তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েই বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন সাংসদ অর্জুন সিং। “ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম। বাংলায় এসি ঘরে বসে ফেসবুকে রাজনীতি করা যায় না, ময়দানে নেমে লড়াই করতে হয়”। পুরনো দলে ফিরেই বঙ্গ বিজেপিকে (BJP) তুলোধনা করলেন অর্জুন সিং (Arjun Singh)। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবাসরীয় বিকেলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে (TMC) যোগ দেন বারাকপুরের সাংসদ। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পাট নিয়ে বাংলাকে বঞ্চিত করছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। মাত্র ২৫ শতাংশ পাওয়া গিয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশের আদায় করতে হলে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মতো লড়াকু নেত্রীর প্রয়োজন।
পাটের দামের উর্ধ্বসীমা থেকে শুরু করে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব- সব বিষয় নিয়েই দলের (BJP) বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বারাকপুরের নেতা অর্জুন সিং (Arjun Singh)। বিজেপির আরেক নেতা অনুপম হাজরা সে সময় বলেছিলেন, অর্জুনের মতো সংগঠকের কথা দলের গুরুত্ব দিয়ে শোনা উচিত। অর্জুনের রাগ কমাতে বেশ কয়েকবার তাঁকে দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। কিন্তু কথায় চিড়ে ভেজে নিন। শেষ পর্যন্ত ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ফের জোড়া ফুলে ফিরে এলেন অর্জুন। সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, অসুস্থ থাকায় তাঁর ছেলে পবন সিং এদিন আসতে পারেননি। কিন্তু তিনিও তৃণমূলে ফিরে আসবেন।
অর্জুনের ফুল বদলে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে তাহল, কেন এই বদল? ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে গিয়ে ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন অর্জুন সিং। তাহলে সমস্যা কোথায়? অর্জুন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলার ক্ষতি করছে বিজেপি। রাজ্যের উন্নতিতে তাদের সামান্য আগ্রহ নেই। বারাকপুরের সাংসদের মতে, দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলার রাজনীতির ধরন আলাদা। এখানে মাঠে-ময়দানে নেমে মানুষের পাশে থেকে লড়াই করতে হয়। সেই ভাবে লড়াই করেই তারা সিপিএমকে হটিয়েছিলেন বলেও জানান অর্জুন। তারপরেই পুরনো দল বিজেপিকে কটাক্ষ করে অর্জুনের মন্তব্য, এসি ঘরে বসে ফেসবুকে রাজনীতি বাংলায় চলে না। সেভাবে অন্য রাজ্যে জেতা যায়, বাংলার মাটিতে আঁচড় কাটা যায় না।
আরও পড়ুন: অর্জুনকে অভ্যর্থনা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের, শ্যামনগরে সভা ৩০-শে
তাহলে কি তিনি সাংসদ পদে ইস্তফা দেবেন? এই প্রশ্নের সাফ জবাব অর্জুনের। অধিকারীদের নাম না করে তিনি বলেন, তৃণমূলের দুই সাংসদ পদ না ছেড়েও বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে মিটিং করছেন। তাদের হয়ে প্রচার করছেন। তাঁরা যেদিন ইস্তফা দেবেন, তার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই অর্জুন সিং ইস্তফা দেবেন বলে জানিয়ে দেন। অর্জুনের মতে, আগামী দিনে বড় লড়াই আসছে। আর সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্জুন যে ২০২৪- এর লোকসভা নির্বাচনের কথা বলেছেন এই মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট। বিজেপিতে থেকে অর্জুনের অভিযোগ ছিল, ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার হয়ে আছেন তিনি। এবার তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে কী দায়িত্বে রাখে সেটাই দেখার।