মণীশ কীর্তনীয়া: গেদে লোকালে (Gede Local- Guwahati) গৌহাটি (গুয়াহাটি)। মাঝরাতে বাড়ি থেকে বেরোনোর পর থেকে গৌহাটি এয়ারপোর্টে (লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলোই বিমানবন্দর) পৌঁছনো পর্যন্ত গোটা যাত্রাপথে এত মজাদার মুহূর্তের সাক্ষী থাকলাম, তাতে নিজেকেই প্রশ্ন করে বসলাম, গেদে লোকালে গৌহাটি যাচ্ছি না তো! শীতের কুয়াশায় ভরা শেষরাতে কলকাতা থেকে আর্লি মর্নিং ফ্লাইট ধরতে রাতজাগা আধবোজা চোখে নিজের শহরই অচেনা লাগতে শুরু করে। খানিক আচ্ছন্ন ভাবের ঘোরে আচমকা ধাক্কা লাগে যখন চালক বলেন, দাদা আসুন। মানে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গিয়েছি। টেকনিক্যাল ফর্মালিটির ফাঁকে জানা গেল ফ্লাইট ডিলে। কানে এসেছে কারও বিমান একঘণ্টা কারও দুঘণ্টা, এমনকী চার-পাঁচ ঘণ্টাও ডিলে। সেটা নাকি আরও বাড়তে পারে। কাউন্টার থেকে বলেই দিয়েছে, ফগের ব্যাপার বুঝতেই তো পারছেন! উত্তর-পূর্বমুখী বিমান ধরতে যাঁরা এসেছেন তাঁদের অবস্থা সবথেকে করুণ। বাগডোগরামুখী বিমানের অবস্থাও তাই। জমায়েতে বাঙালির সংখ্যা যথেষ্টই। শিয়ালদহ বা হাওড়া লাইনে নিত্য-যাতায়াতকারী ভিড়ের সঙ্গে বিশেষ তফাত নেই। ভোররাতের ফ্লাইটের টিকিটের দাম কম বলে অনেকেই চাপেন। কিন্তু সারা বছরই উত্তর-পূর্বের বিমান দেরি করে। শীতের সময় তো কথাই নেই। অথচ যাত্রীসংখ্যা নেহাত কম নয়। উত্তর-পূর্বে নেপালের মতো প্রচুর ছোট বিমান চালানো হয়। মাঝে-মধ্যে ভেঙেও পড়ে। তিনদিন আগেই ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমান ভেঙে ৬৮ জন মারা গিয়েছে। যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানেন, এইসব বিমানে উঠলে মাঝে-মধ্যে ভ্রম হয় প্লেনে আছি না, কলকাতা-হওড়ার মিনিবাসে! দুটিরই বসার জায়গা প্রায় একই মাপের। হাত-পা ভাঁজ করে কোনওক্রমে বসতে হবে। ব্যাগ কাঁধে কনডাকটর-হেল্পার নেই আর বাদাম-পেন-ঘুগনিওয়ালার হাঁকডাক শুরু হয়নি, এই যা৷ এটিআর বিমান দেখলে লজ্ঝড়ে রঙচটা মিনিবাস ছাড়া কিছুই মনে হবে না। টেক অফ-ল্যান্ডিং-এর সময় মনে হয়, মাথার ওপর বাস বা ট্রেনের মতো রড-হ্যান্ডেল থাকলে ভাল হত। উত্তর-পূর্বের বিমানে যাতায়াতকারীরা জানেন, হাতে প্রাণ আর অনেকটা সময় নিয়ে বেরোতে হবে। একটা সময় ‘লুক-ইস্ট’ নিয়ে খুব চর্চা হত। এখন উত্তর-পূর্বের ডাবল ইঞ্জিন সরকারের ঢালাও মহত্ত্ব প্রচার হয়। কিন্তু লক্ষ লক্ষ বিমানযাত্রীকে নিয়ে কবে ভাববে কেন্দ্রীয় সরকার? নেপালের মতো বড় ঘটনা বা সময় নিয়ে যাত্রী-বিক্ষোভ হওয়ার পর? তাই গেদে লোকালে (Gede Local- Guwahati) গৌহাটি সফর একটি উদাহরণ মাত্র।
আরও পড়ুন-দেশে নজির, চাষিদের জন্য শস্যবিমায় ২,২৮৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ রাজ্যের