খেজুরি : সিপিএমের হার্মাদদের হাতে আক্রমণ-মৃত্যু-ভয়ঙ্কর আতঙ্কের দিনগুলি এখনও টাটকা গ্রামবাসীদের মনে। সেই হার্মাদরাই আজ বিজেপির সঙ্গে ঘুরছে। বৃহস্পতিবার খেজুরিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, অখিল গিরির (Akhil Giri) চ্যাপ্টার ক্লোজড, শুভেন্দুর চ্যাপ্টার ওপেন। ২৪ নভেম্বর ছিল ‘হার্মাদ মুক্ত দিবস’। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতি বছর এই দিনটি পালন করে খেজুরিতে (TMC- Khejuri)। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ এদিন খেজুরিতে বিশাল জনসভা করে তৃণমূল। সভায় উপচে পড়া ভিড় ছিল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী এদিন সকালে খেজুরিতে যে সভা করেন তার মূল থিম ছিল অখিল গিরির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ‘খেজুরি চলো’। ‘হার্মাদ মুক্ত দিবস’ নয়৷ কিন্তু কেন? কুণাল বলেন, শুভেন্দু কোন মুখে ‘হার্মাদ মুক্ত দিবস’ পালন করবে! ও তো হার্মাদদের পুনঃপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। সিপিএমের হার্মাদরা এখন বিজেপির জল্লাদ হয়েছে। খেজুরির মানুষ সবই দেখছেন। আগামী ৩ ডিসেম্বর কাঁথিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভা করবেন। বৃহস্পতিবার কাঁথি কলেজ মাঠের সভাস্থল সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। খেজুরির সভা মঞ্চ থেকে কুণালের হুংকার, শুভেন্দু তুমি ডিসেম্বরের গল্প শোনাও! ৩ ডিসেম্বর কাঁথির সভা থেকে ডিসেম্বরের খেলা শুরু করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
খেজুরির (Khejuri- TMC) সভা থেকে শুভেন্দুকে তুলোধোনা করেন কুণাল ঘোষ৷ তাঁর কথায়, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওর চোখ দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরকে দেখেছেন। ওকে, ওর পরিবারকে সব দিয়েছেন। শুভেন্দু তো কখনও দলের অন্য কোনও নেতার জন্য বলেনি। তমলুকে ওর ভাইয়ের জন্য বলেছে। কাঁথিতে ওর আর এক ভাইয়ের জন্য বলেছে। ওর বাবা পেয়েছে। ও সব পেয়েছে। এরপরও শুভেন্দু কোন মুখে পরিবারবাদের কথা বলে! একটা চোর-ব্ল্যাকমেলার-দলবদলু-গদ্দার ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গেছে। অখিল গিরির চ্যাপ্টার ক্লোজড, সাফ জানিয়ে দেন কুণাল। কেন? অখিল গিরিকে শুভেন্দু ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করেছে। অখিলদা মেজাজ হারিয়ে বলে ফেলেছেন। ভুল করেছেন। দল ক্ষমা চেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। অখিলদাও ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রী আদিবাসী নেত্রী জঙ্গলকন্যা বীরবাহা হাঁসদা সম্পর্কে শুভেন্দু বলেছে, ও আমার জুতার নিচে থাকে। এই অপমানকর মন্তব্যের পরও শুভেন্দু ক্ষমা চায়নি। বিজেপির কেউ ক্ষমা চায়নি। তাই এখন থেকে অখিলদার চ্যাপ্টার ক্লোজড, শুভেন্দুর চ্যাপ্টার ওপেন। ও শুধু একা খারাপ কথা বলে যাবে!
আরও পড়ুন-গুজরাত ভোটে বিদেশি প্রচার! বিজেপির বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল
এদিন মিঠুন চক্রবর্তীকেও একহাত নিয়েছেন কুণাল। তাঁর কথায়, মিঠুনদাকে জিজ্ঞেস করুন কবে, কোন দল করেছে বলতে পারবে না। আগে বলত, আমি নকশাল। পরে বলল, জ্যোতি আঙ্কেল, মানে জ্যোতি বসু-সিপিএম। এরপর মমতাদির দয়ায় রাজ্যসভায়। তারপর বেইমানি করে এখন বিজেপি। ও নিজেকে গোখরো বলে। আসলে লাউডগা- জলঢোড়া। কুণালের সংযোজন, যখন নন্দীগ্রামে হার্মাদদের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে, তখন কলকাতায় দুটো প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল। একটি মিছিলে হাঁটার জন্য মিঠুনদাকে বলা হয়েছিল। আসেনি। কিন্তু পরে সিপিএমের মিছিলে কলকাতায় হাঁটে মিঠুনদা। এরপর ২০১১ তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আমার সঙ্গে মহাকরণে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চায়। এই তো চরিত্র!
এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী অখিল গিরি, জ্যোতির্ময় কর, সুপ্রকাশ গিরি সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন শেখ সুফিয়ান, খেজুরি ১ ও ২ নং ব্লকের সভাপতি বিমান নায়েক ও শ্যামল মিশ্র, অভিজিৎ দাস, পীযূষ ভুঁইয়া, তরুণ জানা, বাপ্পাদিত্য গর্গ, আনোয়ারউদ্দিন সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সভা শেষে স্থানীয় বাঁশগোড়া পার্টি অফিসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান। ছিলেন অখিল গিরি-সুপ্রকাশ গিরি সহ অন্যরাও। এদিন সকালে হলদিয়ায় প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে জনসংযোগ সারেন কুণাল। স্থানীয় পার্টি অফিসে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন।