প্রতিবেদন : বিরোধী দলের দিকে আঙুল তুলে কাশ্মীর ফাইলস সিনেমা (Kashmir Files Movie) নিয়েও নির্লজ্জ রাজনীতি করতে নেমেছিলেন নরেন্দ্র মোদি-সহ বিরোধী নেতারা। উপত্যকায় হিন্দু পণ্ডিতদের দুরবস্থার প্রচার করে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনের মেকি অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের। আর এখন দেখা যাচ্ছে, মোদি জমানায় সেই কাশ্মীরি পণ্ডিতরাই খুন হচ্ছেন, রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তুলে জঙ্গিদের হাত থেকে জীবন বাঁচানোর আর্তি জানাচ্ছেন।
অথচ কাশ্মীর ফাইলস সিনেমা (Kashmir Files Movie) নিয়ে অনেক ঢাক পিটিয়েছিল বিজেপি। তাদের দাবি ছিল, প্রাক্তন শাসকদের আমলে কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিত সম্প্রদায়ের কোনও নিরাপত্তা ছিল না। বিজেপি তাঁদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, মোদি সরকারের দাবি ছিল, শান্তি ফেরাতেই কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করার পর ভূস্বর্গে শান্তি ফেরা তো দূর অস্ত্, বরং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বহুগুণ বেড়েছে। জঙ্গিদের বর্তমান নিশানা কাশ্মীরের পণ্ডিত সম্প্রদায়। সেইসঙ্গে অন্য রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা। চলতি বছরের মে মাস থেকে পণ্ডিত সম্প্রদায়ের উপর একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। মে মাসে রাহুল ভাট নামে এক সরকারি কর্মীকে খুন করা হয়। তার কয়েক দিনের মধ্যেই খুন হন এক স্কুল শিক্ষিকা। এর সপ্তাহখানেক পর প্রাণ হারান এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। একের পর এক এইসব ঘটনার জেরে ফের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। তাঁদের অভিযোগ, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই সরকার। বিজেপি তাঁদের নিয়ে শুধু রাজনীতি করছে। তাঁদের স্লোগান, দয়া করে আমাদের বাঁচতে দিন। জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা দিন। পণ্ডিত সম্প্রদায় বারবার যেভাবে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাতে নিশ্চিতভাবেই মোদি সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে। পরপর খুনোখুনির ঘটনা কেন্দ্রের ভাবমূর্তিতে কালি লেপছে।
আরও পড়ুন: মিডিয়া মিথ্যাবাদী, তোপ রোনাল্ডোর
বুধবার কাশ্মীরের বুদগামে নিরাপত্তার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশ প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা নিপীড়িত। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতির প্রধান সঞ্জয় টিক্কুর বলেছেন, মঙ্গলবারের আক্রমণের পর এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, উপত্যকায় কোনও কাশ্মীরি হিন্দুকে বাঁচতে দেবে না জঙ্গিরা। গত ৩২ বছর ধরে আমরা এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করে চলেছি। আর কতদিন আমরা এই অশান্তি ও যন্ত্রণা সহ্য করব? সরকার কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। একই সঙ্গে সঞ্জয় পণ্ডিত সম্প্রদায়ের মানুষকে জম্মু বা দিল্লির মতো নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরে ফের শুরু হয়েছে টার্গেট কিলিং। জঙ্গিরা বেছে বেছে হয় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের খুন করছে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি পণ্ডিত ও পরিযায়ী শ্রমিককে প্রাণ হারাতে হয়েছে। মঙ্গলবার সোপিয়ানের জঙ্গি হানায় সুনীল কুমার নামে পণ্ডিত সম্প্রদায়ের একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের ভাই পিন্টু কুমার গুরুতর জখম হয়েছেন। এ ধরনের একের পর এক ঘটনা কাশ্মীরের সংখ্যালঘু হিন্দুদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে।