প্রতিবেদন : শ্রমিকের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখেই শিল্পের আবাহন চায় তৃণমূল কংগ্রেস। শিল্পও বাঁচবে, শ্রমিকও বাঁচবে। এটাই দলের নীতি। একে অপরের পরিপূরক। শুক্রবার হলদিয়ার শ্রমিকসভা থেকে রাজ্যের শিল্পমহলকে এই বার্তাই দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। একইসঙ্গে শ্রমিকদের জন্যও দলের স্পষ্ট বার্তা, কোনও কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে কোনও জঙ্গি আন্দোলন চলবে না। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসেই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। শ্রমিকরা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সহযোগিতা করেই চলবে। এদিন হলদিয়ায় এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রির গেটে শ্রমিকসভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সভা থেকেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের ৫৪টি সংস্থায় আইএনটিটিইউসির ইউনিট তৈরির ঘোষণা।
আরও পড়ুন-ভিড়ের মাঝে একটি মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন অভিষেক, রইল চিকিৎসার আশ্বাস
করলেন সংগঠনের সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। তিনি এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রির ভূয়সী প্রশংসা করেন তাঁর বক্তৃতায়। একইসঙ্গে তিনি বলেন, হলদিয়ায় এক্সাইডের কারখানায় গুটিকয়েক লোক ম্যানেজমেন্টের নাম করে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। এসব বরদাস্ত করা হবে না। আইএনটিটিইউসির সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, হলদিয়ায় বসে যে দাস মালিক জমিদারের মতো শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করছেন— দমন পীড়ন চালাচ্ছেন— চোখ রাঙাচ্ছেন— অকারণ সাসপেন্ড করছেন— এসব বন্ধ না হলে ৭ দিন পরে কলকাতার এক্সাইড অফিসে ধরনায় বসবে আইএনটিটিইউসি। কারখানায় নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও এবার থেকে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে জানাতে হবে। প্রশাসনের নজরদারিতে নিয়োগ হবে। তার জন্য কাউকে একটা টাকাও দিতে হবে না। সাফ কথা তৃণমূল নেতৃত্বের।
আরও পড়ুন-দুর্নীতির মামলায় আরেক অধিকারী-ঘনিষ্ঠ গ্রেফতার
এদিন হলদিয়ার সভায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। শ্রমিক-কর্মচারীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল দেখার মতো। কয়েকমাস আগেই হলদিয়ার শ্রমিক সম্মেলনে শ্রমিকস্বার্থে একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ধাপে ধাপে সেই কাজগুলি হচ্ছে। অভিষেক হলদিয়ায় ঠিকাদাররাজ বন্ধের কথা বলেছিলেন। এদনিও কুণাল ঘোষ ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই ঠিকাদারকে বাদ রেখেই শ্রমিক ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলেছেন৷ কুণালের কথায়— আগে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে দায়িত্ব দিয়ে কাকে সবটা ছেড়ে দিয়েছিলেন আপনারা সবটা জানেন। ফলে শ্রমিকরা অত্যাচারিত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন। সেসব এখন অতীত। এখন থেকে শ্রমিকরাই তাঁদের দাবিদাওয়া বুঝে নেবেন। মাঝখানে ঠিকাদার বলে কিছু থাকবে না। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সমঝোতা করে ঠিকাদাররা নিজেদেরটা বুঝে নেবে আর শ্রমিকরা আঙুল চুষবে— ওসব আর চলবে না।
আরও পড়ুন-নিজেকে সময়োপযোগী করে তুলেছিলেন রুমা
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হলদিয়ায় ৫৪টি সংস্থাতেই আইএনটিটিইউসি ইউনিট খুলবে। এদিন এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম ইউনিটের দু’জন সম্পাদক ও একজন সভাপতির নাম ঘোষণা করলেন তিনি। এঁরা প্রত্যেকেই কারখানার শ্রমিক। বাইরে থেকে কাউকে ইউনিট সম্পাদক-সভাপতি করা হবে না। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে পুরো ইউনিট কমিটি তৈরি হয়ে যাবে সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে। দু’জন সম্পাদক হয়েছেন— অত্যাচারিত চন্দ্রনাথ মণ্ডল ও সৈয়দ মইনুদ্দিন। সভাপতি করা হয়েছে সুদীপ্ত ভক্তাকে।
আরও পড়ুন-নিজ কেন্দ্রে বিজয়া সম্মিলনীতে এসে উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভাসলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
এর আগে একটি ঘটনার জেরে এখানকার কয়েকজন কর্মীর চাকরি খেয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়া হলেও হলদিয়ায় বসে যিনি সংস্থার পক্ষ থেকে সবটা দেখেন তিনি তাঁদের দিয়ে মাটি কাটানো-ঘাস কাটানোর মতো কাজ করাচ্ছেন প্রতিহিংসার কারণে। এদিন কুণাল ও ঋতব্রত দু’জনেই বলেছেন, এই কর্মীদের আগের স্টেটাস ফিরিয়ে দিতে হবে। ম্যানেজমেন্টকে অন্ধকারে রেখে এখানে বসে উনি এই অমানবিক কাজ চালাচ্ছেন। এসব চলবে না। ঋতব্রতর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি বদল না হলে, কলকাতার এক্সাইড অফিসে ধরনায় বসবে আইএনটিটিইউসি। এসব হিটলারি কায়দা এখানে আমরা বরদাস্ত করব না।
আরও পড়ুন-জামা খুলিয়ে অত্যাচার করেছেন বিজেপি নেতা লোকনাথ, বিস্ফোরক যুব মোর্চা কর্মী
এর সঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত হলদিয়ায় ১১টি কারখানায় সিওডি (চার্টার অব ডিমান্ড) হয়েছে। বাকিগুলিতেও হবে। তবে এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে শ্রমিকদের অন্ধকারে রেখে সিওডি করেছেন তা মানি না। নতুন সিওডি তৈরি হবে। এটা নিয়ে শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব আমরা।