রবিবার কলকাতা থেকে ত্রিপুরা গিয়ে টানা ৫ ঘণ্টা খোয়াই থানায় বসে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া কর্মীদের মুক্ত করে কলকাতা ফিরছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের যুক্তিজালে প্যাঁচে পড়ে পুলিশ কার্যত স্বীকার করতে বাধ্য হয় মিথ্যা মামলার অভিযোগ। শনিবার বিজেপির গুণ্ডারা রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালীন আক্রমণ করে সুদীপ, জয়া, দেবাংশু সহ তৃণমূল নেতা- কর্মীদের। আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টে আক্রান্তদের আটকে রাখা হয়। এরপর তাদের পুলিশ এসকর্ট করে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে রাতের অন্ধকারে খোয়াইতে নিয়ে গিয়ে জমায়েতের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ । মহামারি আইনকে ঢাল করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় তৃণমূল কর্মীদের। দিনের শেষে পুলিশের মিথ্যাচারের পর্দাফাঁস হল। খোয়াই আদালতে জামিন পেলেন ধৃত সব তৃণমূল কর্মী। ত্রিপুরা পুলিশ মোট তিনটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে তেলিয়ামুড়া ও আমবাসার মামলায় জামিন হয়। আমবাসার দ্বিতীয় মামলায় পুলিশের শোন অ্যারেস্ট অনুমোদন করেনি আদালত। এটির শুনানি পরে হবে। তবে ধৃতরা সবাই ছাড়া পাচ্ছে। জামিন পাওয়ার পর থানা থেকে আদালতে আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতে যান ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ, দোলা সেন। আদালতে আসার পথে বিজেপির গুণ্ডারা ভাঙচুর চালায় সমীর চক্রবর্তী ও সুবল ভৌমিকের গাড়িতে।
আরও পড়ুন-ইস্যু ত্রিপুরা : তৃণমূল কংগ্রেস সোমে ‘ঝড়’ তুলবে সংসদে
তৃণমূল নেতৃত্ব এদিন বারবার অভিযোগ তোলেন, জঙ্গলরাজ চলছে ত্রিপুরায়। বিজেপির গুণ্ডারা দফায় দফায় আক্রমণ করেও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর যাঁরা বিজেপির হামলায় আক্রান্ত হলেন তাঁদেরই গ্রেফতার করছে ত্রিপুরার পুলিশ। শনিবার রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে গিয়ে পুলিশের সামনে সুদীপ রাহা, জয়া দত্ত, দেবাংশু ভট্টাচার্য সহ ত্রিপুরায় দলের স্থানীয় নেতৃত্ব আক্রান্ত হন। এরপর উল্টে আক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রেসের ১৪ জন নেতা-কর্মীকেই মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। আক্রান্ত যুব নেতাদের পাশে দাঁড়াতেই এদিন কলকাতা থেকে ত্রিপুরা পৌঁছে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাংসদ দোলা সেন, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। শনিবার থেকে সেখানে রয়েছেন দলীয় মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী। ত্রিপুরার পরিস্থিতি দেখে এদিন ফের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। তাঁরা জানান, গোটা থানা ঘিরে ফেলেছিল বিজেপির গুন্ডাবাহিনী। প্রায় আড়াইশোর বেশি মানুষের জমায়েত হয়েছিল থানার বাইরে। পুলিশকে সবটা জানানো হলেও পুলিশ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে ছিল। এদিকে ত্রিপুরা কাণ্ডের রেশ পৌঁছেছে দিল্লি দরবারেও। ত্রিপুরায় অগণতান্ত্রিকভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার সংসদে বিক্ষোভ দেখাবেন দলের সাংসদরা। সংসদে গান্ধীমূর্তির সামনে ত্রিপুরা ইস্যুতে ধরনায় বসবে তৃণমূল কংগ্রেস।
রবিবার ত্রিপুরা পৌঁছেই বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া তোপ দাগেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিন্দা করেন বিপ্লব দেব সরকারের। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় গণতন্ত্র নেই। যারা এঁদের অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ করছে তাদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় গণতন্ত্রের কী অবস্থা দেশের মানুষ তা দেখছে। ত্রিপুরায় পা দিলেই জেলে ভরা হচ্ছে। কিন্তু এসব করে লাভ হবে না।
এদিন খোয়াই পৌঁছনোর পর গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। এরপর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুণাল ঘোষ বলেন, সারারাত খেতে দেওয়া হয়নি ছেলেগুলোকে। সকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আমরা এখানে আসার পর গোটা থানা ঘিরে ফেলেছে বিজেপি গুন্ডাবাহিনী। পুলিশকর্মীদের বিষয়টি জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ত্রিপুরার পরিস্থিতি নিয়ে এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, এখানে আইনের শাসন নেই। ত্রিপুরার স্থানীয় সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে আটকে দেওয়া হয়েছে। বাইরে বিজেপির গুন্ডা বাহিনীরা জমায়েত করে হুমকি দিচ্ছে। পুলিশকে বারবার বলা সত্ত্বেও কোনওরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
পাশাপাশি দোলা সেন বলেন, ত্রিপুরায় আইনের শাসন নেই। যে ছেলেগুলো মার খেলো তাদেরকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পর তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে যাতে তাদের জেলে আটকে রাখা যায়।