মহাশ্বেতা দেবী (Writer Mahasweta Devi) কমিউনিস্ট ছিলেন। বামপন্থী আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। এই মহাশ্বেতা দেবীই আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রীর পাশে ছিলেন সর্বতোভাবে, প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। সাধারণ দৃষ্টিতে একে স্ববিরোধী বলে মনে হতে পারে। শাসক ও বুদ্ধিজীবীর সম্পর্ক নিয়ে নতুন ডিসকোর্স রচিত হতে পারে যেখানে মহাশ্বেতা (যার অর্থ সরস্বতী) বুদ্ধিজীবী এবং মমতা শাসক। এমন সম্পর্ক ও শাসন-ব্যবস্থাকেই বদলে দেওয়া আমরা পুরাণেও দেখেছি। মহাভারতের শান্তিপর্বে আছে, দেবী সরস্বতী হলেন রাজনীতির স্রষ্টা আবার আদিপর্বে দেখা যাচ্ছে, পরাশর নামক বুদ্ধিজীবী এসে হস্তিনার রাজনীতির সব ওলটপালট করে দিচ্ছেন। সবটাই যে খুব ‘অভিজাত’ স্তরে হচ্ছে, এমন নয়। সেখানে নারী পুনর্ভূ হতে পারছেন, অব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণের কাজ করতে পারছেন। শাসক মনুর বিধান সরিয়ে পরাশরের বিধান মানছেন।
মহাশ্বেতা দেবীর কথা উঠলেই মনে পড়ে, শান্তিনিকেতনে নগরায়ণের বিরুদ্ধে, দরিদ্রদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে তিনি একটি ফলককে পা দিয়ে আঘাত করে কিছু কথা বলছিলেন। তাঁর ওই শারীরিক কর্মটি দেখেই মনে পড়তে পারে পাশ্চাত্য আধুনিক দর্শনের জনক রেনে দেকার্তের সেই উক্তি— আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি। পাথরের ফলকে লাথি মারাই যেন সেই চিন্তন। মহাশ্বেতার এই পাথুরে প্রতিবাদের মধ্যে দিয়েই যেন আধুনিকতা আধুনিকোত্তরে এসে পৌঁছে যায়।
১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারির এই শুভ দিনে মহাশ্বেতা দেবী (Writer Mahasweta Devi) নামক এক মহান ব্যক্তির আবির্ভাবে শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্ব ধন্য হয়েছিল। মহাশ্বেতা দেবীর সৃজন-সাহিত্য এক সুমহান উচ্চতায় অবস্থিত। বাংলা ছাড়াও তিনি নিঃসন্দেহে অনূদিত সাহিত্যের জগতে একজন প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। আমাদের গৌরবময় অতীতে এমন বহু লেখক ছিলেন যাঁরা তাঁদের লেখার মাধ্যমে তাঁদের সামাজিক সক্রিয়তা এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরেছিলেন, তাঁদের সাহিত্যকে ও দর্শনকে মেলে ধরেছিলেন, এই ধারারই অনন্য একজন হলেন মহাশ্বেতা দেবী। তিনি কাজ করেছেন, প্রদর্শন করেছেন। সব চেয়ে বড় কথা হল, মহাশ্বেতা দেবী বাতানুকূল ঘরে বসে বিলাসী কলমজীবী নন। তাঁর মধ্যে এমন বিরল কিছু প্রতিভা ছিল যা তাঁকে তাঁর সমসাময়িকদের থেকে একেবারে আলাদা করে তুলেছিল। এখন প্রশ্ন, কী সেই ভেদক ধর্ম? সেটা হল তাঁর সাহস এবং তাঁর সততা, অকৃত্রিমতা। সমাজের প্রান্তিক অংশের অবস্থা নিয়ে তিনি সব সময় চিন্তিত ছিলেন। নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা নিয়ে তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস, নিবন্ধ পড়লে পাঠক কেবল যে সহানুভূতিশীল হন বা দয়াপ্রবণ হয়ে ওঠেন এমন নয়, বরং তাঁর লেখাগুলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সত্যকে সমুন্নত রাখার জন্য পাঠকের হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে আগুন জ্বালিয়ে রাখে। তাঁর লেখার চরিত্রগুলির নিজস্ব শক্তিশালী কণ্ঠস্বর আছে। সেই চরিত্রগুলোর চিন্তাভাবনা এবং মতামতগুলোকে মূর্ত আকার দিয়েছেন মহাশ্বেতা।
মহাশ্বেতা দেবীর (Writer Mahasweta Devi) লেখা ১০০টিরও বেশি উপন্যাস আছে। আছে ২০টিরও বেশি ছোট গল্পের সংকলন। এর বাইরে রয়েছে রাজনৈতিক গদ্য, নাটক এবং শিশুদের কথাসাহিত্য।
মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন ভারতের ভূমিহীন কৃষক ও দরিদ্র শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর। দেশের প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে তিনি তাঁদের কষ্টের জীবনকে চিত্রিত করেছেন অপূর্ব দক্ষতায়। মহাশ্বেতা দেবী তাঁর নানা কাজের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষদের সামাজিক-রাজনৈতিক মুখ হয়ে উঠেছিলেন। আজ বহু মুখোশের ভিড়ে তাই মহাশ্বেতা দেবীকে চিনে নিতে অসুবিধে হয় না।
তাঁর বহুল প্রশংসিত সাহিত্যকর্মের মধ্যে আছে ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘ঝাঁসির রানি’, ‘অগ্নিগর্ভ’, ‘রুদালি’, ‘সিধু কানহুর ডাকে’ ইত্যাদি। ভারতের নিপীড়িত মানুষের জীবন সম্পর্কে অমূল্য অন্তর্দৃষ্টি ছিল তাঁর।
মহাশ্বেতার বেশ কিছু লেখা চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের চলচ্চিত্র গোবিন্দ নিহালনির ‘হাজার চৌরাসি কি মা’ মহাশ্বেতার উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এই সেই হাজার চুরাশি নম্বরের জননী যিনি নকশাল আন্দোলনে তাঁর পুত্রের জড়িত হওয়ার কারণগুলি বোঝার চেষ্টা করেছেন। ১৯৯৩ সালে কল্পনা লাজমি তৈরি করেন ‘রুদালি’। এই সিনেমাটি অনেক পুরস্কার পায়। ‘রুদালি’ও মহাশ্বেতার উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এই উপন্যাস ও সিনেমাটি রাজস্থানের পেশাদার শোকার্তদের জীবনকে তুলে ধরে। ২০১৬ সালে মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুর পর অভিনেতা ইরফান খান শোক প্রকাশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘‘তিনি একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখক ছিলেন, তিনি আশ্চর্যজনক সব সাহিত্য রচনা করেছিলেন। আমি তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করি। আমি তাঁর জীবনের উপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই।” অভিনেতার ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেছে।
মহাশ্বেতা দেবী (Writer Mahasweta Devi) বেঁচেছিলেন নব্বই বছর। তাঁর মহৎ জীবনে, মহাশ্বেতা দেবীর মুকুটে যুক্ত হয়েছিল প্রচুর রত্ন। তিনি পেয়েছিলেন সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯), পদ্মশ্রী (১৯৮৬), জ্ঞানপীঠ (১৯৯৭), ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৯৭), এবং ১৯৯৯ সালে দেশিকোত্তম পুরস্কার।
মহাশ্বেতা দেবী একটি অত্যন্ত সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ পরিবারে জন্মেছিলেন। তাঁর পরিবারে ছিল মুক্ত-চিন্তা এবং সৃজনশীলতা। মহাশ্বেতা দেবী এবং অন্যান্য সদস্যদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়েছিল সেই চেতনা।
মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ঢাকায় (বর্তমান বাংলাদেশে), মণীশ ঘটক এবং ধরিত্রী দেবীর সন্তান তিনি। তাঁর পিতা কল্লোল আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট কবি ও ঔপন্যাসিক ছিলেন। তাঁর মাও একজন সুচিন্তিত লেখক এবং সমাজকর্মী ছিলেন। মহাশ্বেতা দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি স্নাতক স্তর সম্পন্ন করেন ইংরেজি সাম্মানিক নিয়ে। এর পর ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর-পর্ব শেষ করেন। তিনি ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করলেও বাংলা ভাষার প্রতি এতটাই গভীরভাবে সংযুক্ত ছিলেন এবং মাতৃভাষা নিয়ে এত আবেগপ্রবণ ছিলেন যে তিনি প্রাথমিকভাবে বাংলায় শতাধিক উপন্যাস এবং কুড়িটি ছোট গল্পের সংকলন লিখেছেন যা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ইচ্ছে করলে তিনি প্রাথমিকভাবে ইংরেজিতে লিখতে পারতেন।
পরিণত জীবনের শুরুর দিকে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগ দেন। তবে সেই অর্থে তিনি কখনওই কোনও রাজনৈতিক দল বা তাদের মতাদর্শকে মেনে চলেননি। সব সময় তিনি ভাবতেন কোনটা সঠিক এবং ন্যায়সঙ্গত কী হবে; এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। তিনি জনগণের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। তিনি এই কথার উপর খুব জোর দিয়েছিলেন যে তিনি চরম সহিংসতা পছন্দ করেন না। তিনি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন যে হিংসা আদিবাসীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তাঁরা চরমপন্থীদের এবং রাষ্ট্রের, এই উভয়ের দ্বারা অত্যাচারিত ও অবহেলিত হয়েছে যুগে যুগে।
আরও পড়ুন-অন্য এক ভারতবর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন মহাশ্বেতা
মহাশ্বেতা দেবী (Writer Mahasweta Devi) ইচ্ছে করলে মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন মানুষ হিসাবে, নারী হিসাবে সুন্দর একটি আরামদায়ক এবং সুবিধাজনক জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে বসবাস করতে এবং তাদের কণ্ঠস্বর হতে ভয় পাননি। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে আমরা মানুষের উন্নতির জন্য আমাদের বিশেষাধিকার ব্যবহার করতে পারি। একটি সাক্ষাত্কারে, যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তাঁর অনুপ্রেরণার উত্স কী, তিনি বলেছিলেন— “আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে সত্যিকারের ইতিহাস সাধারণ মানুষ তৈরি করে। আমার লেখার অনুপ্রেরণা সেই সব মানুষ যারা শোষিত ও ব্যবহৃত কিন্তু তবুও পরাজয় স্বীকার করে না তারা। আমার লেখার উপাদানের অফুরন্ত উত্স এই আশ্চর্যজনক সব মহৎ ও যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষ। আমি লেখার রসদ অন্য কোথাও কেন খুঁজব?” শুধু লেখার মাধ্যমে নয়, তিনি প্রকাশ্যে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) সরকারের শিল্পনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।
মহাশ্বেতা দেবীর সহানুভূতিশীল প্রকৃতি ছিল। স্নেহ ছিল তাঁর সহজাত গুণ। তিনি সুবিধাবঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার জনগণের সঙ্গে আজীবন সংযোগ স্থাপন করে এসেছেন। সেই সহজাত ক্ষমতা তাঁর ছিল। তাঁর বেশির ভাগ কাজ আদিবাসী, দলিত এবং সমাজের অন্যান্য নিপীড়িত অংশকে নিয়ে। মহিলাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ ছিল তাঁর কারণ তিনি জানতেন যে আর্থ-সামাজিক স্তর যাই হোক না কেন, মহিলারা সব সময়ই পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি ভোগেন। মহাশ্বেতা দেবী ‘বর্তিকা’ নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন যা দরিদ্র কৃষক, আদিবাসী এবং শ্রমিকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল। পত্রিকাটি তাঁর পিতা চালু করেছিলেন। পরে তিনি ‘ভাষাবন্ধন’ নামক একটি সাহিত্য-পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন বেশ কিছুদিন।
একজন আর্থ-সামাজিক ভাষ্যকার হিসেবে নিপীড়িত শ্রেণির সকল সমস্যা ও ক্ষোভকে তুলে আনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি কোনও অবহেলা করেননি। তাঁর সমস্ত প্রশংসিত কাজগুলি আসলে একটি আয়না বা দর্পণ যা আমাদের জীবন সম্পর্কে একটি বিশুদ্ধ অন্তর্দৃষ্টি পেতে সাহায্য করে।
এই দর্পণের অন্য নাম দর্শন। যাদের সম্পর্কে আমরা চিন্তা করি না, তাঁর লেখা পড়লে যেন সেই দিকে ভাবনা যেন অগ্রসর হয়। এটাই তো সাহিত্যিক ও চিন্তকের কাজ। তিনি সম্যক ভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে তথাকথিত কথাসাহিত্য এই সব বিষয়গুলি সম্পূর্ণ সত্যতার সঙ্গে উপস্থাপন করতে পারে না বা করে না। কিন্তু তিনি পেরেছিলেন। তাঁর কলম অপ্রতিরোধ্য ছিল! পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার একটি তফসিলি জনজাতি শবরদের সঙ্গে তাঁর আজীবন কাজের জন্য তিনি এখানে শবর-মাতা ও বিদেশে ‘মাদার অফ শবরস’ নামক উপাধি পেয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের ভাগচাষি, চুক্তিচাষি, কন্ট্রাক্ট লেবার এবং খনি শ্রমিকরা ছিল সেই সম্প্রদায় যাদের প্রতি ছিল তাঁর সারাজীবন মনোযোগ। লেখালেখির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রতিবাদী লেখা। তাঁর বেশ কিছু কাজ অনেকের দ্বারা আলোচিত ও সমালোচিত হলেও বারবার উল্লেখ করা প্রয়োজন। কেননা সেগুলো শুধু লেখা নয়, সেগুলো সমাজ পরিবর্তনের ম্যানিফেস্টো। এই ধরনের লেখার মধ্যে রয়েছে হাজার চুরাশির মা, বসাই টুডু, অরণ্যের অধিকার, রুদালি, দ্রৌপদী, ঝাঁসির রানী, চোট্টি মুণ্ডা এবং তার তীর, স্তনের গল্প, তিতু মীর, তিক্ত মাটি, বুড়ো মহিলা, কাল্পনিক মানচিত্র। কোনওটাই উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে আর রাখা ঠিক নয়। কেননা এগুলো এখন বহু ভাষার সম্পদ, বাংলার তো বটেই।
তাঁর এই সব কাজগুলিতে বিশেষ করে ছোটগল্প এবং সমালোচনামূলক প্রবন্ধসমূহে বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানসিকতা উঠে এসেছে। কেবল উপরিভাগ নয়, তাঁর লেখা যেন তাঁদের জীবনের গভীরে তলিয়ে যায়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মৌখিক এবং লোক-ঐতিহ্যগুলি অন্বেষণ করার কাজে তিনি ছিলেন নিরলস।
মহাশ্বেতা দেবীর লেখা প্রবন্ধগুলি কেবল নিপীড়িতদের শোষণের কথাই অন্বেষণ করে না, তিনি আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিকও উপস্থাপন করে। যা হল ইকো সিস্টেমের অবক্ষয়। সরকারের অরণ্য-নীতির চরম সমালোচনা করেছেন মহাশ্বেতা দেবী। তিনি এই নীতির বিরুদ্ধে অনেক যুক্তি দিয়েছেন কেননা এই সব নীতি আদিবাসীদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করে, তাদের আদিম জীবনকে প্রভাবিত করে। আধুনিক শহুরে জীবনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা মেটাতে অরণ্য ধ্বংসের দিকে আমরা এগিয়ে যাই। তিনি বারংবার অরণ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে তিনি চিত্রিত করেছেন নানা লেখায়।
ইদানীং কালে জলবায়ু-পরিবর্তন নিয়ে সাহিত্যের নতুন একটি ধারা তৈরি হয়েছে। অনেকে লিখছেন, কেউ কেউ ভাল লিখছেন। বেশির ভাগ লেখা ইংরেজি ভাষায়, দূরদর্শী মহাশ্বেতা দেবী এই নিয়ে লিখে গিয়েছেন বহু পূর্বেই।