মাসি বা ফার্মাসি স্টক অ্যান্ড ডেলিভারি ব্যবসা বা দোকানও খোলা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবেও কাজের সুযোগ রয়েছে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় এবং বড় হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে ভালো যোগাযোগ করতে পারলে বড় ফার্মাসিকিউটিক্যাল/ ড্রাগস কোম্পানিগুলিতে ভাল পদে কাজের সুযোগ রয়েছে। ফার্মাসি শিল্পে নতুন ড্রাগ বা মেডিসিনের ডেভেলপমেন্ট, ফর্মুলেশন, প্রোডাকশন বা মার্কের্টিং এরকম বিভিন্ন বিভাগে কাজ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হওয়া বা গবেষণার কাজে যুক্ত হওয়ার পথ তো খোলাই।
পেশার চাহিদা কেমন?
আরও পড়ুন-
ভারতের মতো জনবহুল দেশে যেভাবে হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ক্লিনিক, মেডিসিন শপ এসবের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ফার্মাসির মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে এক বিশাল কাজের জগৎ তৈরি হয়েছে। সেন্ট্রাল ড্রাগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, লখনউ, ন্যাশনাল কেমিক্যাল ল্যাবেরটরি ইত্যাদি সংস্থাগুলি যেমন নতুন কর্মী নিয়োগ করে থাকে, তেমনিই বহু দেশি-বিদেশি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে যেখানে ফার্মাসিউটিক্যাল ডিগ্রিধারীদের কাজের সুযোগ ব্যাপক। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের হেলথ প্রোটেকশন ব্র্যাঞ্চ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতি এরকম বিভাগগুলিতেও নিয়োগ হয়ে থাকে। খাদ্য ও প্রসাধনী শিল্পেও ফার্মাসি ডিগ্রিধারীরা কাজের সুযোগ পান।