স্বাধীনতার কেটে গিয়েছে অনেক বছর। পটপরিবর্তন হয়েছে অনেক রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু এত বছর পরে এই প্রথম রাজ্য বিধানসভায় কোনও সদস্য নেই সিপিএম তথা বামেদের। বামেদের এই ভরাডুবির কারণ খুঁজতে গিয়ে পুরোপুরি বড় শরিক সিপিএম-কে দায়ী করেছেন দলেরই প্ৰাক্তন নেতা তথা পিডিএস নেতা সমীর পুততুন্ড। এই নিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত বোমা ফাটালেন। নিজে বাম নেতা হয়ে তার এই বক্তব্য চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।
বামেদের ভরাডুবি ও সিপিএম প্রসঙ্গে যা যা বললেন সমীর পুততুন্ড-
(১) সিপিএমের জন্যই বামেদের এই ভরাডুবি। এর দায় সম্পূর্ণ ভাবে তাদের নেতাদের।
(২) ১৯৯৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সিপিএম ঠিক করতে পারল না, এই দেশ বা পশ্চিমবঙ্গে তাদের প্রকৃত ও প্রথম রাজনৈতিক শত্রুকে।
(৩) সিপিএমের জন্যই সব বামপন্থী দলের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে।
(৪) সিপিএম যদি তখন জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে দিত, তাহলে আজ তাদের এই দিন দেখতে হত না।
(৫) জ্যোতি বসু সেদিন প্রধানমন্ত্রী হলে সারা পৃথিবীর কাছে এই বার্তা যেত, যে বামপন্থীরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের মত দেশের শীর্ষে রয়েছে।
(৬) আজকের সিপিএমকে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা সেদিন বিরোধিতা করেছিলেন। প্রয়াত অনিল বিশ্বাসও বিরোধিতা করেছিলেন।
(৭) আমি, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেব, হারকৃষণ সিং সুরজিৎ সেদিন সিপিএমের দলের ভিতর সংখ্যালঘু ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হোন। তাহলে আজ সিপিএম ও বামেদের এমন দিন দেখতে হত না।
(৮) সিপিএমের আজকে যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা করে লাফাচ্ছেন, সেদিন যদি জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে দিতেন, তাহলে হয়তো তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মই হতো না।
(৯) ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত বিজেপি সারা দেশে সংগঠন বাড়ানোর জন্য যা যা করছে, জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী থাকলে এসব হত না।
(১০) গণশক্তিতে লেখা হচ্ছে আরএসএস-এর গর্ভ থেকে নাকি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম। আমি সিপিএমের এক নেতাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আরএসএসের গর্ভ থেকে যে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম এমন কথা কি কোথাও কোনওদিন পার্টিতে আলোচনা হয়েছে? আর যদি সেটা আলোচনা করে না থাকে, তাহলে এমন বলা হচ্ছে কেন?
(১১) বিজেপি ও তৃণমূল থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু দুই শত্রু যদি একসঙ্গে সামনে এসে দাঁড়ায়, তাহলে কাদেরকে প্রথম মোকাবিলা করতে হবে, সেটা কি ঠিক হয়েছে সিপিমের মধ্যে?
(১২) তৃণমূল কংগ্রেসকে জব্দ করতে গিয়ে এমন একটা জোট করলো, যে মুসলিম ভোট তো আগেই বামপন্থীদের থেকে মুখ সরিয়ে ছিল, এবার হিন্দু ভোটও চলে গেল। আমরা শেষ ৭ বছর ধরে একসঙ্গে ছিলাম, কিন্তু জোট করার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করল না সিপিএম।
(১৩) সিপিএমের এক নেতার সঙ্গে অন্য নেতার কথার মিল নেই। একজন পলিটব্যুরো নেতা এক কথা বলছেন, তো অন্য এক পলিটব্যুরো নেতা ভিন্ন সুরে কথা বলছেন।
(১৪) গণশক্তিতে লেখা হচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নাকি আরএসএসের অন্তরাত্মা রয়েছে। কার অন্তরাত্মা কোথায় আছে সেটা সিপিএম কীভাবে জানল? সিপিএমের অন্তরাত্মা তো বিজেপির সঙ্গে আছে, এমন প্রশ্নও মানুষ তোলে।
(১৫) বিজেপির ১৮ জন সাংসদ রয়েছে রাজ্যে। যাতে পরের লোকসভা নির্বাচনে আর একটিও না পায়,সেটা নিয়ে আলোচনা না করে বিজেমূল বিজেমূল করছে। সব অবিজেপি দল আসন পাক, কিন্তু বিজেপি যেন না পায়। সেটাই এখন সিপিএমের এজেন্ডা হওয়া উচিত।
(১৬) বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ সিপিএমের এখনকার সব নেতাদের আমি চিনি। ওরা আমার প্রায় সমবয়সী। একসঙ্গে
দীর্ঘ রাজনীতি করেছি। কে কেমন রাজনীতি জানে, আমার ভালো করে জানা আছে।
(১৭) এখনও সিপিএম বলে যাচ্ছে, অতীতে যা করেছে, যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে, সবই নাকি ঠিক ছিল। আমি ওদের প্রশ্ন করি, সিঙ্গুর ঠিক? UPA থেকে সমর্থন তোলা ঠিক? সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করা ঠিক? কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে বলা উচিত ছিল বলায় সাইফুদ্দিন চৌধুরীকে বহিষ্কার করা ঠিক?
(১৮) আসলে এখন সিপিএমের মধ্যে এমন কিছু লোকের জমায়েত হয়ে আছে, যাঁরা শেষ ২৫ বছর ধরে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানই ঠিক করতে পারেনি। শূন্য হয়ে যাওয়ার পরও ওদের শিক্ষা হবে না।