আগামিকাল, ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) সাংগঠনিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। যাকে কেন্দ্র করে সাজসাজ রব নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। খুব তাৎপর্যপূর্ণভাবে দলের এই সাংগঠনিক নির্বাচন দেখতে রাজ্যের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক নির্বাচন কেমন ভাবে হয় সেটা দেখার জন্যই এই আমন্ত্রণ বলে জানিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এ প্রসঙ্গে পার্থবাবু জানিয়েছেন, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রজগৎ, বুদ্ধিজীবী সহ বিভিন্ন মিডিয়াকে ভোট দেখা এবং পর্যবেক্ষক হিসাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই বিশেষ পর্যবেক্ষকের তালিকা প্রকাশও করা হয়েছে। একইসঙ্গে রিটার্নিং অফিসার পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। সিপিএমের বিমান বসু, আরএসপি-এর মনোজ ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, সিপিআই (এম এল)-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, এসইউসিআই-এর চন্ডী ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের সৈয়দ হাফিজ সৈরানিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদিও নিজেদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ও অনেকে রাজ্যের বাইরে থাকার কারণে তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচন দেখতে হাজির থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তবে সকলেই আমন্ত্রণের প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এটাও স্পষ্ট করেছেন, বিজেপির কোনও প্রতিনিধিকে তাঁরা আমন্ত্রণ জানানি।
আরও পড়ুন – এবার টিএমসিপি পা রাখতে চলেছে প্রেসিডেন্সিতে
তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) সাংগঠনিক নির্বাচনে সভাপতি পদে মনোনয়নের জন্য সময় বরাদ্দ করা হয়েছে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এরপর মনোনয়ন স্কুটিনি হবে দুপুর ১২:৩০ মিনিট থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। যদি কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন সেক্ষেত্রে দুপুর ১.০৫ মিনিট থেকে ২টো পর্যন্ত তা করা যাবে। যদি দেখা যায় একাধিক নামে মনোনয়ন জমা পড়েছে এবং তা সময়মতো প্রত্যাহার হয়নি, সেক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ২.১৫ মিনিট থেকে ৩.৩০মিনিট পর্যন্ত। এবং গণনা শুরু হবে বিকেল চারটে। তারপর ফলাফল ঘোষিত হবে। আর এমনটি না হলে এই প্রক্রিয়া আরও সংক্ষিপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এই সাংগঠনিক নির্বাচনে সবমিলিয়ে মোট ১৫০০ জন ভোটার উপস্থিত থাকবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেক্ষেত্রে জেলায় জেলায় খবর পাঠানো হয়েছে। এবং সকলকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকার আবেদন করা হয়েছে। দলীয় বিধায়ক, সাংসদ, প্রাক্তন সাংসদ, জেলা কোর কমিটির মেম্বার, রাজ্য কমিটির পদাধিকাররা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ভোট দিতে পারবেন। আর শেষ পর্যন্ত যদি ভোট না হয় সেক্ষেত্রে তাঁরা পর্যবেক্ষক হিসেবে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাক্ষী থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে গোয়া, বিহার, পাঞ্জাব অসম, হরিয়ানা, দিল্লি, ত্রিপুরা, মেঘালয় প্রভৃতি রাজ্য থেকেও পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এছাড়াও মহামারি আবহে এই সাংগঠনিক নির্বাচনে যাতে কোনওভাবেই কোভিডবিধি লঙ্ঘিত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কোভিডবিধির কারণে মঞ্চসজ্জাতেও বদল আনা হয়েছে। মঞ্চের আকার বিরাট হলেও, তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পিছনে দলীয় নেত্রীর যে ছবিটি দিয়ে সাংগঠনিক নির্বাচনে বিশাল হোডিং লাগানো হত, তার কলেবরও ছোট করে দেওয়া হয়েছে এ বার। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ১০ হাজার মানুষের সমাগম করা যায়। তাই দলীয় প্রতিনিধিদের বসার ক্ষেত্রে সহজেই সরকারি কোভিডবিধি মেনে চলা যাবে বলে মনে করছে তৃণমূল। মঞ্চের সামনেই আগত ১৫০০ প্রতিনিধিদের জন্য চেয়ারে বসার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। সেখান একটি চেয়ারের সঙ্গে আরও একটি চেয়ারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে সরকার-নির্দিষ্ট বিধি মেনেই। সঙ্গে প্রতিনিধিদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।