নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : কয়লা খাদানের ভিতরে ঢুকে কালো হীরের সুলুকসন্ধান করাই কাজ। এধরনের কাজে মহিলাদের অংশ নেওয়া প্রায় কল্পনার অতীত বলা যায়। তা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে করে দেখিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মেয়ে আকাঙ্ক্ষা কুমারী। কয়লা খাদানের অন্ধকার রহস্য উন্মোচনের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা হাজারিবাগের আকাঙ্ক্ষা বিটেক পাশ করে আজ দেশের প্রথম কয়লা খাদানে কাজ করা মহিলা ইঞ্জিনিয়ার। ঝাঁ চকচকে পেশাদারি জীবনের বদলে অপ্রচলিত ও পরিশ্রমসাধ্য পথই বেছে নিয়েছেন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার আকাঙ্ক্ষা।
নিজের মুখেই বললেন, ছেলেবেলা থেকেই কয়লা খাদানের অন্ধকার অলিগলি টানত আমাকে। বীরসা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে বিটেক করার সময় একজনও মেয়ে বন্ধু ছিল না আমার। কারণ, এই পেশায় আসার কথা সাধারণত মেয়েরা ভাবে না। তবু আমি নিজের স্বপ্ন পূরণে অবিচল ছিলাম। জানতাম, লক্ষ্যের পিছনে একাগ্র থাকলে সাফল্য একদিন আসবেই। আমাদের দেশের মহিলাদের উচিত কোনও অবস্থাতেই নিজের স্বপ্ন ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হওয়া। আকাঙ্ক্ষার জীবনে স্বপ্নপূরণের পথে স্কুল শিক্ষক বাবা এবং গৃহবধূ মায়ের যে পূর্ণ সমর্থন ছিল তাও স্বীকার করলেন তিনি।
আরও পড়ুন :জন্মদিনে জনসাধারণকে সাপলুডোর ছকে বসিয়ে মোদির টিকা-রাজনীতি
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ার দিবসে কয়লা খাদানের ভিতরে ঢুকে কাজ করা দেশের প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ারের তকমা পেয়েছেন আকাঙ্ক্ষা। ২০১৮ সালে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরিজীবন শুরু করেন হিন্দুস্তান জিঙ্ক লিমিটেডের রাজস্থানের এক খাদানে। খাদান থেকে বিস্ফোরণের ধাতব পদার্থ বের করার কাজ করতেন। কিন্তু তখনও তাঁর স্বপ্ন আটকে ছিল কয়লা খাদানের নিকষ কালো অন্ধকার অলিগলিতে, যেখানে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে কয়লা উপরে তোলা হয়। ২০২১-এর অগাস্টে সেন্ট্রাল কোল্ডফিল্ড লিমিটেডের নতুন চাকরি আকাঙ্ক্ষা কুমারীর সামনে সেই সুযোগ এনে দেয়। কয়লা খাদানের নিচে নেমে কাজ করার চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে লুফে নেন সেই অফার।
আরও পড়ুন :অভিষেকের পদযাত্রা: ত্রিপুরায় প্রস্তুতি তুঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের
বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সম্প্রতি প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে মহিলাদের গরু-মোষের সঙ্গে অবলীলায় তুলনা টেনেছিলেন। আমাদের দেশে আকাঙ্ক্ষা কুমারীর মতো অসাধারণ মেয়েরাই এইসব জঘন্য পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার উপর সজোরে চপেটাঘাত।