সৌম্য সিংহ: ১৯৯৬ সালে যে অধ্যাপনা জীবনের শুরু হয়েছিল, ২৫ বছর পেরিয়ে ২০২২-এ তার ইতি টানলেন অধ্যাপক ব্রাত্যব্রত বসু (Bratyabrata Basu)। ২৫ অগাস্ট থেকে তিনি সিটি কলেজের বাংলার প্রাক্তন অধ্যাপক। অধ্যাপনা থেকে নিলেন ছুটি, স্বেচ্ছ্বাবসর। একটা নস্ট্যালজিক দিন। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার বেশি কলেজে কাটিয়ে বিকাশ ভবনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে শিক্ষামন্ত্রী বলে গেলেন, মন কেমন করা দিন। এভাবে এত উষ্ণতার মাঝে দিনটা শেষ হবে ভাবতেই পারিনি। নতুন কেউ আসুন আমার জায়গায়। পড়ুয়াদের উপকার হবে। সকলের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
প্রিন্সিপ্যাল রুমে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঢুকেই ব্রাত্য প্রিন্সিপ্যাল শীতলপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ডানদিকের চেয়ারটিতে বসলেন। বললেন, এটাতেই সবসময় বসতাম। এরপর অ্যাটেডেন্সে সই। তারপর একের পর এক ফুলের তোরা, মিষ্টি। এ-সব পাওয়ার মাঝেই চায়ের অর্ডার। ব্রাত্য (Bratyabrata Basu)বললেন, দুধ-চা মিষ্টি দিয়ে। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই অফিসিয়াল কাজকর্ম সারছেন। দুটি অ্যাপ্লিকেশন। একটিতে স্বেচ্ছ্বাবসরের আবেদন। আবেদনে চোখ বুলিয়ে নিলেন কলেজের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট বিধায়ক তাপস রায়। একের পর এক চেনা অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা এসেছেন। এসেছেন শিক্ষাকর্মীরা। এমনকী যিনি চা দিচ্ছেন সেই সঞ্জয় সময়ের তালে পা ফেলে অনেক পাল্টে গিয়েছে সে কথাও অকপটে বললেন। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই বলেছিলেন স্টাফরুমে কিন্তু যাব। বহুদিন বন্ধ থাকা একটি দরজা খুলে দেওয়া হল। পড়ুয়া, শিক্ষকদের ভিড়কে সঙ্গে নিয়ে করিডর ধরে অ্যাকাউন্টস রুমে। তার পাশে স্টাফ রুম। চেয়ারে বসে একেবারে নিপাট আড্ডা। বাংলা বিভাগের তরুণতুর্কিদের সঙ্গে আলাপ। এ-ছাড়াও নতুনরা একে একে আলাপ সারলেন। চায়ের সঙ্গে তখন আলাপচারিতা জমে উঠেছে। মাঝে মাঝেই স্মৃতিচারণ। সিটি কলেজের বিবি (পড়ুয়ারা এই নামেই অভ্যস্ত) তখন শিক্ষামন্ত্রীর তকমা ফেলে স্টাফ রুমের বাংলার অধ্যাপক। সেখানে বসেই রামমোহন কলেজের অধ্যক্ষ শাশ্বতী সান্যালের অনুরোধ তাঁর ঘরেও যেতে হবে। কথা রেখেছেন। সবশেষে স্টাফ ক্যান্টিনে বসে শুরু হল নিপাট আড্ডা। এল টোস্ট, ওমলেট, চা। কেউ তুলতে চান ছবি, কেউ দিতে চান ফুল। কেউবা হাত তুলে বলে গেলেন, স্যর ভাল আছেন তো? যতবারই বেরতে চান, ভিড়ে আটকে যান।
আরও পড়ুন: বিলকিস বানো-কাণ্ড: মুখোশ খুলে বেরিয়ে এল মুখ
২০১১-র ২০ মে মন্ত্রী হওয়ার পর লিয়েনের আবেদন করেন ব্রাত্য। ২০১৬-র ২৬ মে পর্যন্ত মঞ্জুর হয়। দ্বিতীয় পর্বে ছুটি মঞ্জুর হয় ২০২১ সালের ২৬ মে অবধি। তারপর ফের নিয়ম মেনে ছুটির আবেদন। কিন্তু আর্জি মঞ্জুর হলেও মনে মনে ঠিকই করে নিয়েছিলেন, এবার স্বেচ্ছ্বাবসর। জায়গা করে দেবেন নতুনদের।
একেবারে শেষ মুহূর্তে সিটি কলেজের অধ্যাপক হিসেবে শেষ স্বাক্ষরটাই সারলেন। কথা হল গভর্নিং বডির সঙ্গে। তাদের দাবি সব লিখিতভাবে দিতে বললেন। বললেন কোথায় কোনটা আটকাতে পারে, কীভাবে আবেদন করতে হবে, সবই বললেন। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নামলেন। গেটের বাইরে তখন গোটা সিটি কলেজের স্টাফ রুম। কলেজের বারান্দায় ভিড় জমিয়েছে পড়ুয়ারা। ক্যামেরা, মোবাইল ফ্ল্যাশ দ্রুত ওঠানামা করছে। বেরবার আগে বলে গেলেন, আপনারা সকলে ভাল থাকবেন। শিক্ষামন্ত্রীর চোখটা একটু যেন ছলছল করে উঠল। ২৫ বছরের অনেক স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিলেন শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে।