প্রতিবেদন : বিজেপির নোংরা রাজনীতির জন্য এবার একটি বাংলা ছবিকে অহেতুক হয়রানি ও ক্ষতির মুখে পড়তে হল। ছবির নাম এলএসডি (লাল স্যুটকেসটা দেখেছেন) (Laal Suitcase Ta Dekhechen?)। উদ্দেশ্য ছিল ছবিটি যাতে রিলিজ না হয়। তাই সেন্সর বোর্ডে নিযুক্ত এক বিজেপি ক্যাডার নানা ভাবে ছবিটিকে আটকে রাখে। ছবির নাম (এলএসডি) পরিবর্তন থেকে শুরু করে ছবিতে ব্যবহৃত নাম কৃষ্ণ-রাধা-হ্যালুসিনেশন-ওভারডোজের মতো বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলিও বাদ অথবা মিউট করতে বলা হয়। অহেতুক ‘এ’ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে এই ছবিকে। আর এ-সবের মূলে যিনি সেই পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ছবির জগতের কেউ নন। ছবি সম্পর্কে তাঁর কোনও জ্ঞান তো দূর-অস্ত্ ন্যূনতম ধারণাও নেই। স্রেফ বিজেপির ক্যাডার হিসেবে সেন্সর বোর্ডে রাখা হয়েছে তাকে। কিন্তু এই ছবি আটকানো হয়েছিল কেন? কারণ, ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন ও যিনি ছবির প্রোডিউসার তাঁরা সকলেই ঘটনাচক্রে কোনও না কোনও ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেউ বিধায়ক কেউ-বা যুবনেত্রী। অভিনেতা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী ও অভিনেত্রী-যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ ছাড়াও ছবিটিতে রয়েছেন অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক, অভিনেত্রী-বিধায়ক জুন মালিয়া, অভিনেতা-পরিচালক অভিজিৎ গুহ-সহ আরও অনেকে। ছবির পরিচালক রাজা চন্দ। সব বাধা কাটিয়ে আজ শুক্রবার ১০ ফেব্রুয়ারি এলএসডি (Laal Suitcase Ta Dekhechen?) মুক্তি পাচ্ছে পেক্ষাগৃহে। তবে ছাড়পত্র-সংক্রান্ত টানাপোড়েনের কারণে সব হলে ছবিটি জায়গা পাচ্ছে না। অভিনয়ের পাশাপাশি এ-ছবির প্রোডিউসারও সোহম। শুক্রবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এলএসডি-কে কেন্দ্র করে বিজেপির নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন সোহম-সায়নী-অভিজিৎ গুহ-রাজা চন্দরা। এই সাংবাদিক বৈঠকে সেন্সর বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য-ইমপার প্রাক্তন সদস্য এবং সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুণাল ঘোষও। কুৎসিত রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলা ছবি ও তাকে কেন্দ্র করে একঝাঁক শিল্পী-প্রোডিউসার-ডিস্ট্রিবিউটরের উপর অহেতুক আঘাত আসায় কুণালও এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। ভবিষ্যতে যাতে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ওপর এই ধরনের রাজনীতির তীর না আসে তা সুনিশ্চিত করার কথা বলেন।
আরও পড়ুন-ভারতে চালু হল ট্যুইটার ব্লু সাবস্ক্রিপশন
অভিনেতা-প্রোডিউসার সোহম চক্রবর্তী বলেন, আমরা সুস্থ নাগরিক হিসেবে এমন কিছু করব না যাতে সমাজে ভুল বার্তা যায়। পার্থসারথি চৌধুরি তিনি সেন্সরে রাধা-কৃষ্ণ-এলএসডি এসব বলা যাবে না বলে জানানোয় আমাদের এগুলি বদলাতে হয়েছে। তাঁকে বারবার বলা হয়েছে এখানে ড্রাগকে প্রোমোট করা হচ্ছে না। উত্তরে তিনি বলেছেন আমার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কোনও ঠেকা নেই। তাহলে এমন একজনকে বসানো হয়েছে ঐ চেয়ারে যার বসার কোনও যোগ্যতা নেই। আমাদের সঙ্গে প্রদীপ ধর-সৌরভ চৌধুরির মতো দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া লোকও রয়েছে। কই আমাদের তো বলা হয়নি। মানা করা হয়নি এদের নিয়ে কাজ করা যাবে না। আজকে সেন্সরের ছাড়পত্রের হার্ডকপি পেয়েছি। যুবনেত্রী-অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ বলেন, এত বাধা সত্ত্বেও যেভাবে সকলে পাশে দাঁড়িয়েছেন বয়কট কালচার কোথা থেকে আসছে সবাই জানে। হ্যাল্যুসিলেশন শব্দ বলা যাবে না? একজনকে লিখতে গিয়ে তিনবার ভাবতে হচ্ছে। প্রোডিউসাররা কীভাবে ছবি বানাবেন? আমরা রাজনৈতিক দলে আছি বলে এটা হচ্ছে?
ছবির পরিচালক সায়ন্তন বলেন, সেন্সরের দিন আমি ছিলাম। ভিতরে অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি চলছিল। জিগেস করলাম কেন ‘এ’ দিলেন? বলল, ‘কেন ড্রাগকে প্রোমোট করলেন?’ ‘কেন ড্রাগ নেওয়া বাজে তা এখানে দেখানো আছে।’ বলা হল এলএসডি শব্দটা যাবে না। মিউট করতে হবে। আমার কাছে উত্তর ছিল না। পরিচালক-অভিনেতা অভিজিৎ গুহ বলেন, বাঙালির যে রসবোধ যা নিয়ে বাঙালি একসময় গর্বিত ছিল তা মাঠে মারা গেছে। এই নামটা একটা মজা। কিন্তু যা হল এটা লজ্জা। কুণাল ঘোষের বক্তব্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অকারণ হয়রানি হল। ডিজিটাল মাধ্যমে দেখাচ্ছে সার্টিফিকেট ইস্যু সেটা হাতে পেতে এত দেরি? আজ সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছে আপনারা আসছেন জানতে পেরে তড়িঘড়ি হার্ড কপি দেওয়া হয়েছে। সেন্সর বোর্ডের সবাই ছবি দেখে বললেন, সুন্দর আর বিজেপির যিনি বোর্ডে আছেন তিনি সবরকম ভাবে বাধা সৃষ্টি করলেন। কেন? সোহম-সায়নী-কাঞ্চন-জুনরা রয়েছে বলে? এর নিট ফল হল, প্রচার ও হল পেতে দেরি হল। আমরা দল থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে হস্তক্ষেপ করি না। কখনও বলা হয় না একে নেবেন না, ওর সঙ্গে ছবি করবেন না তার সঙ্গে মিশবেন না। কিন্তু বিজেপি অহেতুক টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিকে ডিসটার্ব করছে।