সংবাদদাতা, কাঁথি : কাঁথিতে চার দশকের অধিকারী-জমানার অবসান ঘটল। অধিকারহীন অধিকারীগড়। জ্যোতি বসু ও রাজীব গান্ধীর মতো ব্যক্তিত্বরা এসেও, কাঁথি পুরসভা থেকে অধিকারীদের হঠাতে পারেনি, এতদিন প্রায় প্রতিটি সভাতে একথা সগর্ব বলতেন বিরোধী দলনেতা। সেই গর্বের বেলুন ফেটে গেল। ২১টি ওয়ার্ডের ১৭টিতে জিতে, কাঁথি পুরসভায় তৃণমূলের আধিপত্য বজায় রাখলেন মন্ত্রী তথা কাঁথির ভূমিপুত্র অখিল গিরি ও সুপ্রকাশ গিরিরা। শুধু পুরসভা হাতছাড়া নয়, অধিকারীদের ‘শান্তিকুঞ্জ’ যে ওয়ার্ডে, সেই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডেই জিততে পারেনি বিজেপি। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী তনুশ্রী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য ২২৮ ভোটে জয়ী। ‘শান্তিকুঞ্জ’ সুনসান। রাজত্ব হারিয়ে, মেজাজ হারালেন কর্তাবাবু শিশির অধিকারী। সাংবাদিকরা ফোন করলেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। অথচ এখনও তিনি তৃণমূল (Trinamool Congress) সাংসদ। আগের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছোট অধিকারী সৌমেন্দুকে তো প্রার্থীই করেনি পদ্মশিবির। তিনিও ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর দাদা বিরোধী দলনেতা হলেও, কাঁথিতে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন। এত কিছুর পরেও কাঁথিতে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। উত্তর কাঁথির বর্তমান বিজেপি বিধায়ক সুমিতা সিংহকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৭৭ ভোটে হারিয়েছেন তৃণমূলের রিনা দাস। সুমিতার পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
আরও পড়ুন – নির্বাচনে তারকাদের জয়জয়কার
দুবারের প্রাক্তন বিধায়ক, বিজেপি প্রার্থী বনশ্রী মাইতিও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৫৪ ভোটে পরাজিত, তৃণমূলের (Trinamool Congress) রিনা দাস মহাপাত্রের কাছে। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সম্পাদক নবীন প্রধানকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৩৬ ভোটে হারিয়েছেন বর্ষীয়ান তৃণমূলের সুবল মান্না। পরপর সাতবার জিতে রেকর্ড গড়লেন সুবল। সর্বোপরি মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির পুত্র সুপ্রকাশ গিরিকে আটকানোর বহু চেষ্টা করেছিলেন অধিকারীরা। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরিকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেছিলেন বলেও অভিযোগ। এত কিছু করেও সুপ্রকাশের জয় ঠেকাতে পারেননি। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫২ ভোটে জিতেছেন সুপ্রকাশ। চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে তিনি। জেতার পর সুপ্রকাশ জানান, ‘এই ফলের মাধ্যমে কাঁথিতে অধিকারীদের রাজনৈতিক সমাধি হল। কাঁথির মানুষকে তাই কৃতজ্ঞতা ও প্রণাম জানাই।’ এই পুরসভার ফল নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। অধিকারী পরিবার এই শোচনীয় পরাজয় কীভাবে মেনে নেয় সেটাই দেখার। ফল বেরনোর পর শান্তিকুঞ্জের দরজা ছিল বন্ধ। বাড়ির লোকজনকে বাইরে কোথাও দেখা যায়নি। এবার অধিকারীরা কোথায় মুখ লুকোয় সেটাই দেখার।