তৃণমূলের একের পর এক বাউন্সারে তছনছ হয়ে যাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বাংলার পিচে বিজেপির উইকেট পতন অব্যাহত। তাসের ঘর নাকি বালির বাঁধ? প্রশ্ন খুঁজতে শীর্ষ নেতৃত্ব একপ্রকার দিশেহারা বলা যায় ! বিধায়কের দলত্যাগে বঙ্গ বিজেপি বেশ কম্পমান অবস্থায় রয়েছে সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। কেন এমন বিপর্যয়? উত্তর খুঁজতে কেউ ছুটছেন উত্তরবঙ্গে তো কেউ দক্ষিণের উত্তর ২৪ পরগনায়। দলে ভাঙন রুখতে কার্যত হুইপ জারি করে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে “উইকেট বাঁচাও” বৈঠক ডেকেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই বৈঠক আরও কাঁপুনি ধরিয়ে দিল। সেই বৈঠকে সাড়া দিলেন না বিজেপির ৬ জন সাংসদ এবং ৫ জন বিধায়ক।যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন- ভোট পরবর্তী হিংসা” নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য
উল্লেখ্য, বিজেপির তরফে লিখিত বার্তায় উত্তরবঙ্গের ৭জন সাংসদ এবং ২৯ জন বিধায়ক সহ মোট ৩৬ জন জনপ্রতিনিধিকে শিলিগুড়ির মাড়োয়ারি ভবনের বৈঠকে হাজিরার নির্দেশ জারি হয়েছিল। কার্যক্ষেত্রে হাজিরা দিলেন ১ সাংসদ ও ২৫ বিধায়ক। অর্থাৎ, সবমিলিয়ে মুখ ফিরিয়েছেন ১১ জনপ্রতিনিধি। তাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের দু’জন, মালদহের দু’জন এবং আলিপুরদুয়ার জেলার এক বিধায়ক বৈঠকে ছিলেন না। দার্জিলিংয়ের এমপি রাজু বিস্তা ছাড়া আর কোনও সাংসদকেই বৈঠকে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন- পেট্রোপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিজেপি সরকারকে ধিক্কার জানিয়ে ট্যুইট মুখ্যমন্ত্রীর
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে একজন বিধায়ক বলেছিলেন, ‘’ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ আলাদা রাজ্যের দাবি তুলছেন। কিন্তু অন্যদিকে দেখুন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন। আমাদের অবস্থান ঠিক করতে হবে। একজোট হয়ে উত্তরবঙ্গের যাবতীয় সমস্যা ও সমাধানের পথ চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট জায়গায় জানাতে হবে। তবেই স্থানীয় রাজনীতিতে আমাদের গুরুত্ব থাকবে।’’
কেউ আবার বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আরও সক্রিয় হওয়ার কথাও বলেছেন। কেউ আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপর অনাস্থা ও বিরক্তি দেখিয়েছেন। অর্থাৎ, বিধানসভার গ্রাউন্ডে ক্যাপ্টেন হিসেবে না পসন্দ শুভেন্দুকে, তাঁরা হাভেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিধানসভায় দলের অধিনায়কের ব্যাটন মনোজ টিগ্গার হাতে তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করুন দিলীপ ঘোষদের মতো টিম ম্যানেজারের।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের মিশন ত্রিপুরা
এদিকে গেরুয়া শিবিরে ডামাডোলের মধ্যে নতুন করে বোমা ফাটালেন তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, বিজেপির কমপক্ষে ১২ জন বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে সহ্য করতে পারছেন না। তাঁরা তলে তলে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁর কথায়, “অন্তত ১২ জন বিধায়ক শুভেন্দু আর এই বিজেপিকে সহ্য করতে পারছে না। তাদের আগে সামলাও। ভোটের আগে রোজ যোগদান মেলা। ও দিলীপদা ভেজাল, ভুয়ো বিজেপি বুঝতে পারেননি। অন্য দলের নেতাদের পদত্যাগ করিয়ে আনেননি কেন? এখন আবার নীতি জ্ঞান আওড়াচ্ছেন। বিজেপি বাংলার মতো ত্রিপুরাতেও তাসের ঘরের মতো ভাঙছে। শুধু জন প্রতিনিধি নয়, সর্বস্তরে ভাঙছে। এক বিধায়কের নাম শুভেন্দু বারবার বলছে। সেই বিধায়কের আবার যখন তখন যাকে তাকে বিয়ে করে ফেলার অভ্যাস আছে।”
দলত্যাগ করা বিধায়কদের প্রতি কড়া মনোভাব নিতে চলছে বিজেপি। শুভেন্দু ইতিমধ্যেই দুই দলত্যাগী বিধায়ককে দল ছাড়ার কারণ দর্শানোর চিঠি ধরিয়েছেন। এই ঘটনায় কটাক্ষের সুরে কুণাল ঘোষ বলেন, “পরিষদীয় দলনেতা লম্বা চিঠি দিচ্ছে। আগে শুভেন্দু অধিকারী বলবেন শিশির অধিকারী কোন দলে রয়েছেন! শুভেন্দু আগে বলুন, বাবা কোন দলে আছে। শিশির অধিকারী এখনও চিঠি দিয়ে জানাতে পারেননি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান। আয়নায় মুখ দেখুন।”
তিনি আরও বলেন, “শুভেন্দু দুই বিধায়কের নিয়ে বলছে, এদের সঙ্গে নাকি চারমাস যোগাযোগ ছিল না। এরা তৃণমূল নেতাদের ঘরে গিয়ে বসে থাকে। বিরোধী দলনেতা কী আঙুল চুষছিল? ২০১৪ সালে অমিত শাহের ঘরে কে বসেছিলে? এখন শুভেন্দুর পাশে বসা বিজেপির লোকেরা ওকে নেতা মনে করে না। শুভেন্দু যদি ১০৮ বার নাকখতও দেয়, তবুও তাকে নেবে না তৃণমূল।”