পূর্ণেন্দু রায় নয়াদিল্লি : দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য বেহাল। করোনা অতিমারিতে কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ। কমেছে আয়ের পরিমাণ। এই অবস্থায় ব্যাঙ্কে সোনা জমা রেখে টাকা ধার করার প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। খুচরো ঋণের মধ্যে অন্যতম প্রধান স্বর্ণঋণ। কেন্দ্রের মোদি সরকার যখন জিডিপি, জিএসটি বাবদ অর্থ সংগ্রহের খতিয়ান দেখিয়ে অর্থনীতির ‘সুদিন ফিরে আসার’ রূপকথা শোনাচ্ছে, তখন অন্য সুর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তথ্যে। মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তের অনেকেই ভীষণ জরুরি প্রয়োজনে সোনার অলংকার ব্যাঙ্কের কাছে জমা দিয়ে টাকা ধার করেন।
আরও পড়ুন : তালিম নিয়ে ডিগবাজি! কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে চায় তালিবান
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক উচ্চপদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, ২০২০’র জুলাই মাস থেকে ২০২১’র জুলাই পর্যন্ত স্বর্ণঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৭.৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ২০২০ সালের জুলাইতে স্বর্ণঋণ দেওয়া হয়েছিল ২৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, ২০২১’র জুলাই মাসে সেই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। শীর্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার জুন মাসের তথ্য বলছে, ২০২০’র তুলনায় স্বর্ণঋণ ২০২১-এর জুনে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩৮.৭৬ শতাংশ।
স্বর্ণঋণের ব্যবসায় এই বিপুল বৃদ্ধি কীসের ইঙ্গিত বহন করছে? সোনার বিনিময়ে এই ঋণ গ্রহীতার কাছে আনন্দদায়ক নয়। আসলে স্বর্ণঋণ ব্যবসার ব্যাপক বৃদ্ধি করোনা সংক্রমণ রোধে জাতীয় লকডাউন, চাকরি হারানো, বেতন কাটা এবং উচ্চতর চিকিৎসা ব্যয় সৃষ্ট দুর্দশারও একটি সূচক। মানুষ সোনা বন্ধক রেখে ঋণ পাওয়া সহজ মনে করে। সুযোগ দেখে, ব্যাঙ্কগুলি স্বর্ণঋণ দেওয়া বাড়িয়েছে, কারণ এই ঋণ পুনরুদ্ধার কষ্টকর নয়।
আরও পড়ুন ডিজিটালি বিজেপিকে টেক্কা দিতে ‘কু-অ্যাপে’ অ্যাকাউন্ট খুলল তৃণমূল কংগ্রেস
গ্রামাঞ্চল, নিম্ন-আয়ের গোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ইউনিটগুলির উপর আর্থিক চাপের ইঙ্গিত স্বর্ণঋণ ব্যবসায় বৃদ্ধি। গত বছর এবং এই বছর জাতীয় লকডাউন থেকে আঞ্চলিক লকডাউন ছোট ব্যবসায়িক ইউনিটগুলিকে চরম চাপের মধ্যে রেখেছে। এছাড়াও, চাহিদা কমে যাওয়া শিল্পের বিভিন্ন ইউনিটের নগদ প্রবাহ এবং তাদের কর্মীদের বেতন দেওয়ার ক্ষমতাকে সংকুচিত করেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলেছে যে করোনা অতিমারির অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে স্বর্ণঋণের চাহিদা বাড়ছে।