আজ কবি সুকুমার রায়ের জন্মদিন। সেই উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হচ্ছে উৎসব, স্মরণ অনুষ্ঠান। পাশাপাশি এই বছর তাঁর অসামান্য সৃষ্টি ‘আবোল তাবোল’-এর শতবর্ষ। বিষয়টি উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। ‘আবোল তাবোল’ ১৯২৩ সালে ইউ রায় এন্ড সন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সংকলনে মোট ছড়া-কবিতার সংখ্যা ৫০টি। প্রতিটি লেখাই অর্জন করেছে পাঠকপ্রিয়তা। ছোটদের পাশাপাশি পড়তে ভালোবাসেন বড়রাও। অনেকেই লেখালিখির জগতে এসেছেন ‘আবোল তাবোল’ পড়েই।
আরও পড়ুন-পরির মা
সুকুমার রায়ের জন্মদিনে শতবর্ষে ‘আবোল তাবোল’ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন এই সময়ের তিনজন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক।
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার বললেন, সুকুমার রায় আমার গুরু। ‘আবোল তাবোল’ পড়েই আমার ছড়া লেখার শুরু। তাঁর প্রত্যেকটি লেখাই আমার প্রিয়। সময় পেলে আজও পড়ি। সুকুমার রায়ের ননসেন্স ভাবনার দ্বারা আমি শৈশবেই প্রভাবিত হয়েছিলাম।
পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘আবোল তাবোল’ নামেই আবোল তাবোল। আসলে আবোল তাবোল নয়। সুকুমার রায়কে ননসেন্স ছোটদের লেখক বলে যাঁরা সরিয়ে রাখেন, তাঁরা ভুল করেন। সুকুমার রায় অনেক অনেক বড় লেখক এবং তিনি দায়বদ্ধ, প্রবলভাবে সমাজমনস্ক। ‘আবোল তাবোল’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পরে। বইটির একটি বিখ্যাত ছড়া ‘বাবুরাম সাপুড়ে’। এই ছড়ায় একটি সাপের কথা বলা হয়েছে। যেটা আসলে সাপই নয়। আসলে এই ছড়ার মধ্যে অসহযোগ আন্দোলনের অন্তসারশূন্যতা স্পষ্ট। ‘একুশে আইন’ কবিতাটি ইংরেজদের আক্রমণ করে লেখা। যদিও ইংরেজ সেটা বুঝতে পারেনি। বুঝলে সুকুমার রায়কেও নজরুলের মত কারাগারে ভরে দিত। আমরা জানি অসির থেকে মসির ক্ষমতা অনেক বেশি। সমাজ বদলের ক্ষেত্রে বরাবর বড় ভূমিকা নিয়েছেন কবিরা। সুকুমার রায় কলম ধরেছিলেন কুলীন ব্রাহ্মণ, জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধেও। তার এই লেখাগুলো মোটেও সহজ ছিল না। বিশেষ করে যে-সময় সমাজ অন্ধকারে ডুবে। ফিরে পড়লে সুকুমার রায়কে নতুন ভাবে আবিষ্কার করা যায়। বুদ্ধদেব বসু আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন করেছিলেন। সেই সংকলনে তিনি সুকুমার রায়ের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ছড়া বলা হলেও ‘আবোল তাবোল’-এর বেশকিছু লেখা আসলে বিশুদ্ধ কবিতা। ছোটদের সাহিত্যে তাঁর রচনা আদর্শ, মডেল হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন-সূর্যষষ্ঠীব্রত ছট
দীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘আবোল তাবোল’ অবশ্যই আমার প্রিয় একটা ছড়ার বই। ছড়া নয়, অসাধারণ কবিতা। লেখাগুলো ব্যঙ্গ এবং সোশ্যাল স্যাটায়ার। এর মধ্যে বাবু কালচারের বিরুদ্ধে অনেক কথা হয়েছে। অসহযোগ নীতির বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন সুকুমার। ‘আবোল তাবোল’ কিন্তু শুধুমাত্র ছোটদের বই নয়, এই বই বড়দেরও। ছড়াগুলো দুটো অর্থ বহন করে। একটা পৌঁছয় ছোটদের কাছে, আর একটা বড়দের কাছে। সুকুমার রায় ছিলেন বিজ্ঞান মনস্ক। বাঙালিদের কাছে ‘আবোল তাবোল’ আজও আকর্ষণীয় এবং এখনো বেস্ট সেলার বই। লেখা তো বটেই, প্রচ্ছদ এবং অলংকরণও অসাধারণ। সুকুমার রায় ‘আবোল তাবোল’-এর স্টাইলাইজেশন ননসেন্স ঘরানা থেকে নিয়েছিলেন। ওঁরা মন্ডা ক্লাব নাম একটি ক্লাব প্রবর্তন করেছিলেন, যেখানে ননসেন্স চর্চা হত। এই বইয়ের প্রায় প্রত্যেকটি লেখাই প্রকাশিত হয়েছিল ‘সন্দেশ’ পত্রিকায়। ‘আবোল তাবোল’-এর চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে।