সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি : রাজ্য সরকারের টিকাকরণের তৎপরতায় করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। উত্তরবঙ্গের শিশুদের জ্বর নিয়ে যে করোনা-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, তা যে নেহাতই অমূলক, তা পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার। তবে ঋতু পরিবর্তনের জেরে যেসব শিশু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসছে, স্বাস্থ্য দফতর তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে এতটুকু ঢিলেমি দিচ্ছে না।
জলপাইগুড়িতে এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা সমস্ত শিশুরই রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ। সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ওএসডি ডাঃ সুশান্তকুমার রায়। বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে ওএসডি জানান, ৪১ জনের নমুনা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়েছিল, শুধুমাত্র তিনটি শিশুর ইনফ্লুয়েঞ্জা বি-ভাইরাস ও বাকি তিন শিশুর মধ্যে আরএসবি ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। বাকি কোনও সমস্যা শিশুদের মধ্যে নেই। পাশাপাশি যেসব ভাইরাস শিশুদের মধ্যে পাওয়া গেছে তা খুবই স্বাভাবিক ভাইরাস। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। তারা সুস্থ হয়ে বাড়িও চলে গিয়েছে। সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের মধ্যে এই সব ভাইরাসের প্রকোপ এমনিতেই হয়ে থাকে। এর জন্য আলাদা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাধারণ চিকিৎসাতেই সেরে যায়। গত ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ বর্ষের হিসাবে জলপাইগুড়িতে অনেক কম শিশু ভর্তি রয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি, শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, গোটা রাজ্যে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে শিশুরা ভর্তি।
আরও পড়ুন :ভাঙনে ভিটেহারাদের পাশে রাজ্য সরকার
ওএসডি জানান, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের অনেককেই চিকিৎসা না করিয়ে ঝাড়ফুঁক করানোয় গত তিনদিনে ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল তিনটি শিশুর মধ্যে একটি শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। বাকি দুটিকেও বাড়ির লোকেরা যখন নিয়ে এসেছিলেন, তখন অবস্থা বেশ খারাপ। ফলে তাদের বাঁচানো যায়নি। এক্ষেত্রে চিকিৎসার গাফিলতি ছিল না। জেলা স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টিকে হালকাভাবে নিতে চায়নি। তাই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে দু’দফায় বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরাও এসে শিশুদের দেখে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন :হিন্দিভাষীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক, নানা ভাষা নানা মতে ভবানীপুর যেন মিনি ইন্ডিয়া
ডাঃ সুশান্ত রায় জানিয়েছেন, প্রতি বছর বর্ষার পর বিভিন্ন ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিশুরা। তিনি জানান, একটি তুলনামূলক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ভাইরাল জ্বরে ২২৭৯টি শিশু অসুস্থ হয়েছিল। ২০১৮ সালে জুলাই-সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে অসুস্থ্ হয় ২০৪৯টি শিশু। ২০১৯ সালে এই দুই মাসে অসুস্থ হয় ২০৮৩টি শিশু। সে তুলনায় ২০২০তে করোনার প্রভাবে শিশুদের ভাইরাল জ্বরে কেবল ৬৪০টি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ২০২১ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৯৫টি শিশু অসুস্থ হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিদিন যেমন অসুস্থ শিশু ভর্তি হচ্ছে ঠিক তেমনই সুস্থ হয়ে অনেক শিশু বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। অযথা কেউ আতঙ্কিত হবেন না।