প্রতিবেদন : হলদিয়ার (Haldia- Electricity) বিষ্ণুরামচক ও সৌতনচক গ্রামে জ্বলে উঠল আলো। গ্রামের বাসিন্দা বর্ষীয়ান এক মহিলা ঘরের সুইচ টিপতেই আলোয় ভেসে গেল তাঁর ছোট্ট ঘর। মহিলার চোখে তখন জল, মুখে হাসি। আর বাইরে তখন সেলিব্রেশন, উৎসবের মুডে গোটা গ্রাম। শীতের রাতে দুই গ্রামের বাসিন্দারা নেমে এসেছেন রাস্তায়, চলছে উৎসব। শুরু হয়ে গিয়েছে লাড্ডু বিলি, বাজি ফাটছে, আকাশজুড়ে আতশবাজি, কেউ কাঁদছে, কেউ হাসছে, কেউ আনন্দে লাফাচ্ছে, শিশু থেকে মহিলা—শামিল সবাই। নজিরবিহীন উৎসবের মোড়কে হলদিয়া বন্দরনগরীর দুটি অখ্যাত গ্রাম বিষ্ণুরামচক ও সৌতনচক।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও বিদ্যুৎহীন দেশের দুটি গ্রাম (Haldia- Electricity)। এ লজ্জা অবশেষে দূর হল। একদিকে বছরের প্রথম দিন, পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাদিবস। এমন একটা দিনেই স্বপ্ন সত্যি হল হলদিয়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের। বিদ্যুৎ এল দুটি গ্রামে। আর এই প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করতে লাগল মাত্র ২৮ দিন। আর এটাই হল তৃণমূল কংগ্রেস। এটাই হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এভাবেই গোটা রাজ্যে উন্নয়নযজ্ঞ চলছে। গ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে রবিবার সন্ধ্যায় এ কথাই বলছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে ধন্যবাদ। তিনি এভাবে এগিয়ে না এলে এ কাজ সম্ভব হত না। আবেগে ভেসে যাচ্ছিল গোটা সভা। কুণাল বলেন, অনেকেই বলেছিলেন, ‘‘কিছু হবে না’’। জানি, অনেক দুঃখ থেকেই বলেছিলেন। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেস কেন আলাদা। বাম জমানা পারেনি, দলবদলু বিজেপিরাও পারেনি। তৃণমূল কংগ্রেস করে দেখাল। ২০১২ সালে শুভেন্দুরা কাগজ দেখিয়ে বলে গিয়েছিল, পারমিশন হয়ে গিয়েছে, এবার বিদ্যুৎ আসবে, আসেনি। এবারও বাধা দিয়েছিল অনেকে। পিছন থেকে চেষ্টা করেছিল যাতে গ্রামে বিদ্যুৎ না আসে। আরে বিদ্যুৎ এলে তো ওরা ধরা পড়ে যাবে। সেই ভয়ে সেন্ট্রাল ফোর্স পাঠিয়েছিল। কিন্তু এককাট্টা ছিলেন আপনারা, গ্রামের মানুষ। আজ তার ফল পেলেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী যে তৎপরতার সঙ্গে এই কাজ করেছেন তার জন্য কোনও প্রশংসাই বেশি নয়। কুণাল বলেন, আমরা জানতাম এটা হবেই। কারণ, আমরা পুরো প্রক্রিয়াটাই আইন মেনে করেছি। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রুলিং আছে, জমি নিয়ে মামলা থাকলেও সেই জমির বাসিন্দাদের জল ও বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত করা যায় না। আইনি দিক থেকে খতিয়ে দেখেই এনিয়ে এগিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। এরপরও যদি কোনও আইনি জট হয়, তবে তা নিয়ে আপনাদের চিন্তা করতে হবে না, বিদ্যুৎ দফতরই আপনাদের হয়ে মামলা লড়বে। কুণালের আশ্বাসে উল্লাসে ফেটে পড়ে আমজনতা।
আরও পড়ুন-‘বহিরাগত আসে, বহিরাগত যায়; বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ বিজেপিকে কটাক্ষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এদিন গ্রামে পৌঁছতেই শাঁখ বাজিয়ে, পুষ্পবৃষ্টি করে তাঁকে বরণ করে নেন গ্রামবাসীরা। হতাশার অন্ধকার পেরিয়ে থেকে আজ তাঁদের মুক্তির দিন। বিদ্যুৎ আসার উপলক্ষে ট্রান্সফরমারের সামনে হল বিশ্বকর্মা পুজো। তারপর কিছুক্ষণের বিরতি। সন্ধে নামতেই আলো জ্বলে উঠল গ্রামের ঘরে। এদিন কয়েকটি বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে প্রতি বাড়িতেই জ্বলে উঠবে আলো। সভা শেষ করে রাতে কুণাল যখন গ্রাম ছাড়ছেন তখনও রাস্তায় গোটা গ্রাম, চলছে উৎসব। স্বপ্নপূরণের উৎসব।