প্রতিবেদন : কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে নয়া মোড়। দিল্লির আপ সরকারের সঙ্গে মোদি সরকারের লাগাতার দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে কড়া মন্তব্য করল শীর্ষ আদালত (Supreme Court- Delhi Government)। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ কেন্দ্রকে বলে, দিল্লির ব্যাপারে কেন্দ্রই যদি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে দিল্লিতে নির্বাচিত সরকার থেকে লাভ কী? এই সরকারের কাজই বা কী হবে, যদি কেন্দ্রই সব ঠিক করে দেয়! দিল্লির বিভিন্ন পরিষেবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের নিষ্পত্তি করতেই মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে। এই মামলার শুনানিতেই প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় কেন্দ্রের প্রতিনিধি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন, দিল্লির প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ যদি সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকে তাহলে দিল্লিতে একটি নির্বাচিত সরকার থাকা উদ্দেশ্য কী?
বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রের পক্ষে মেহতা বলেন, দিল্লি (Supreme Court- Delhi Government) হল দেশের রাজধানী। রাজধানীর প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি থাকা জরুরি। দিল্লিকে সেভাবেই রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের ক্ষমতা যেমন সীমিত তেমনই তার দায়িত্ব অনেক কম। মেহতার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালতের বেঞ্চ জানতে চায়, কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লি প্রশাসনের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজে কেন হস্তক্ষেপ করছে? কেন অফিসারদের কেন্দ্রের নীতি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে? ওই অফিসাররা কার অধীনে কাজ করছে? বেঞ্চের ওই প্রশ্নের জবাবে সলিসিটর জেনারেল জানান, সর্বভারতীয় ক্যাডারের অফিসাররা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনেই কাজ করে থাকেন।
আরও পড়ুন-শেষ ১২ দিনে ৫.৪ সেন্টিমিটার বসে গিয়েছে জোশীমঠ : ইসরো
মেহতার বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই ব্যবস্থা কি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে না? অফিসারদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে থাকতেই পারে। কিন্তু কাজের বিষয়টি তাঁরা যে সরকারের অধীনে কর্মরত রয়েছেন তারাই ঠিক করবে এটাই নিয়ম। নির্বাচনে জিতে আসা দলই সরকার গঠন করবে। তারাই নীতি ঠিক করবে। সেই নীতির বাস্তবায়ন করাই অফিসারদের কাজ। রাজ্য সরকারের অধীনে থাকলে সেই সরকারের কথা শুনে অফিসার বা আমলারা কাজ করবেন এটাই কাম্য।
নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী নাকি উপরাজ্যপাল দিল্লি প্রশাসনে শেষ কথা কে বলবেন, তা নিয়ে আম আদমি পার্টির সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের দীর্ঘদিন ধরেই মতবিরোধ চলছে। উপরাজ্যপালকে সামনে রেখে মোদি সরকার দিল্লির প্রশাসনে অকারণ হস্তক্ষেপ করছে বলে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। আর তা নিয়েই মামলা গড়িয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। দিল্লিতে নির্বাচিত সরকার ও বিধানসভা থাকা সত্ত্বেও উপরাজ্যপাল কেন প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আপ। বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে আছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এম আর শাহ, কৃষ্ণ মুরারী, হিমা কোহলি এবং পি এস নরসিমহা। ১৭ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।