প্রতিবেদন : বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এ এক চূড়ান্ত নজিরবিহীন নিদর্শন। নোবেলজয়ী বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে উপর্যুপরি হেনস্তা ও ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করেই চলেছে বিশ্বভারতী। এবার দ্বিমুখী আক্রমণ। একদিকে আবারও প্রায় হুমকির সুরে চিঠি পাঠিয়ে জমি ফেরত দিতে বলা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বলছেন অমর্ত্য সেন নোবেল পাননি! নজিরবিহীন এই কুৎসিত আক্রমণে ভূলুণ্ঠিত বাংলার সম্মান। অমর্ত্য সেনকে আক্রমণে উপাচার্যের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন বিজেপির ছোট-বড়-মাঝারি অর্বাচীন নেতারা, যাঁদের যোগ্যতাই নেই অমর্ত্য সেনের মতো শ্রদ্ধেয় নোবেলজয়ীকে নিয়ে কথা বলার।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এমনকী তাঁকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও বলছে শুভেন্দুর মতো চার আনা অর্ধশিক্ষিত দলবদলু-চোর-তোলাবাজ বিজেপি নেতা। এই ঘটনায় ধিক্কার জানাচ্ছেন বিভিন্ন জগতের মানুষ। সকলের একটাই প্রশ্ন, অমর্ত্য সেন বিজেপি ও মোদির কাজকর্মের সমালোচনা করেন বলে বিশ্ববরেণ্য ও বাংলার গর্ব, দেশের গর্ব এই অর্থনীতিবিদকে এভাবে কুৎসিত আক্রমণ ও নোংরা রাজনীতির শিকার হতে হচ্ছে! পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে এতে যে কোনওদিন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে। মানুষ এতটাই ক্ষিপ্ত তার উপরে।
শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’ নামক যে বাড়িতে প্রায় ৯০ বছরের বাস সেন পরিবারের, যেখানে এখন থাকেন অধ্যাপক সেন সেখানে, ১৩ ডেসিমেল জমি তাঁরা অধিকার করে রয়েছেন জানিয়ে তা ফেরতের জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে প্রায় হুমকিই দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে জমি ফেরত না দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-বইমেলা উপলক্ষ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট রুটে চলবে বাড়তি মেট্রো
জানা গিয়েছে, নিজের আইনজীবী মারফত আগেও জবাব দিয়েছেন অমর্ত্য সেন। এবারও দেবেন। এ-বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে নিয়ে যারা এই ধরনের কুৎসিত কথা বলছে তারা ‘পণ্ডিত মূর্খ’। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হত না। ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনৈতিক বিজ্ঞানকে পুরস্কারের তালিকায় যোগ করা হয়। ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন এ-বিষয়েই নোবেল পেয়েছেন। যারা এই প্রবাদপ্রতিম মানুষটিকে অসম্মান করছেন তারা এরকম এক-আধখানা পুরস্কার পেয়ে দেখান না! এদের স্পর্ধা কত দূর এরা অমর্ত্য সেনকে বলছেন, দেশ ছেড়ে চলে যান! এটা বাংলার লজ্জা। কোনও অশিক্ষিত-কুলাঙ্গার ছাড়া অমর্ত্য সেন সম্পর্কে এমন কথা কেউ বলতে পারে না৷ এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখলে লোকে হাসবে।
আরও পড়ুন-উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল-হৃষীকেশেও ফাটল, আতঙ্কের প্রহর গুনছেন স্থানীয়রা
ড. পবিত্র সরকার বলেন, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের মাতামহ-মা-বাবা-সহ ওঁদের পরিবারের কয়েক পুরুষের বাস। এখন হঠাৎ জমি নিয়ে খুঁচিয়ে তোলার কোনও অর্থ খুঁজে পাই না। এভাবে বরণীয় মানুষটিকে হেনস্থা করা হচ্ছে। এতে বিশ্বভারতীরও সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এর পিছনে একটা রাজনীতি অবশ্যই রয়েছে।
আরও পড়ুন-পদ্মশ্রী পেলেন রবিনা ট্যান্ডন, সম্মান উৎসর্গ করলেন তাঁর বাবাকে
অধ্যাপক সবুজকলি সেন বলেন, অমর্ত্যে সেনের মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনকে কাশী থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে আসেন। বিশ্বভারতীতে তিনি অধ্যাবপক, গবেষক ও কিছু দিনের জন্যর উপাচার্যও ছিলেন। শান্তিনিকেতনে অদ্যাধবধি যত অনুষ্ঠান হয়, তার মন্ত্র তৈরি করা থেকে হিন্দু-মুসলিমের যুক্ত সাধনা রবীন্দ্রনাথকে অনেক সাহায্য করেছিল। এমনই বড়মাপের মানুষ তিনি। অমর্ত্যন সেনের পিতা আশুতোষ সেন কিছুটা জমি লিজ ও কিছুটা কিনে নেন। অমর্ত্যয সেনের মাতামহ বিশ্বভারতীর জন্য নিজের জীবনটাই দিয়েছেন। এহেন পরিবারের উত্তরাধিকারী ও নোবেলজয়ী মানুষটিকে এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে! এ সমগ্র বাঙালি জাতি ও বাংলার লজ্জা।