আগরতলা ও কলকাতা : ত্রিপুরা নিয়ে টানটান নাটকীয় পরিস্থিতি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা আটকাতে মরিয়া বিজেপির কুৎসিত রাজনীতির পাল্টা তৃণমূল যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে চরম চাপে পড়ে গিয়েছে ত্রিপুরার শাসকদল।
১৫ সেপ্টেম্বর ও ১৬ সেপ্টেম্বর, পরপর দু’দিন বিভিন্ন ছুঁতোয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তৃণমূল আবার পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানাল ২২ সেপ্টেম্বর পদযাত্রা করবে তারা। সঙ্গে সংযোজন, এবার বাধা দিলে আদালতের দ্বারস্থ হবে দল। একথা ঘোষণা করে বিজেপিকে দুরমুশ করেন কুণাল ঘোষ।
পাশাপাশি এদিনই রাজ্যসভার শূন্য আসনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে সুস্মিতা দেবের নাম ঘোষণা করেছে দল। সুস্মিতা আপাতত ত্রিপুরা চষে ফেলছেন। সঙ্গে অসমের একটা বড় অংশ। সুস্মিতাকে রাজ্যসভায় পাঠানো মানে ত্রিপুরায় বিজেপির উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেওয়া।
আরও পড়ুন :তালিবান ও হাক্কানি জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা পাকিস্তানই: ব্লিঙ্কেন
আগরতলায় এদিন সকাল থেকে তৎপর ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২২ তারিখ পদযাত্রা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয় পুলিশকে। সঙ্গে দলের ঘোষণা, বাধা দিলেই কোর্টে। সুস্মিতা দেব ও কুণাল ঘোষ বলেন, আমরা ১৫ বা ১৬ তারিখ মিছিল করতে পারতাম। বিজেপি ঠেকাতে পারত না। কিন্তু আমরা তা করলাম না। ওরা যত বাধা দেবে, মানুষ তত বুঝবেন, তৃণমূলকে ভয় পেয়ে পদযাত্রা করতে দিচ্ছে না বিজেপি। এটা আজ প্রমাণিত। আমরা ধৈর্য দেখিয়ে দু’দিন পদযাত্রা আটকানো বরদাস্ত করলাম। শ্রীকৃষ্ণও শিশুপালের একশো কুকথা সহ্য করার পর সুদর্শন চক্র ধরেছিলেন। আমরা ওদের তৃতীয়বার সুযোগ দিলাম। ২২ তারিখ যদি আটকানোর চেষ্টা হয়, তৃণমূল কোর্টে যাবে।
আজ না হলে কাল ঐতিহাসিক পদযাত্রা হবে। ক’দিন আটকাবে? এই বিজেপি হারবে। দলমতনির্বিশেষে বিজেপিবিরোধী মানুষ ভোট দেবেন তৃণমূলকে। এদিন দুপুরে আবার ত্রিপুরার তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেন সুস্মিতা-কুণাল। ছিলেন সুবল ভৌমিক, আশিসলাল সিং, মামুন খান, প্রকাশ দাস প্রমুখ। ২২ তারিখের কর্মসূচি ঘিরে আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন :বেনোজলেরা এখন বিজেপিতে গিয়েছে : সায়নী ঘোষ
এর কিছুক্ষণ পরেই কলকাতা থেকে ঘোষিত হয় সুস্মিতা দেব রাজ্যসভায় যাবেন। ত্রিপুরাতেও সাড়া পড়ে যায়। যিনি ত্রিপুরা চষে ফেলছেন, সেই সুস্মিতা দেব সাংসদ হচ্ছেন খবর ছড়াতেই চাপে পড়ে যায় বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ শীর্ষনেতৃত্ব অভিনন্দন জানান সুস্মিতাকে। আগরতলায় অভিনন্দন জানিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, এই মুহূর্তে যোগ্যতম প্রার্থীকেই রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। বস্তুত সন্তোষমোহন দেবের কন্যা প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতাকে দল রাজ্যসভায় পাঠানোয় সর্বত্র খুশির হাওয়া। বিশেষত ত্রিপুরা এবং অসমে হইহই কাণ্ড।
এদিকে, তুমুল চাপে পড়ে ভুল বকা শুরু করেছেন বিপ্লব দেব ও দিলীপ ঘোষরা। কৈলাসহরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব এবার সরাসরি আক্রমণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কলকাতায় দিলীপ বলেছেন, কোভিডের জন্য ত্রিপুরায় তৃণমূলের মিছিল আটকানো হয়েছে। জবাবে কুণাল ঘোষ বলেন, একটু অন্তত জেনেশুনে বলুন দিলীপবাবু। পুলিশের চিঠিতে কোভিড শব্দটাই নেই। বরং বলা আছে, অন্য দলকে গোটা আগরতলা শহরে মিছিলের অনুমতি দেওয়া আছে। খবর না রেখে প্রলাপ বলেন দিলীপ ঘোষ। ত্রিপুরার মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর অভিযোগ, কলকাতা থেকে কেউ কেউ কেন আসছেন? কুণাল বলেন, বেশ করেছেন।
আরও পড়ুন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে চোট পাওয়ার ঘটনায় বয়ান নিল সিআইডি
ভোটের আগে সারা দেশ থেকে বিজেপির নেতাদের বাংলায় আসার সময় খেয়াল ছিল না? এই বিপ্লব দেব বাংলায় গিয়ে কুৎসা করেননি? বাংলা প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন ত্রিপুরার মানুষ তৃণমূলকে চাইছেন। তাঁদের সংগঠিত করার কাজে সাহায্য করতে যদি কেউ আসেন, আসতেই পারেন। বাংলায় কৈলাস, অরবিন্দ, শিবপ্রকাশরা যাননি? আর এখানে তো বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি সবদিক থেকে বাংলা আর ত্রিপুরা একই পরিবারের দুটি ঘর। সেখানে এসব কথা আসে না। বিজেপি জানে বিজেপি হারছে। তাই ভুল বকছে। এদিকে, তৃণমূলের মিছিল বাতিল হওয়ার পর ত্রিপুরায় রেল ধর্মঘট তুলে নেয় বিজেপির শ্রমিক সংগঠন বিএমএস।