প্রতিবেদন : সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির অশুভ আঁতাত প্রকাশ্যে এনে শুধু হাঁটে হাঁড়ি ভাঙাই নয়, রবিবার সাগরদিঘির প্রচার মঞ্চে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। একই সঙ্গে কংগ্রেসকে তোপ দেগে বললেন, মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার সব থেকে বড় মিরজাফরের নাম হল অধীর চৌধুরি (Adhir Chowdhury)। গদ্দার কংগ্রেসকে (Congress) একটা ভোটও দেবেন না। কংগ্রেসের হয়ে আপনার ভোটে জিতে কাল বিজেপিতে যোগ দেবে এই মিরজাফরেরা। তাই কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। রবিবার সাগরদিঘির উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে গিয়ে বক্তৃতার শুরু থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ছিলেন প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক মেজাজে। কংগ্রেস-সিপিএম তো বটেই, মঞ্চে সিপিএম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধী দলনেতার ছবি প্রকাশ্যে এনে পরিষ্কার করে দিলেন কংগ্রেস আসলে বিজেপির বি-টিম। চ্যালেঞ্জ করে বললেন, রাম-বাম চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই। তাঁর সংযোজন, যা তথ্য দিলাম তা ভুল হলে আমার নামে আদালতে মানহানির মামলা করুক। আদালতেই বুঝে নেব কত ধানে কত চাল! এদের এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না তৃণমূল কংগ্রেস। প্রার্থী দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতাতে হবে। দলীয় সতীর্থদের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (Abhishek Banerjee)।
এই উপনির্বাচনের গুরুত্ব বেশি : সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির (CPM-Congress-BJP) অশুভ আঁতাত-ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এই উপনির্বাচনে তার জবাব দিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে হবে। তাই ২০২১-এর থেকেও এই উপনির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। পরিস্থিতির বিচারে তাই হেলিকপ্টারে যান্ত্রিক ত্রুটি সত্ত্বেও তা সারানোর পর চল্লিশ মিনিট দেরিতে হলেও জীবন হাতে নিয়ে এই সভায় এসেছি। এর আগে দেখেছি ২০২১ সালে একজন মহিলা উঠে-পড়ে লেগেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুর্বল করতে। বিজেপির হাত শক্ত করতে। এই উপনির্বাচনেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
এজেন্সি রাজনীতি : একমাস আগে বিরোধী দলনেতা সাগরদিঘিতে এসে চমকে বলেছেন এর-ওর বাড়িতে ইডি-সিবিআই-ইনকাম টাক্স টিম পাঠিয়ে দেব। জাকির হোসেন ও পতাকা বিড়ি মালিকের বাড়িতে এজেন্সি রেইড করেছে। কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের স্কুল আছে, বিড়ি-কারখান আছে। কই সেখানে তো একবারও এজেন্সি যায়নি!
মিরজাফর অধীর : মুর্শিদাবাদ জেলার সব থেকে বড় মিরজাফেরর নাম অধীর চৌধুরি। এই মিরজাফর বাংলায় এনআরসি-সিএএ নিয়ে কোনওদিন রাস্তায় নামেননি। উনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নিয়ে ঘুরে বেড়ান। যারা স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীন। অমিত শাহ যার মন্ত্রী। অধীর চৌধুরির দিদির পুলিশে ভরসা নেই। উনি দাদার পুলিশ নিয়ে ঘোরেন। তা হলেই বুঝে দেখুন! এরকম মিরজাফর বাংলায়— ভূ-ভারতে আর একটাও নেই।
আরও পড়ুন:মন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করে খুনের বিচার চাইলেন বাবা
কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপির ষড়যন্ত্র : বিরোধী দলনেতা এখানে বলে গিয়েছেন, আপনারা হিন্দু বুথগুলিতে ঢেলে বিজেপিকে ভোট দিন। আর সংখ্যালঘু বুথে ভোট পাব কিনা জানি না! কিন্তু তৃণমূল যাতে সংখ্যালঘু ভোটে জিততে না পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কী সেই ব্যবস্থা? তখনই মঞ্চের ব্যানারে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থীর ছবি দেখিয়ে এবং নিজের মোবাইলে অভিষেক-বিরোধী দলনেতার একটি অডিও ক্লিপ শোনান এবং তার পরেই বলেন, এই সেই ব্যবস্থা! এরা হল চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই। আর এদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিপিএম। বুঝতেই পারছেন কংগ্রেসকে ভোট দিলে কী হবে! কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। যদিও এরা জিতবে না। যদি জেতে তাহলে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপিতে যোগ দেবে। তাই মিরজাফরের দলকে একটা ভোটও নয়।
অধীর-সেলিম-সুজন বিজেপির এজেন্ট : খেয়াল করে দেখবেন, এরা তিনজন কখনও বিজেপির সুকান্ত মজুমদার বা শুভেন্দুকে আক্রমণ করে না। এদের নামে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও ইডি- সিবিআই এদের বিরুদ্ধে কিছু করে না। কারণ এরা আসলে বিজেপির এজেন্ট৷ আমার বিরুদ্ধে তো কুড়িটা নোটিশ পাঠিয়েছে। এদের তো একটাও পাঠায়নি। তবুও আমি শিরদাঁড়া সোজা রেখে মাথা উঁচু করেই লড়ব।
অধীর মানুষের পাশে নেই : ২০১৯ সালে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে কয়েকজন যুবক কাশ্মীরে আপেল বাগানে কাজ করতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারিয়ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার (Mamata Banerjee Government) তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। একবারের জন্যও অধীর চৌধুরি এই পরিবারগুলির কাছে গিয়েছে? যায়নি। এদের পাশে দাঁড়িয়েছে? দাঁড়ায়নি।
বিড়ি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি : মুর্শিদাবাদের বিড়ি শ্রমিকরা এখন ৯০০ বিড়ি বা তার কাছাকাছি বাঁধলে ১৬৫ থেকে ১৭৮ টাকা পান। নির্বাচন মেটার এক মাসের মধ্যে এই পারিশ্রমিক বেড়ে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা করা হবে। কথা দিলেন অভিষেক।
ত্রিপুরা-মেঘালয় এই দুটোর মধ্যে একটা রাজ্যে বিজেপিকে উৎখাত করেই ছাড়ব। সাফ কথা অভিষেকের। ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রব্যূহ ভেদ করব। ২০২৪-এর লড়াইয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করতে হবে। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত সুব্রত সাহার স্ত্রী নমিতা সাহা ও পুত্র সপ্তর্ষি সাহাও।