প্রতিবেদন : নজিরবিহীন ভাবে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে এই সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পরই হইচই শুরু হয়ে যায় সব মহলে। প্রশ্ন ওঠে, একজন বিচারপতি যদি বিচারাধীন বিষয়ে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিতে পারেন, তবে বিচারব্যবস্থা ও বিচারপতিদের নিয়ে মিডিয়া কেন বলতে পারবে না! এই সাক্ষাৎকারের পর আইনজীবী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। হাইকোর্টের আইনজীবীদের বক্তব্য, এভাবে একজন বিচারপতির মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেওয়াটা সুপ্রিম কোর্টের আইনের পরিপন্থী। অনৈতিক ও সংবিধানের অবমাননা।
আরও পড়ুন-গেরুয়া নেতাদের বাড়িতে ঢুকলেও উদ্ধার হবে টাকার পাহাড় : মুখ্যমন্ত্রী
সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে জনসমক্ষে মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই। আমরা সংসদেও আলোচনা করতে পারি না। এই সাক্ষাৎকার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস সহ বিরোধীদের আরও কুৎসা করতে অক্সিজেন জোগাবে। তাঁর সংযোজন, বিচারপতিদের বিষয়ে যে ব্যাঙ্গালোর প্রোটোকল আছে তাতে বাকস্বাধীনতা থাকবে, কিন্তু তাঁর এজলাসে যে বিচারাধীন বিষয়গুলি নিয়ে যেভাবে টিভিতে স্বাক্ষাৎকার দিলেন ও ভবিষ্যতে কী ধরণের নির্দেশ দেবেন তার আভাস দিলেন, এর নজির ভারতবর্ষে নেই। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মতে, উনি বিজেপির এজেন্ট। এই স্বাক্ষাৎকার আইন সম্মত নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী। নিজের বিষয়ের বাইরে বেরিয়ে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেছেন। মিজোরামের প্রাক্তন অ্যডভোকেট জেনারেল আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব বলেন, বিচারপতির কাজ বিচার করা। মামলা নিয়ে বা তিনি কী করেছেন সেসব নিয়ে আলোচনা করা নয়। এই সাক্ষাৎকার বাঙ্গালোর প্রিন্সিপাল অফ জুডিশিয়াল কনডাক্টের পরিপন্থী। যেভাবে বসে তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বললেন, তাঁর উচিৎ এই দায়িত্বভার ছেড়ে দিয়ে এরকম কথা বলা। উনি সংবিধান অবমাননা করেছেন।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly) এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় ও তাঁর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে আদালত কক্ষে তিনি যে ধরণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং নির্দেশ দেওয়ার আগে ও পরে কোন বিষয়গুলি নজরে রেখেছেন, তার সবটাই বলেন এই সাক্ষাৎকারে। এমনকি রাজনৈতিক সমাবেশে করা বক্তব্য নিয়েও তিনি কড়া মন্তব্য করেছেন।
আইনজীবীরা যা বললেন
* সুখেন্দুশেখর রায় : বিচারাধীন বিষয় নিয়ে জনসমক্ষে মন্তব্য করার অধিকার কারওর নেই। সংসদেও করা যায় না। এই সাক্ষাৎকার শুনে মনে হয়েছে বিরোধীদের অক্সিজেন দিতেই যেন মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছিলেন জনৈক বিচারপতি।
* অরুণাভ ঘোষ : সাক্ষাৎকার আইনসম্মত নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার পরিপন্থী। বিষয়ে না থেকে রাজনৈতিক কথা বলেছেন। উনি বিজেপির এজেন্ট।
* বিশ্বজিৎ দেব : সংবিধানের অবমাননা। বাঙ্গালোর প্রিন্সিপাল অফ জুডিশিয়াল কন্ডাক্টের পরিপন্থী। বিচারপতির কাজ বিচার করা, মামলার বিষয়বস্তু কিংবা তিনি কী করেছেন সে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আলোচনা করা যায় না।