ভূমিহীনদের জমি দেওয়ার পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষমতায়নে জোর দিল মমতা সরকার। বুধবার নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলার ভূমিহীন মানুষকে জমির পাট্টা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। বুধবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরিবারগুলোর হাতে পাট্টা তুলে দিলেন। আর সেখান থেকেই নিজের বক্তব্যে বিরোধীদের নিশানা করলেন তিনি। কেন্দ্রের থেকে সার পাওয়া থেকে শুরু করে এনআরসি সবকিছু নিয়েই এদিন সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নাগরিকত্ব নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। এনআরসি-র নামে ভোটারদের বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। গরিবদের কোনওভাবেই উচ্ছেদ করা যাবে না। উদ্বাস্তুদের অধিকার আদায়ে লড়েছি। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে অনেক উচ্ছেদ হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ করা চলবে না।’
জমির পাট্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২.৫ লক্ষ মানুষকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্বের নামে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। ভোটার তালিকায় নাম তুলুন। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়। এনআরসির নামে ভোটারদের বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। এবারও দুয়ারে সরকারে ৫০ লক্ষ মানুষ এসেছেন। সব অভিযোগই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আপনারা আছেন বলেই আমরা আছি, আপনারা না থাকলে, আমি কেউ নই।’
আরও পড়ুন-বিজেপি শাসিত অসমের ট্রিগার হ্যাপি পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারলেন পাঁচ গ্রামবাসী, মর্মাহত মুখ্যমন্ত্রী
কেন্দ্রের থেকে পাওয়া সার নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সার দিচ্ছে না। সেই নিয়ে মমতা বলেন, ‘এভাবে অসহযোগিতা চললে সার উৎপাদনের কথা ভাবতে হবে। কৃষকরা সমস্যায় পড়ছেন, রাজনীতির স্বার্থে বাংলাকে বদনাম করা হচ্ছে। কোনও প্রকল্পেই কেন্দ্র টাকা দেয় না। ওদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যাঁরা কেন্দ্রকে চিঠি লিখছেন, তাঁদের নাম বলতেও লজ্জা লাগে।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকার অপব্যবহার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছে। এরা শুধু বদনাম করতেই জানে, কুটুস কুটুস করে মিথ্যে কথা বলে। দিল্লির সরকার পার্টির কথাতেই চলে। তোমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এটা মনে রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন-বিজেপি শাসিত অসমের ট্রিগার হ্যাপি পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারলেন পাঁচ গ্রামবাসী, মর্মাহত মুখ্যমন্ত্রী
এনআরসি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘বাংলাদেশ থেকে সব কিছু হারিয়ে কত মানুষ এখানে এসেছেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তাঁদের নিয়ে তো সরকারের চুক্তি রয়েছে। তিনি ভারতেরই নাগরিক। তবে কখনও কখনও ভাঁওতা দেওয়া হয়। বলে দেওয়া হয়, আপনি নাগরিক নন।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “যারা ভোট দিচ্ছেন, প্রত্যেকে নাগরিক। নাহলে কারও সন্তান স্কুলে ভরতি হতে পারত না। কেউ চাকরি পেতেন না। যাদের ভোটে আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁদের এরপর নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা মানে অপমান করা।”
আরও পড়ুন-নীল হাঁড়িতে সাদা রসগোল্লা
এরপরই ভোটাদের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাতে এনআরসির নাম করে আপনাদের নাম কোথাও কেউ কেটে না দিতে পারে, তাই এখন থেকে নিজে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের নাম তুলে আসবেন। দেখে আসবেন নামটা আছে কি না। বাংলার সমস্ত মানুষকে বলছি, নিজেরা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের নাম তুলুন। একটু কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কাজ সেরে আসুন। না হলে কাল বলে দেবে, আপনার নাগরিক অধিকার নেই।’’