সংবাদদাতা, কাটোয়া : জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দেওয়া শেষ। আত্মীয়দের ইচ্ছাপূরণে বিয়ের পিঁড়িতে না বসে আরও পড়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের অভাব ঘোচাতে চায় কেতুগ্রাম বিল্বেশ্বর পঞ্চায়েতের কিশোরী ফারসিনা খাতুন। অজয় উপচানো বন্যার জলে নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখে। আগ্রাসী অজয়ের স্রোতে হারিয়ে যায় বই-খাতা, কলম-কম্পাস, পঠনপাঠনের যাবতীয় সরঞ্জাম। কিন্তু সব হারালেও হারায়নি মনের জোর। মা-বাবার সঙ্গে ভিটে ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল কাটোয়া-কীর্ণাহার রাজ্য সড়কে দাঁড়ানো লরিতে। আর পাঁচটা বানভাসি পরিবারের সঙ্গে পঞ্চায়েতের পাঠানো লাবড়া খেয়ে মাসখানেক কাটাতে হয় সদ্য মাধ্যমিক দেওয়া ফারসিনাকে। বন্যা বিদায় নিতেই বন্ধু-শিক্ষক-আত্মীয়দের বদান্যতায় বইপত্র, নোটস জোগাড় করে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি শুরু করে বিল্বেশ্বর বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারসিনা।
আরও পড়ুন-নেশামুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে এল গ্রামের নারীশক্তি
‘বই খুললেই চোখের সামনে ভেসে উঠত ভয়ঙ্কর রাতের স্মৃতি।’ বলার সময় ফারসিনার চোখে জল। বাবা লালিম শেখ সবজি বিক্রি করে কোনওরকমে সংসার চালান। প্রতিবেশীরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সব তো ভেসে গেল। মেয়েকে নতুন করে আর পড়তে পাঠানোর দরকার নেই। খরচ টানতে পারবে না। বরং একটা পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দাও। যদিও সে পরামর্শ কানে তোলেননি লালিম। মেয়েও যে তা-ই চায়। বানের জল সরে ভিটের মাটি শুকোতেই ছিটেবেড়ার ঘর তুলেছেন তিনি। পলকা সে ঘরেই পোক্ত হয়েছে জেদি মেয়ের স্বপ্ন। মা সোহাগী বিবি ঘুম ভাঙলেই দেখতেন অনেক রাতেও মেয়ে পড়ছে। শুয়ে পড়তে বললে ফারসিনা জবাব দিত, ‘না পড়লে অন্যদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারব না আম্মি। বানের সময় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি।’ মেয়ের দাঁত-চাপা জেদি মুখ আজ তাঁর চোখেও আলো ছড়ায়।