১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সকাল সাড়ে দশটায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ডাই তোয়া গোঁকিজো তে শপথ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী সুভাষচন্দ্র বোস (Netaji Subhas Chandra Bose)। পরাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে শপথ নিলেন আরও ১৫ মন্ত্রী। ঠিক চার বছর পর ১৯৪৭ সাল। ১৫ অগাস্ট। দেশ স্বাধীন। সময় আর রাজনীতির বেড়াজালে অখন্ড ও পরাধীন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেতাজিকে বিস্মৃতির অতলে পাঠিয়ে দেওয়ার ‘চক্রান্ত’ হয়েছিল। অথচ জাপান, চিন, জার্মানি, ইতালির মতো শক্তিধর দেশ লগুলি নেতাজিকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রনেতা হিসেবে সেই সময় স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী সুভাষচন্দ্র বোসকে ইতিহাসের পাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এবার সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকেই সামনে তুলে ধরার ইঙ্গিত দিলেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নেতাজির (Netaji Subhas Chandra Bose) সেই ইতিহাসকে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে যাতে জায়গা করে দেওয়া যায়, আগামী প্রজন্ম যাতে নেতাজির সঠিক ইতিহাস মূল্যায়ন করতে পারে, তার জন্য সিলেবাস কমিটিকে সুপারিশ করলেন তিনি। এবং আজ, সোমবার রাজ্য শিক্ষাদপ্তর বিকাশ ভবনে যখন সাংবাদিক বৈঠকে এমন বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী, তখন তাঁর পাশেই ছিলেন সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “অখন্ড ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বুকে দাঁড়িয়ে তিনি মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। এ এক গর্বের ইতিহাস। আমরা সিলেবাস কমিটিকে বলবো, সেই সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যানও এই সাংবাদিক বৈঠকে রয়েছেন, তাঁরা যেন নেতাজির এই ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করে বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে যাতে আনা যায় সে ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করেন।”
নেতাজির (Netaji Subhas Chandra Bose) সেই হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে দেওয়া ইতিহাস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নেতাজি অন্যতম দাবিদার ছিলেন। অনেক ত্যাগ করে দেশ থেকে বেরিয়ে গিয়ে যেভাবে অহিংস এবং সহিংস আন্দোলনের মেলবন্ধনে তিনি রাজনীতি করেছিলেন তা স্মরণীয়। সে সময় একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। আর এই সময় দাঁড়িয়ে যখন আরেকজন বাঙালির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে, তখন কোনও প্রাদেশিকতা বা আঞ্চলিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সিলেবাস কমিটিকে বলতে চাই, নেতাজির সেই ইতিহাস যদি পাঠ্যসূচিতে আনা যায় তা বিবেচনা করা হোক। ভারতে এখনও সংসদীয় গণতন্ত্র টিকে রয়েছে। সেখানে এমন স্মৃতিকে যাতে সামনে তুলে ধরা যায়, সিলেবাস কমিটি যেন সেটা আন্তরিকতার সঙ্গে দেখে।”
প্রশ্ন ওঠে, নেতাজি তো শুধু বাংলা বা ভারতের নয়, তিনি তো আন্তর্জাতিকভাবেও সমাদৃত। তাহলে কি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রকেও সর্বভারতীয়স্তরে যাতে সিলেবাসে নেতাজির সেই হারানো ইতিহাস তুলে ধরা হয় তার জন্য সুপারিশ করা হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। নেতাজির প্রতি কেন্দ্রের উদাসীনতাকে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজি জন্মজয়ন্তীতে কীভাবে বাংলার ট্যাবলোকে কেন্দ্র করে তাঁকে অবমাননা, অবহেলিত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দেওয়ার পর তারা একটু নড়েচড়ে বসে একটা মূর্তি বসাচ্ছে। কিন্তু মূর্তি বসলেই কী সব শেষ হয়ে যায়? নেতাজির মত মনীষীকে স্মরণ করতে হয়, তাঁর কার্যক্রম তুলে ধরতে হয়। তাঁকে সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা জানাতে হয়। যদি বিন্দুমাত্র নেতাজির প্রতি কেন্দ্রের আবেগ থাকতো, তাহলে আমাদের চিঠি লিখে পাঠ্যসূচিতে নেতাজির ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলার দরকার হয় না, তারা নিজেরাই এই উদ্যোগ নিতে পারত। আসলে নেতাজির প্রতি এদের কোনও আবেগ-সম্মান-শ্রদ্ধা কিছুই নেই।”