অনীশ ঘোষ: নদিয়ার বর্ধিষ্ণু শহর কৃষ্ণনগরের প্রভূত খ্যাতি জগদ্ধাত্রী পুজোর। এখানকার প্রাচীন পুজোর সমারোহ, ঐতিহ্যের টানে হাজির হন বহু দর্শনার্থী। কিন্তু চন্দননগরের মতো জনসমাগম হয় না। মূলত স্থানীয় ও কাছাকাছি জেলাগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ এখানকার পুজোর পরিচিতি বা নামডাক। অথচ আয়োজন, প্রথা ও রীতি বা জলুসে কম যায় না কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। কৃষ্ণনগরে পুজোর শুরু রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে।
আরও পড়ুন-আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়
রাজবাড়িতে এখনও পুজোর আয়োজন হয়। প্রচলিত কাহিনি: নবাব আলিবর্দি খাঁর আমলে একবার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা ভেট দাবি করা হয়, সেই টাকা না দেওয়ায় রাজাকে বন্দি করে মুর্শিদাবাদ (মতান্তরে মুঙ্গের) নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর নদীপথে এলাকায় ফিরে আসার সময় নদীঘাটে বিজয়াদশমীর দুর্গা ভাসানের বাজনা শুনে রাজা বোঝেন সে বছরের মতো দুর্গাপুজো অতিক্রান্ত। প্রথা মেনে দুর্গার আরাধনা সম্ভব হবে না বুঝে রাজার মন ভারাক্রান্ত হয়। সেই রাতেই দেবী দুর্গা জগদ্ধাত্রী রূপে তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন পরের শুক্লানবমীতে নতুন রূপে তাঁর পুজো করার। অন্য এক মতে, মুঙ্গেরের কারাগারে বন্দি থাকাকালীন এক কুমারী দেবী রাজাকে স্বপ্নে বলেন, তিনি অচিরে মুক্তি পাবেন। রাজা কারামুক্ত হন এবং তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র শিবচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়কে সঙ্গে নিয়ে দেখা করেন মেরতলার প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কালীশঙ্কর মৈত্রর সঙ্গে।
আরও পড়ুন-পরির মা
স্বপ্নাদিষ্ট দেবী সম্পর্কে জানতে চাইলে কালীশঙ্কর তাঁকে বলেন, উনি আসলে মা চণ্ডী, প্রাচীন কালে এই দেবীর পুজো হত। রাজাও তাঁর পুজো চালু করতে চাইলে কার্তিক মাসের শুক্লানবমীতে এই পুজোর বিধান আছে বলে কালীশঙ্কর জানান। কিন্তু কুলগুরু বৈষ্ণবাচার্য নতুন এই শাক্ত দেবীর পুজো রাজি নাও হতে পারেন ভেবে রাজা শিবচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়ের ওপর পুজো আয়োজনের দায়িত্ব দিয়ে চলে যান চন্দননগরে তাঁর বন্ধু ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরির কাছে। উদ্দেশ্য, আগের দিন মধ্যরাতে ফিরে সকালেই জগদ্ধাত্রীর পায়ে অঞ্জলি দেবেন, তখন আর বৈষ্ণবাচার্য বাধা দিতে পারবেন না। পরদিন উপবাসী থেকে ফিরে পুষ্পাঞ্জলি দেন তিনি। শুরু হয়ে যায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো।