সবুজ ঘাসে ফরাসি বিপ্লব! আর তাতেই মরক্কান (France vs Morocco) রূপকথার ইতি। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের কাছে হার মানল আবেগ।
কিলিয়ান এমবাপে। সারাক্ষণ কড়া ম্যান মার্কিংয়ে ছিল। কিন্তু ৭৯ মিনিটে ওর একটা অসাধারণ মুভই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিল। এক গোলে এগিয়ে থাকা ফ্রান্স সেই সময় মরক্কোর একের পর এক আক্রমণে রীতিমতো কাঁপছে। মনে হচ্ছিল যে কোনও সময় গোল শোধ হয়ে যাবে। ওই রকম চাপের মুখর হঠাৎ করেই প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে চকিত ড্রিবলে তিন থেকে চারজন ডিফেন্ডারকে টপকে মরক্কোর পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ল এমবাপে। তারপর যে বলটা সাজিয়ে দিল, তাতে গোল করে গেল কোলো মুয়ানি। যে কিনা মাত্র ৪৪ সেকেন্ড আগে পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমেছে! ওই একটা পাসেই নিজের জাত চিনিয়ে দিল এমবাপে। অথচ এর আগে ও পরে গোটা ম্যাচে সে ভাবে চোখেই পড়ল না এমবাপে! বল ধরলেই ডাবল ম্যান মার্কিংয়ের ফাঁদে পড়ছিল। ফলে দৌড়নোর জায়গা পাচ্ছিল না।
আরও পড়ুন-মেসি-ম্যাজিকে আচ্ছন্ন কাতার
হেরে গেলেও মরক্কো (France vs Morocco) ফুটবলারদের লড়াই মন জয় করে নিল। কী অসাধারণ ফুটবল খেলল! এতটাই দাপটের সঙ্গে যে ফ্রান্সের মতো তারকাখচিত দলকেও সাধারণ মনে হল। কিন্তু এই ম্যাচে ভাগ্য সঙ্গে ছিল না মরক্কানদের। নইলে ম্যাচটা তারা জিততেও পারত। মরক্কোর বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলা যেন আরব্য রজনীর রূপকথা মতোই ঘটনা। ইতিহাস বলছে, টানা ৪৪ বছর ফ্রান্সের কাছে পরাধীন থাকার পর স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মরক্কানরা। তাই বুধবার রাতের ম্যাচটা ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের ফুটবলারদের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের থেকে কোনও অংশে কম ছিল না। কিন্তু গোটা ম্যাচে লড়াই করেও হেরে মাঠ ছাড়তে হল।
এগিয়ে যেতে ঠিক পাঁচ মিনিট সময় নিয়েছিল ফ্রান্স। গ্রিজম্যানের মাটি ঘেঁষা পাস থেকে এমবাপের শট মরক্কোর এক ফুটবলারের গায়ে লেগে ফিরতেই শরীর শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে বাঁ পায়ের ভলি নেয় ওভারল্যাপে উঠে আসা লেফটব্যাক থিও হার্নান্দেজ। বল জালে। এক কথায় অনবদ্য গোল। বিরতির আগেই আরও দুটো গোল করার দারুণ সুযোগ এসেছিল ফ্রান্সের সামনে। ১৭ মিনিটে মরক্কোর রক্ষণের ভুলে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ে গোলার মতো শট নিয়েছিল জিরু। কিন্তু বল পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। ৩৫ মিনিটে এমবাপের শট গোললাইন সেভ হলে, ফিরতি বল ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়েও বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন জিরু।
তবে পিছিয়ে পড়েও লড়াই ছাড়েনি মরক্কো। বরং পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে বারবার ফরাসি রক্ষণকে বিব্রত করে গিয়েছে। বিশেষ করে, মরক্কোর ফুটবলারদের তীব্র গতি সমস্যায় ফেলছিল ফ্রান্সকে। ১০ মিনিটের মাথায় মরক্কোর এদ্দিন ওউনাহির চকিত শট ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান হুগো লরিস। ৪৪ মিনিটে হাকিম জিয়েচের কর্নার ফ্রান্সের রক্ষণ বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে অসাধারণ ব্যাকভলি মেরেছিল জাওয়াদ এল ইয়ামিক। তবে এবারও ফ্রান্সের ত্রাতার ভূমিকা নেয় লরিস। বিরতির পরেও সারাক্ষণ ফরাসিদের চাপে রেখেছিল মরক্কো। সুযোগও তৈরি হল বেশ কিছু। তবে ৭৯ মিনিটে এমবাপের ওই পাশেই সব শেষ!এমনকী, দু’গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েনি মরক্কান ফুটবলাররা। অন্তত দুটো গোললাইন সেভ হল শেষ দশ মিনিটে। ।
রবিবাসরীয় ফাইনালে এবার মেসি বনাম এমবাপে। একজন প্রথমবার বিশ্বকাপ ট্রফিটা মুঠোয় নিতে মরিয়া। অন্যজন আবার টানা দ্বিতীয়বার দেশকে বিশ্বসেরা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই লড়াইয়ে কে বাজিমাত করে, সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।