আসলে বিজেপি নাকি একেবারে ওয়াশিং মেশিন। ওই ওয়াশিং মেশিনে ঢুকলে সুকুমার রায়ের কথায় টক টক একেবারে মিষ্টি হয়ে যায়।
বাস্তবটা লক্ষ করুন! মিস্টার অধিকারী সিবিআইয়ের খাতায় এফআইআর নামভুক্ত। নারদা তো আছেই! কিন্তু সারদার সুদীপ্ত সেন কোর্টে বিচারপতির কাছে নিজে হাতে লিখিত দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী কোটি কোটি টাকা তাঁর থেকে নিয়েছেন। এমনকী কাঁথি পুরসভার প্যাডে টাকা নেওয়ার ফটোকপিও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। যে সুদীপ্ত সেনের অভিযোগের ভিত্তিতে কুণাল ঘোষ, মদন মিত্র, সৃঞ্জয় বোস ইত্যাদি ব্যক্তিদের বহুদিন হাজতবাস করতে হয়েছে, যদিও তাঁদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সেক্ষেত্রে কোন জাদুবলে মিস্টার অধিকারী বিজেপির খাতায় নাম লিখিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা সেজে সিবিআইয়ের এফআইআরে নাম থাকা সত্ত্বেও অপরের দুর্নীতির কথা বলে বেড়াচ্ছেন জোর গলায়। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির পক্ষপাতিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে অন্যরাও। এইভাবে হেমন্ত বিশ্বশর্মা, যিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বহু কোটি টাকা সারদা থেকে সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও বিজেপিতে গিয়ে এখন ধোয়া তুলসীপাতা। কার্যত টক টক গন্ধ একেবারে মিষ্টি হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-বিধানসভায় আসন বিন্যাস
কিছুদিন আগে মহারাষ্ট্রের নারায়ণ রানেও বিজেপিতে গিয়ে একেবারে শুদ্ধ হয়ে গেছেন। কার্যত টক টক গন্ধ এখানেও মিষ্টি হয়ে গিয়েছে।
কত নাম বলব! বহু নাম বিজেপিতে গিয়ে একেবারে মিষ্টি হয়ে গেছে। তাই সঙ্গত প্রশ্ন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি কী শুধু বিরোধীদের জন্য?
সাম্প্রতিক সময়ে শাসকদলের মহারাষ্ট্রে, ঝাড়খণ্ডে হর্স ট্রেডিং সহ শাসকদলের ভূরিভূরি কেলেঙ্কারির তদন্ত কতদূর এগিয়েছে? এই জমে থাকা কেলেঙ্কারির দীর্ঘ তালিকা এইসব নামের সঙ্গে আদানি থেকে স্মৃতি ইরানি, আনন্দ বিন প্যাটেল, শিবরাজ সিং চৌহান, প্রকাশ জাওড়েকর, জয় শাহ, ললিত মোদি, নীরব মোদি, মেহুল চোকসি ইত্যাদি অনেকেই জড়িত। কয়েকদিন আগে গুজরাতের এক ব্যবসায়ী ৭০০০ কোটি টাকার বেশি ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়েছে। সে আবার লন্ডন থেকে অন্য দেশে গা ঢাকা দিয়েছে।
আরও পড়ুন-কাবুলে বিস্ফোরণ
কিছুদিন আগে নরেন্দ্র মোদির আমলে বিভিন্ন সংবাদপত্রে কেলেঙ্কারির দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ পেয়েছিল। যেমন আদানি পাওয়ার স্ক্যাম, বালকো ডিস ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম, ডাল স্ক্যাম, আর্থকোয়াক রিলিফ ফান্ড স্ক্যাম, ফিশারিজ স্ক্যাম, হাডকো স্ক্যাম, জয় শাহ স্ক্যাম, কেরালা মেডিক্যাল স্ক্যাম, ললিত মোদি স্ক্যাম, মেট্রো রেল স্ক্যাম, নীরব মোদি স্ক্যাম, অপারেশন ওয়েস্টল্যান্ড স্ক্যাম, পিডিএসএস স্ক্যাম, কোয়ারি স্ক্যাম, রাফায়েল স্ক্যাম, এসএসসি স্ক্যাম, টেন্ডার স্ক্যাম, ইউপিএ স্ক্যাম, ওয়েইট মেজারমেন্ট ইন্সপেক্টর স্ক্যাম, এক্সরে টেকনিক্যাল স্ক্যাম, স্মৃতি ইরানি ল্যান্ড স্ক্যাম ইত্যাদি। এবার দেখা যাক বাম আমলের ৩৪ বছরের বিভিন্ন কেলেঙ্কারি!
‘জাগোবাংলা’য় বিভিন্ন লেখক এই কেলেঙ্কারি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছেন।
যেমন ধরুন, চন্দনবাবু ধনকুবের হলেন কী করে? এই প্রশ্ন তোলায় ত্রিপুরার নৃপেন চক্রবর্তী মহাশয়কে প্রথমে সিপিআইএমের পলিটব্যুরো থেকে এবং পরে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন-আম্পায়ারের ভুলে সবিতাদের হার
প্রয়াত জ্যোতিবাবুর পুত্র চন্দনবাবুর বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারির অর্ডার পাইয়ে দিতে সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী। এই খবরটা মিথ্যা বলতে না পারায় যতীন চক্রবর্তীকে কুর্সি থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। উচ্চশিক্ষামন্ত্রী শম্ভুচরণ ঘোষকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছিল। বুদ্ধবাবুর উবাচ ‘চোরেদের সরকার’ আজ সবার মুখে মুখে। তারপরেও সেই চোরেদের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। স্কুল সার্ভিস কমিশন হওয়ার পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত পার্টির হোলটাইমার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরাই সব স্কুল-কলেজে চাকরি পেয়েছে।
১৯৯৬ সালের অবিভক্ত মেদিনীপুরে ২২০০ প্রাইমারি চাকরি ২০১২ সালে হাই কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। ২০১০ সালে সিপিআইএম কর্তৃক গ্রুপ ডি-তে ৬১৪ জনের চাকরিও বাতিল হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-বিহারে মাঝগঙ্গায় সিলিন্ডার ফেটে আগুন, মৃত ৫
প্রশ্ন করতে পারেন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চাকরিতে কি স্বচ্ছতা বজায় ছিল! মোটেই না। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বামশাসন থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ফলে সেসময়ের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি মানুষের নজরে আসেনি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই পার্টি ক্যাডারের ছড়াছড়ি। বামেদের প্রথম আমলে সঞ্চয়িতা, সঞ্চয়িনী, ওভারল্যান্ড, অনুকূল মাইতি ইত্যাদির রমরমা। ২০১১ সালের পূর্ব পর্যন্ত দুর্নীতি আর এরা সমার্থক ছিল। তবে সিপিএম-এর সৌভাগ্য পরমবন্ধু কংগ্রেসের সহযোগিতায় চিটফান্ডের তদন্ত শুরু হয় ২০১১ সালের পরে। তার আগে শুরু হলে আজ যাঁরা সিপিএমে গলা ফাটাচ্ছেন, তাঁদের অনেককেই জেলের ঘানি টানতে হত।
আরও পড়ুন-নিম্নচাপ ও কোটাল, আতঙ্কে সুন্দরবন
আমরাও জানতে চাই, কেন চিটফান্ডের তদন্ত ২০১১ সালের আগে নয়? আসলে চোরের মায়ের বড় গলা।
সিবিআই, ইডি ইত্যাদি কেন্দ্রীয় সংস্থার বিষয়ে কংগ্রেস সিপিআইএম দ্বিচারিতা স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গে এরা ভাল আর অন্যত্র এরা খারাপ। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি তদন্ত করলে সিপিএম প্রতিদিন গলা ফাটাচ্ছে আর কংগ্রেস তাদের রাজ্যে এদের বিরুদ্ধে গলা ফাটাচ্ছে। অনেকেই বিজেপি ওয়াশিং মেশিনে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সাবাস বিজেপি!
কিন্তু কতদিন এই মেশিন চালাবেন! জনতার উত্তর সময়মতোই পাবেন।