প্রতিবেদন : বাড়ি বাড়ি কাজ করা গৃহ পরিচারক ও পরিচারিকা (Maid) সহ অসংগঠিত কর্মীদের ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের হাতে থাকা আইনি অধিকার কাজে লাগিয়েই তাঁদের কর্মক্ষেত্রে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দিতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ১৯৪৮ সালের শ্রম আইনের মাধ্যমে রাজ্য সরকারগুলিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ও মজুরদের জন্য ন্যূনতম বেতন কত হবে তা বেঁধে দেওয়ার অধিকার। সেই আইনের জেরেই শুধু বাড়ির পরিচারক বা পরিচারিকাই নয়, অসংগঠিত ক্ষেত্রের সব ধরনের কাজের জন্যই মজুরির হার বেঁধে দিতে পারে রাজ্যের সরকার। সেই পথে হেঁটেই এবার বাংলার বুকে ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাড়ির কাজের লোক ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অস্থায়ী শ্রমিক, বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনে কর্মরত অসংগঠিত শ্রমিক, রেডিমেড পোশাকের উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কর্মী, ঠান্ডা পানীয়ের উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, বিস্কুট কারখানার অস্থায়ী শ্রমিক, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রের অস্থায়ী কর্মীদের বেতনও এবার ঠিক করে দেবে রাজ্য সরকার। এই একই পথে হেঁটে ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিপণন এবং তার প্রচারে যুক্তদের ন্যূনতম মজুরিই সরকার ঠিক করে দেবে। গত ২২ নভেম্বর রাজ্য শ্রম দফতর এই মর্মে একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। রাজ্যপালের কাছ থেকেও এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনুমোদনও মিলেছে। সম্ভবত আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগেই এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এর সব থেকে বড় লাভ পেতে চলেছেন বাড়ি বাড়ি কাজ করা পরিচারক ও পরিচারিকারা।
আরও পড়ুন-শিল্প-শ্রমিকের সেতুবন্ধনের শপথ
সারা রাজ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ মহিলা ও পুরুষ গৃহ-পরিচারক বা পরিচারিকা (Maid) হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের বেশির ভাগই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের। তাঁদের স্বার্থেই রাজ্য সরকার ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে চাইছে। এই বিষয়ে রাজ্যের শ্রম দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের আসল লক্ষ্য, যাতে কোনও মানুষ বঞ্চিত না হন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাজ্যে ৩০ লক্ষের মতো গৃহ পরিচারিকা রয়েছেন। ২০ লক্ষ পুরুষ গৃহ পরিচারক রয়েছেন। নতুন নিয়মে তাঁরা সবাই উপকৃত হবেন। বর্তমানে বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে নিযুক্ত গৃহ পরিচারক বা পরিচারিকারা মাসে ৯,৭৫০-১০,৫০০ টাকা মজুরি পান। ১০ ঘণ্টা কাজের জন্যে দৈনিক মজুরি ৩২৫-৩৫০ টাকা। যদিও মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দিল্লির মতো শহরে এঁরাই গড়ে ৮০০-১০০০ টাকা মজুরি পান দিনে। দিল্লি, কেরলের মতো রাজ্যে পরিচারিকা বা পরিচারকদের মজুরি সরকার নির্দিষ্ট করে দিলেও এ রাজ্যে সেটা দীর্ঘদিন হয়নি।
এদিকে গত কয়েক বছরে জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গৃহ পরিচারিকা-সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্দিষ্ট করে দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার জেরে যাতে গৃহস্থদের ওপরে চাপ না পড়ে, সেটাও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।