সংবাদদাতা, ভগবানপুর : খোলা আকাশের নিচে মাঠেঘাটে কাজ করার সময় অনেক কৃষক বজ্রপাতে মারা যান। খবরের কাগজ খুললে এমন খবর প্রায়ই দেখা যায়। বিষয়টি নাড়া দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বাহাদুরপুর দেশপ্রাণ শিক্ষানিকেতনের ছাত্র শ্রেয়ক পণ্ডাকে। কীভাবে কৃষকরা বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাবেন, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই আশ্চর্য ‘ছাতা’ বা ‘থান্ডারস্টিক ফর ফার্মার্স’ তৈরি করে ফেলেছে ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্র।
আরও পড়ুন : নন্দীগ্রাম নির্বাচন নিয়ে সরেজমিনে তদন্তে সিআইডি
বজ্ররোধী এই ছাতার মডেল নিয়ে জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য আপাতত প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রেয়ক।
ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কমিউনিকেশন ও ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগিতায় এবং রাজ্য সায়েন্স কমিউনিকেটর ফোরামের আয়োজনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজ্যস্তরে শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেস প্রতিযোগিতায় ভগবানপুরের এই ছাত্রের আশ্চর্য ছাতার মডেল ইতিমধ্যে প্রশংসিত। তারই ফলস্বরূপ জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা সায়েন্স ফর সাস্টেনেবল লিভিং-২০২১-এ সুযোগ পেয়েছে সে। এই মডেল বানানোয় শ্রেয়কের গাইড ছিলেন স্কুলের টিচার ইন-চার্জ নিতাইচরণ পাত্র। তিনি জানান, ‘‘শ্রেয়কের এই মৌলিক ভাবনা জাতীয়স্তরে সাফল্য পেয়ে গ্রামাঞ্চলের অনেক গরিব কৃষকের প্রাণ রক্ষা করবে।’’ এমন কৃতী ছাত্রের সাফল্যে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকার মানুষজন বেজায় খুশি। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই খুদে বিজ্ঞানীকে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই বজ্ররোধী ছাতা আসলে কী? কীভাবে তৈরি হয়েছে? একটি অব্যবহৃত ছাতা, ৪ এমএম তামার তার, পিভিসি পাইপ, ৪ এমএম রড দিয়ে আর্থিং যুক্ত ১০ ফুট উচ্চতার মডেল বানিয়েছে শ্রেয়ক। আর্থিং প্রায় দু-তিন ফুট করা যাবে।
আরও পড়ুন : বিশ্বভারতীতে চলছে স্বৈরাচারী শাসন
ফোল্ডিং এই স্টিক বর্ষাকালে কৃষক মাঠে কাজের সময় নিজেই নিয়ে যেতে পারবেন। আকাশে মেঘ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে নিজে যেখানে কাজ করবেন, সেখান থেকে অন্তত ২০-৩০ ফুট দূরে আলের উপর এই স্টিকটি ছাতার মতো পুঁতে দাঁড় করিয়ে দেবেন। উচ্চবিভব যুক্ত বিদ্যুৎ খোলা মাঠে মানুষের থেকে বেশি উচ্চতার তীক্ষ্ণ প্রান্তযুক্ত এই দণ্ডে ধরা পড়বে এবং মাটিতে চলে যাবে। এর ফলে কৃষক বিপন্মুক্ত হবেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসের কোঅর্ডিনেটর কার্তিকচন্দ্র আদক বলেন, ‘‘এই গবেষণা মানুষের জীবন বাঁচাবে।’’