মণীশ কীর্তনিয়া: মা দুর্গার আরাধনায় মেতে আছে বাংলা। আলোঝলমলে তিলোত্তমা। নামকরা পুজো মণ্ডপগুলিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভিড় বাড়ছে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় পূর্বাভাস মতো ঝমঝমিয়ে নামা বৃষ্টিও দমিয়ে রাখতে পারেনি বাঙালিকে। ছাতা মাথায় চলছে একের পর এক মণ্ডপ দর্শন। ভিজে একশা, তাতেও কুছ পরোয়া নেই। রেস্তোরাঁগুলিতে এখনই ঠাঁই নাই রব। এই উৎসবমুখর কলকাতার একদিকে মা দুর্গার বন্দনায় মেতেছেন তৌসিফরাও। হ্যাঁ ঠিক শুনছেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পাশে এজেসি বোস রোডের ওপর ওঁদের পুজো (kolkata- Durga Puja)। তথাকথিত বড় পুজোর কাছে এই পুজো কিছুই না। ধারে ভারে সবদিক থেকেই পিছিয়ে। কিন্তু এগিয়ে মননে। এগিয়ে হৃদয়ে। এগিয়ে সর্বধর্ম সমন্বয়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা ‘‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই পুজোর থিম সঙ হতে পারে চোখ বুজে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় এই পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন একসঙ্গে সব ধর্মের মানুষজন। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান সকলেই হাজির হয়েছিলেন। এসেছিলেন ইউএস কনসুলেটের কয়েকজন। ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ নাদিমুল হক। ভিড়হীন একটা ছোট্ট অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু হল তৌসিফ রহমানদের দুর্গাবন্দনা। এপাড়ার (kolkata- Durga Puja) ছেলে তৌসিফ রহমান ছোট থেকেই দুর্গাপুজো দেখছে। এই পুজো বেশ কয়েক বছর আগে কয়েকটি হিন্দু পরিবার মিলে শুরু করেছিল। তারা এপাড়া ছেড়ে চলে গিয়েছে সেই কবে। এরপর বন্ধ হয়ে যায় পুজো৷ অনেক বছর পর তৌসিফ আর তার সহযোগীদের হাত ধরে আবার শুরু হয়েছে মায়ের পুজো৷ একেবারে নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে সমস্ত আচার মেনে পুজো হচ্ছে। ষষ্ঠীর বোধন হয়েছে। ঠাকুরমশাই ব্যস্ত সপ্তমীর আয়োজনে। তৌসিফ তাঁর কাছ থেকে বুঝে নিলেন সপ্তমী পুজোর ফর্দে ঠাকুরমশাই কী চাইছেন। সঙ্গীদের নিয়ে দশকর্মার দোকানে ছুটতে হবে যে! এক্কেবারে যে কোনও পাড়ার পুজোয় যেমনটা হয়। এর মাঝেই তৌসিফ রহমান বললেন, আমার ধর্ম যাই হোক না কেন প্রথমে আমি মানুষ তারপর বাকি সবকিছু। ছোটবেলায় এই পুজোটা হতে দেখেছি। পরে বন্ধ হয়ে যায়। খারাপ লাগত প্রতি বছর পুজোর সময়। তাই সকলকে সঙ্গে নিয়ে আবার শুরু করলাম নতুন করে। প্রত্যেকে সাহায্য করেছেন এক কথায়। কেউ ফেরাননি। এটাই তো আমাদের বাংলা। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার স্লোগানের জীবন্ত উদাহরণ এই তিলোত্তমার বুকে…
বন্ধ হওয়া পুজো চালু করল তৌসিফরা