গতবারের মতো এবারও করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো করতে উদ্যোক্তাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে কড়া নজর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সে কারণেই তিনি জানিয়ে দিলেন,এবারও একই নিয়মে কোভিডবিধি মেনে হবে দুর্গাপুজো। উদ্যোক্তাদের চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। “নিশ্চিন্তে পুজো করুন।” মঙ্গলবার, বিকেলে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে গাইডলাইন নিয়ে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে প্রশাসনিক ও সমন্বয় বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবারে নতুন কোনও ঘোষনা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। ২০২০ তে রাজ্য সরকার পুজো কমিটি গুলির জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা ও ছাড় দিয়েছিল এবারও সেগুলি বলবৎ থাকছে। উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছে তাই রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ন দ্বিবেদ্বী নেতাজী ইনডোরে উপস্থিত পুজো কমিটির কর্তাদের পড়ে শোনান ২০২১ এ পুজো নিয়ে সরকারের ভাবনা। মুখ্যসচিব বলেন, “কোভিডের জন্য অনেক পুজো কমিটি স্পনসর পায় নি। এবছর ও কোভিড চলছে। মুখ্যমন্ত্রী আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেটাই আমি পড়ে শোনাচ্ছি। গতবছরে যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিলো এবারেও সেগুলো বজায় থাকছে।
প্রতি পুজা কমিটি কে সরকার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
পুজো করতে যে লাইসেন্স লাগে, যেমন দমকল, বিদ্যুত ইত্যাদি লাগবে না।
বিদ্যুতের বিলে পঞ্চাশ শতাংশ মুকুব করা হলো।
স্কুল কলেজ খোলার বিষয় টি অবশ্যই পুজোর পরে ভাবা হবে”।
যেহেতু নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে এবং আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ রয়েছে, তাই সরকারি ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত থাকেন নি। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যসচিব যা বলেছেন আামার সঙ্গে আালোচনা করেই বলেছেন। আপনাদের চিন্তার কোনও কারন নেই। আপনারা নিশ্চিন্তে পুজো করুন। সরকার আপনাদের পাশে আছে। রজ্য পুলিস ও কলকাতা পুলিস সর্বতোভাবে আপনাদের সহযোগিতা করবে। আপনারাও ওদের সহযোগিতা করবেন”।
বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্র সচিব বি পি গোপালিকা, ডিজি মনোজ মালব্য সহ কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধি এবং পুজো উদ্যোক্তারা। পুরো অনুষ্ঠান সন্চালনা করেন কলকাতার পুলিস কমিশনার সৌমেন মিত্র।
রাত জেগে পুজো দেখা দুর্গোৎসবের একটা অঙ্গ। তবে, এবার রাতে পুজো দেখার অনুমতি থাকবে কি না সে বিষয়টি উপনির্বাচনের পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কলকাতায় আড়াই হাজার, সারা রাজ্যে মোট ৩৬ হাজার ক্লাবের কোনও অসুবিধে হবে না। ক্লাব চত্বরে স্যানিটাইজার করতে হবে। বিভিন্ন সংস্থা মাস্ক বিলি করতে পারেন। বড় ক্লাবগুলিকে ছোট ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিসর্জনের দিনক্ষণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৫ অক্টোবর দশমী থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত হবে বিসর্জন। ১৮ তারিখ হতে পারে কার্নিভাল। এখন রেড রোডের বিসর্জনের কার্নিভালও একটা বড় আকর্ষণ। অনেক বিদেশী পর্যটকও সেটা দেখতে আসেন। করোনা আবহে গত বছর সেই কার্নিভাল করা যায়নি। এবার সেটা হবে কি না- তা কোভিড পরিস্থিতি দেখে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, আইআইটি খড়গপুর, ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট-সহ তিনটি সংস্থার পক্ষ থেকে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দুর্গা উৎসব ঘিরে ৩২,৩৭৭ কোটি টাকা খরচ হয়। দুর্গাপুজোকে ঐতিহ্যশালী আন্তর্জাতিক উৎসবের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য UNESCO-র কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- বিজেপি নেতার কুকথা
মততা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধর্ম যার যার উৎসব সবার।শান্তি-সভ্যতা-সংস্কৃতি মেনে দুর্গাপুজো করতে হবে। অশান্তি, কোনও প্ররোচনাতে পা দেবেন না। পুজোতে যেন বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, এদিকে নজর রাখতে হবে।” সঙ্গে যোগ করেন,”আমরা অন্ধকার থেকে আলোয় আসতে চাই। শোষন থেকে বন্চনা থেকে মুক্ত হতে চাই”।
বক্তব্যের শেষে চণ্ডীপাঠ করে সবার জন্য প্রার্থনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সবাইকে জানান, “শুভ পুজো”।