অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিতর্কে প্রবল চাপে পড়ল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সরকারের রক্তচাপ বাড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বাধীনতা লঙ্ঘন বা বেআইনি নজরদারি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গঠিত হবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। বৃহস্পতিবার অন্য একটি মামলার শুনানির সময় ভারতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না জানান, সুপ্রিম কোর্ট আগামী সপ্তাহের মধ্যে পেগাসাস সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে। এতদিন পর্যন্ত নানা অজুহাতে পেগাসাস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিতে গড়িমসি করেছে কেন্দ্র। প্রধান বিচারপতির এই ঘোষণায় চাপে বিজেপি।
এদিন পেগাসাস ইস্যুতে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে নাগরিকদের ফোনে আড়িপাতা হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণেই আদালতের নজরদারিতে পৃথক একটি কমিটি গড়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। আমরা কমিটিতে থাকার জন্য কিছু বিশেষজ্ঞর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যক্তিগত কারণের কথা বলে কমিটিতে থাকতে চাননি। সেজন্যই কমিটি সংক্রান্ত নির্দেশ দিতে কিছু দেরি হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহেই এব্যাপারে স্পষ্ট একটি নির্দেশ জারি করতে পারব বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন: ১৪৪ ধারা চালু থাকলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সভা হল কীভাবে? কড়া আক্রমণে তৃণমূল
উল্লেখ্য, ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও-র তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ভারতে কিছু নাগরিকের উপরে গোপনে নজরদারি করার অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে ঝড় তোলে। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনজীবী এম এল শর্মা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। এছাড়াও বিশিষ্ট সাংবাদিক এন রাম-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা করেন। আবেদনকারীদের সকলেরই মূল দাবি ছিল : পেগাসাস দিয়ে নজরদারি যদি আদৌ হয়ে থাকে, তবে তা কার নির্দেশে হয়েছে? ব্যক্তিস্বাধীনতা লঙ্ঘন করে কীভাবে নাগরিকদের ফোনে আড়ি পাততে পারে সরকার? কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবিও জানান আবেদনকারীরা। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত দাবি করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে বলে। সরকার তার হলফনামায় জানায়, দেশের নিরাপত্তার কারণে সরকার কী কী সফটওয়্যার ব্যবহার করে তা প্রকাশ করবে না। আবেদনে যে বিষয়গুলি জানতে চাওয়া হয়েছে তা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর। যার কারণে আদালতে দাখিল করা একটি সর্বজনীন হলফনামায় সবকিছু বলা যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্নার নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বিতর্কের বিষয় বানাতে চাই না। তবে সরকার যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে তা আমরা মানতে পারছি না। কেন্দ্রের টালবাহানায় প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করে ওইদিনই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, মোদি সরকারকে আর এই বিষয়ে সময় নষ্ট করার সুযোগ দেওয়া হবে না। আদালত একতরফা নির্দেশ দেবে। তারপরেই বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি নিজেই জানালেন, আগামী সপ্তাহে বিশেষজ্ঞ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, পেগাসাস বিতর্কে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে উত্তাল হয়েছিল সংসদের বাদল অধিবেশন। তৃণমূল কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে। ২১ জুলাই দলীয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেগাসাস ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালানোর ডাক দেন। যদিও সংসদের ভিতর ও বাইরে পেগাসাস নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার।